অভিনয় জীবনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৬২ সালে সংগীত নাটক একাডেমী পুরস্কার ,১৯৮৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাডেমি সম্মান,১৯৭১ সালে ভারত সরকারের 'পদ্মশ্রী ' উপাধি, ১৯৮৯ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকার কর্তৃক কালিদাস সম্মাননা সহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।
তিনি কেবল একজন অভিনয় শিল্পীই ছিলেন না,ছিলেন একজন নাট্য শিক্ষকও।তাঁর প্রতিষ্ঠিত নাট্যদলের নাম ছিল'বহুরুপি'।বাংলা ভাষার থিয়েটার, চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেত্রী এবং নাট্য পরিচালক শম্ভু মিত্রের স্ত্রী ছিলেন তৃপ্তি মিত্র। বিয়ের পূর্বে তাঁর নাম ছিল তৃপ্তি ভাদুড়ী।জন্ম ১৯২৫ সালের ২৫ অক্টোবর তৎকালীন বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার কলেজপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতার নাম ছিল আশুতোষ ভাদুড়ী,তিনি পেশায় ছিলেন একজন উকিল।
মাতার নাম ছিল শৈলবালা দেবী,তিনি ছিলেন স্বদেশী তে উৎসাহী।তাঁদের নয় মেয়ে, এক ছেলের একজন ছিলেন তৃপ্তি মিত্র।১৯৪৫ সালে শম্ভু মিত্রের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। ঠাকুরগাঁওয়ের নাট্যমঞ্চে বাল্যকাল থেকেই অভিনয় করতেন তিনি।তৃপ্তি মিত্রের মাসতুতো ভাই বিজন ভট্টাচার্যের জোরাজুরিতেই অভিনয় জগতে তার প্রবেশ।তিনি থিয়েটারের পাশাপাশি অসংখ্য নাটক,চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। জহির রায়হান পরিচালিত মানিক বন্দোপাধ্যায় রচিত'পদ্মা নদীর মাঝি' উপন্যাস অবলম্বনে বিখ্যাত চলচ্চিত্র "জাগো হুয়া সাভেরা" তে অভিনয় করেন তিনি।
ঋত্বিক ঘটকের আলোচিত চলচ্চিত্র "যুক্তি তক্কো আর গপ্পো",ময়লা কাগজ,শুভ বিবাহ,মানিক,সূর্যস্নান,রিক্সাওয়ালা সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও নাটকে অভিনয়ই তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে।ব্রিটিশ ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণনাট্য সংঘের 'নবান্ন' নাটকে তাঁর অভিনয় সে সময় মানুষের মনে দাগ কেটেছিল।তাঁর অভিনিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হল-অভিযান,বিনোদিনী, হাজার চুরাশির মা,রক্তকরবী, আগুন,জবানবন্দি, উলুখাগড়া, বাকী ইতিহাস, সুতরাং প্রভৃতি।
তিনি আকাশবাণী কলকাতায় রেডিও নাটক ও প্রশাসনের সাথেও যুক্ত ছিলেন তিনি।১৯৭৫-৮০ সাল পর্যন্ত তিনি আকাশবাণীর বিশেষ সম্মানীয় প্রযোজক ছিলেন।১৯৮১ তে বিশ্বভারতী নাট্য বিভাগের ভিজিটিং ফেলো মনোনীত হন।১৯৮৩ সালে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন নাট্য শিক্ষা কেন্দ্র 'আরদ্ধ '।সেখানে নবীন শিক্ষার্থীদের নাট্যাভিনয় শেখানো হত এবং নতুন শিল্পী গড়ে তোলা হত।১৯৮৯ সালের ২৪ মে তিনি ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।স্বাধীনতা উত্তর ভারতীয় থিয়েটারের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ছিলেন তৃপ্তি মিত্র।
তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে ভারতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তাঁর জন্মস্থান ঠাকুরগাঁওয়ে তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।এমন কি তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। অদূর ভবিষ্যতে কালের স্রোতে ধীরে ধীরে মুছে যাওয়া তৃপ্তি মিত্রের স্মৃতি রক্ষণাবেক্ষণের এ দায়ভার কে নিবে?কে নিবে নতুন প্রজন্মের কাছে তৃপ্তি মিত্রের স্বর্ণালি জীবনের ইতিহাস উন্মোচন করার দায়িত্ত্ব?নাকি কালের বিবর্তনেই হারিয়ে যাবে তৃপ্তি মিত্রের নাম ও স্মৃতি!
লেখক: পিএইচডি গবেষক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়