ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বৃহস্পতিবার ● ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ৭ কার্তিক ১৪৩২
ই-পেপার বৃহস্পতিবার ● ২৩ অক্টোবর ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




রাইফেল ক্লাব এখন মাদকসেবীদের আখড়া
নারায়ণগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা :
প্রকাশ: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:১৯ পিএম  (ভিজিটর : ২২৪)
নারায়ণগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়াস্থ রাইফেল ক্লাব এক সময় রাজনৈতিক তৎপরতা ও প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের হাতের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এই ক্লাবটি শুধু রাজনৈতিক আলোচনা ও নীতিনির্ধারণের কেন্দ্র ছিল না, বরং অনেক সময় এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমও পরিচালিত হতো।

 তবে বর্তমানে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম না হওয়ায় ভবনটি মাদকসেবী ও অসাধু ব্যক্তিদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

পুরনো বাসিন্দাদের স্মৃতিতে রাইফেল ক্লাবের নামের সঙ্গে আতঙ্কের সম্পর্ক সুগভীর। তাদের মতে, নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এখানেই বসে শহরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং নানা ধরনের অপকর্মের নির্দেশ দিতেন।

শামীম ওসমানের রাজনৈতিক প্রভাব শহরের সাধারণ মানুষ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উপর স্পষ্টভাবে দেখা যেত। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ক্লাবটি একসময় রাজনৈতিক সভা, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় সভা এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

তবে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে, সারা দেশে ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়কালে চাষাড়া এলাকায়ও অস্থিরতা দেখা দেয়, সেই সময়কালে বিক্ষোভকারীরা রাইফেল ক্লাবের ভবনে আগুন দেয় এবং ভাঙচুর চালায়। আগুনে ক্লাবের অভ্যন্তরীণ অংশের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে ভবনটির কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ার পর থেকেই এটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। মূল ফটক ভাঙা, জানালা ভাঙাচোরা এবং ভিতরে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই। এই অবস্থা সুযোগ করে দিচ্ছে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে ভবনে মাদক সেবন, ছিনতাই এবং অশ্লীল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। কিছু প্রতিবেশী জানিয়েছেন, তারা রাতে রাইফেল ক্লাবের আশেপাশে অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ ও অচেনা মানুষের চলাচল লক্ষ্য করেছেন।

প্রশাসনের উদাসীনতাও স্থানীয়দের অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে ভবনটি সম্পূর্ণ ধ্বংস বা অপরাধমূলক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।

এই রাইফেল ক্লাবের ইতিহাসও নীরব নয়। ১৯৯০ এবং ২০০০ দশকের শুরুতে এটি রাজনৈতিক সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্র ছিল। কিন্তু ২০১০ সালের পর রাজনৈতিক পরিবেশ বদলাতে থাকায় ক্লাবের গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে। অনেক সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং এলাকায় সংঘাতের কারণে ক্লাব ভবনের নিরাপত্তা কমে যায়। ২০২৪ সালের আগুন ও ভাঙচুর সেই পরিস্থিতিকে চরমে নিয়ে যায়।

স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। এলাকার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অরক্ষিত ভবন হওয়ায় এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন, বিশেষ করে রাতের সময়ে। তবে তারা আশ্বাস দিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিয়েছে, একটি পরিত্যক্ত ভবন শুধু স্থাপত্য নয়, বরং এটি সামাজিক ও নিরাপত্তার জন্যও একটি বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় ছাড়া এই ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।

বর্তমানে রাইফেল ক্লাব পরিত্যক্ত ভবন ও মাদকসেবী, অসাধু লোকদের আখড়া হিসেবে পরিচিত। তবে স্থানীয়দের দাবী, দ্রুত প্রশাসন ও সরকারের হস্তক্ষেপে এটি পুনরায় নিরাপদ ও সামাজিক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : bhorerdakonline@gmail.com, adbhorerdak@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : bhorerdakonline@gmail.com, adbhorerdak@gmail.com