ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বৃহস্পতিবার ● ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১৪ কার্তিক ১৪৩২
ই-পেপার বৃহস্পতিবার ● ৩০ অক্টোবর ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের প্রথম বিতর্ক থেকে ৫টি মূল শিক্ষা
কৌশলী ইমা, নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৪৩ এএম  (ভিজিটর : ১৭০)
ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জোহরান মামদানি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমো বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের প্রথম সাধারণ নির্বাচনী বিতর্কে একে অপরের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ চালান। কুওমো তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর আরামদায়ক লিড কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।

সেপ্টেম্বরে মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর এটাই ছিল প্রার্থীদের প্রথমবারের মতো বিতর্ক মঞ্চে ফেরা। যদিও রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়াও অংশ নেন, তবে নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিমেম্বার মামদানি ও সাবেক গভর্নর কুওমোর মধ্যকার মুখোমুখি লড়াইই ছিল অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ। এই বিতর্ক আয়োজন করে এনবিসি ৪,নিউ ইয়র্ক/ডাব্লিউএনবিসি, টেলেমুন্ডো ৪৭/ডাব্লিউএনজেইউ এবং পলিটিকো।

কুওমো মামদানির অভিজ্ঞতা এবং পুলিশ ও 'গ্লোবালাইজ দ্য ইনতিফাদা' সম্পর্কিত তাঁর অতীত মন্তব্যের সমালোচনা করেন। অন্যদিকে মামদানি অভিযোগ করেন, কুওমোর সততা নেই এবং গভর্নর হিসেবে তাঁর দায়িত্বকাল ব্যর্থতায় ভরা। তারা আগামী বুধবার আরেকটি চূড়ান্ত বিতর্কে ভোটারদের সামনে নিজেদের শেষ যুক্তি তুলে ধরবেন।

মামদানি ও কুওমোর তীব্র বাকযুদ্ধ

গত কয়েক মাস ধরে মামদানি ও কুওমোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, আর বৃহস্পতিবারের বিতর্কে তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের তিক্ততা নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।

কুওমো বলেন, এই কাজ অভিজ্ঞতাহীনদের জন্য নয়। যেসব মেয়র ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের কেউই ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী ছিলেন না। সেই ভুল আর করবেন না। ইঙ্গিত ছিল মামদানির দিকে, যিনি ২০২১ সাল থেকে নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে দায়িত্ব পালন করছেন।

কুওমো মামদানির নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা সম্পর্কে পুরনো মন্তব্য নিয়েও আক্রমণ করেন, এবং 'গ্লোবালাইজ দ্য ইনতিফাদা' বাক্যটি নিন্দা করতে অস্বীকার করায় তাঁকে সমালোচনা করেন।

কুওমো বলেন, 'অ্যাসেম্বলিমেম্বার এখনো বলেননি যে তিনি বিশ্বাস করেন ইসরায়েলের একটি ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে থাকার অধিকার আছে। তিনি বিভাজন সৃষ্টিকারী ব্যক্তি। তিনি বলেন এনওয়াইপিডি বর্ণবাদী, ওবামা মন্দ ও মিথ্যাবাদী, আর তিনি ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মূর্তিকে অপমান করেছেন।'

নিউ ইয়র্ক টাইমস অনুযায়ী, জুন মাসের এক প্রাইমারি বিতর্কে মামদানি বলেন, 'ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার আছে—একটি রাষ্ট্র হিসেবে যেখানে সকলের সমান অধিকার থাকবে।'

বুধবার তিনি এনওয়াইপিডি-কে 'বর্ণবাদী,' 'অশুভ' ও 'দুর্নীতিগ্রস্ত' বলার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান।

নিউ ইয়র্ক পোস্ট জানায়, কলেজ জীবনে মামদানি ওবামাকে “মন্দ” এবং “মিথ্যাবাদী” বলেছিলেন। পরে Politico-কে তিনি বলেন, “ওটা ছিল এক কলেজ ছাত্রের নির্বোধ টুইট।”

গ্লোবালাইজ দ্য ইনতিফাদা বিতর্ক

মামদানি বলেন, তিনি নিজে 'গ্লোবালাইজ দ্য ইনতিফাদা” বাক্যটি ব্যবহার করবেন না এবং অন্যদেরও তা না বলতে উৎসাহ দেবেন। ইসরায়েলপন্থীরা মনে করেন, এই বাক্য সহিংসতা উস্কে দিতে পারে, আর ফিলিস্তিনপন্থীরা একে ফিলিস্তিনি মুক্তির প্রতীক হিসেবে দেখেন।

মামদানি আরও অভিযোগ করেন, কুওমো ধনীদের দান ও রাজনৈতিক প্রভাবের ওপর নির্ভরশীল, এবং কোভিড-১৯ মহামারির সময় রাজ্যের অব্যবস্থাপনার দায় তাঁর।

বর্তমানে বিচার বিভাগ কুওমোর বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে, কারণ তিনি কংগ্রেসে দেওয়া এক সাক্ষ্যে মহামারি সংক্রান্ত রাজ্যের রিপোর্টে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছিলেন।

তবে কুওমোর মুখপাত্র এটিকে 'রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও নির্বাচনী হস্তক্ষেপ' বলে উড়িয়ে দেন। কুওমো বলেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের বিচার বিভাগের কোনো তদন্তাধীন নন।

