২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকের পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন,তারা আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে অর্থবহ ও নিরপেক্ষ করতে অন্তবর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায় যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
এছাড়া সরকারের মধ্যে দলীয় লোক থেকে থাকলে তাদের সরিয়ে দেওয়ারও দাবি জানায় বিএনপি। এর একদিন পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল ড. ইউনূসের সঙ্গে যমুনায় গিয়ে বৈঠক করেন। তারাও সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা একটি দলের হয়ে কাজ করছেন অভিযোগ করেন।
এছাড়া ড.ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপিও অভিন্ন অভিযোগ করে। এর মধ্যে দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে দলীয় আনুগত্যের অভিযোগ আনলো তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তুমুল আলোচনা।
এদিকে বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে দলীয় সমর্থক উপদেষ্টাদের পদত্যাগ চাইলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদও। একই দাবি করেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান । তবে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান রাজণৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচিত বিএনপি ও জামায়াত দুই দলই অন্তবর্তী সরকারে থাকা উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ আনার বিষয়টি সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু কারা দলীয় উপদেষ্টা সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ভাবে কারো নাম জানায়নি বিএনপি, জামায়াত বা এনসিপি।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও প্রশাসনের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কর্মকর্তা একটি দলের আনুগত্য করছে । সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা একটি দলের হয়ে কাজ করছেন অভিযোগ করে জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, সরকারের যারা উপদেষ্টা আছে, তাদের ব্যাপারে (প্রধান উপদেষ্টাকে) বলেছি, সবার ব্যাপারে নয়।
আমরা বলেছি, কিছু কিছু লোক (উপদেষ্টা) আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) বিভ্রান্ত করে। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু আপনার কিছু লোক, আপনার পাশে আপনাকে বিভ্রান্ত করে। তারা কোনো একটা দলের পক্ষে কাজ করে। আমরা মনে করি, তাদের ব্যাপারে আপনার হুঁশিয়ার থাকা দরকার। সচেতন থাকা দরকার।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, উপদেষ্টা পরিষদে কারা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেই তথ্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসকে জানানো হয়েছে। নাহিদ ইসলাম বলেন, ছাত্র উপদেষ্টারা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে নেই। তারা অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে অন্য উপদেষ্টারাও যেমন, ছাত্র উপদেষ্টারাও তেমনি।
তিনি আরও বলেন, যদি ছাত্র উপদেষ্টাদের কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়, তবে অন্য উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। অনেকেরই পূর্বে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। তাই এসব বিষয় সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।
এদিকে নির্বাচন আয়োজনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে থাকা দলীয় উপদেষ্টা ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের বদলানোর দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
তিনি বলেন, কোনো আইনে নয়; ছাত্র-জনতার, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের রক্তের মধ্য দিয়ে ড. ইউনূস রাষ্ট্রক্ষমতা এসেছেন। তাই কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তির ওপর নয়, ড. ইউনূসকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে দায়িত্ববোধের ওপর।
আর সে দায়িত্ববোধ হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। তবে নির্বাচন আয়োজনের আগে অবশ্যই সরকারের মধ্যে থাকা দলীয় উপদেষ্টা ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের বদলাতে হবে। কারণ, দল-নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ দাবি জানান তিনি। রাশেদ খান তার পোস্টে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনোভাবেই নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। কোনো কোনো দলকে সুবিধা দিয়ে ম্যানেজ করে চলেছে। স্বজনপ্