মামদানি কটাক্ষ করে বলেন, 'যদি আবার কোনো মহামারি দেখা দেয়, তাহলে নিউ ইয়র্কবাসী কেন এমন একজন গভর্নরের হাতে ফিরে যাবে, যিনি বৃদ্ধদের নার্সিং হোমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন? আমার অভিজ্ঞতা হয়তো কম, কিন্তু আমার সততা আছে। আর যাদের সততা নেই, অভিজ্ঞতা দিয়েও তারা সেটা পূরণ করতে পারে না।'

বিতর্কে ট্রাম্পের ছায়া

বৃহস্পতিবারের বিতর্কে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম বারবার উঠে আসে। মামদানি ও কুওমো দুজনেই একে অপরকে ট্রাম্পের মোকাবিলা করতে অক্ষম বলে অভিযুক্ত করেন।

মামদানি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করেন, যেখানে বলা হয়েছিল ট্রাম্প ও কুওমো মেয়র নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলেছেন যা তারা দুজনেই অস্বীকার করেছেন।

মামদানি বলেন, 'কুওমো সেই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন নিউ ইয়র্কবাসীর সাহায্যে কাজ করার উপায় জানতে নয়, বরং কিভাবে এই নির্বাচন জেতা যায় সেটা জানতে। এটা আমি নিজেই করতে পারি।'

কুওমো পাল্টা বলেন, 'যদি অ্যাসেম্বলিমেম্বার মেয়র হন, তাহলে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক সিটি দখল করবেন—তখন শহরের মেয়র হবেন ট্রাম্প।

ইসরায়েল-হামাস প্রসঙ্গে মামদানির অবস্থান

ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে মামদানির অবস্থান তাঁর প্রচারণায় অন্যতম বিতর্কিত ইস্যু। বিতর্কে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “অবশ্যই, আমি চাই হামাস তাদের অস্ত্র নামিয়ে রাখুক।”

তিনি বলেন, 'আমি গর্বিত যে আমি রাজ্যের প্রথম নির্বাচিত কর্মকর্তাদের একজন, যিনি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছি। যুদ্ধবিরতি মানে হলো উভয় পক্ষেরই অস্ত্র নামানো, যাতে গণহত্যা বন্ধ হয় এবং মানবিক সহায়তা নিরবচ্ছিন্নভাবে পৌঁছাতে পারে।'

কুওমো সরাসরি বলেননি যে মামদানি ইহুদি-বিরোধী কিনা, তবে মন্তব্য করেন, 'অনেক ইহুদি মানুষ মনে করেন তিনি অ্যান্টি-সেমিটিক,' এবং আবারও 'গ্লোবালাইজ দ্য ইনতিফাদা' প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

মামদানি জবাবে বলেন, আমি বারবার হামাসকে নিন্দা জানিয়েছি, কিন্তু অ্যান্ড্রু কুওমোর কাছে তা কখনোই যথেষ্ট নয়। কারণ তিনি যা করতে প্রস্তুত, তা হলো আমাকে—এই শহরের সম্ভাব্য প্রথম মুসলিম মেয়রকে—‘সন্ত্রাসপন্থী সমর্থক’ বলা, এমনকি প্রচারপত্রে আমার দাড়ি কৃত্রিমভাবে লম্বা দেখানো।'

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, কুওমো-সমর্থিত একটি সুপার পিএসি তাদের প্রচারপত্রে মামদানির একটি ছবিতে দাড়ি সম্পাদনা করেছিল, যা পরে প্রকাশের আগেই বাতিল করা হয়।

স্লিওয়ার দুর্বল উপস্থিতি

মামদানি ও কুওমোর অবিরাম তর্ক-বিতর্কের মধ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া নিজেকে প্রকাশ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, 'এই বিতর্কে তিনজন আছি। কেউ কি তা স্বীকার করবেন?'

জরিপ অনুযায়ী, মামদানি এগিয়ে আছেন ৪৯ শতাংশে, কুওমো ৩০ শতাংশে এবং স্লিওয়া ১৩ শতাংশে অবস্থান করছেন। তবুও স্লিওয়ার কিছু প্রভাবশালী সমর্থক রয়েছেন।

তিনি দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আক্রমণ করেন, বলেন, 'অ্যান্ড্রু কুওমো, ২০২০ সালের গ্রীষ্মে আপনি বলেছিলেন, যদি পুলিশ সংস্কার না করা হয়, তাহলে অর্থায়ন বন্ধ করবেন। এবং জোহরান মামদানি, আপনিও একই কথা বলেছেন।'

কিন্তু এই আক্রমণগুলো কুওমোর জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে, কারণ তিনি নির্বাচনে টিকে থাকতে রিপাবলিকান ভোটারদের সমর্থন চাইবেন।

নির্বাচনে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই

বিশ্লেষকদের মতে, এই বিতর্কে নির্বাচনের গতিপথে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। মামদানি ইতিমধ্যেই কুওমোর চেয়ে দুই অঙ্কের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।

মামদানির প্রধান লক্ষ্য ছিল বড় কোনো ভুল না করা, আর কুওমোর দরকার ছিল জোরালো কোনো মুহূর্ত তৈরি করা—যা তিনি করতে ব্যর্থ হন।

তবুও আগামী সপ্তাহে আরেকটি বিতর্ক বাকি রয়েছে, যেখানে কুওমো হয়তো মামদানির বিরুদ্ধে নতুন কৌশল খুঁজে পেতে পারেন।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : bhorerdakonline@gmail.com, adbhorerdak@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : bhorerdakonline@gmail.com, adbhorerdak@gmail.com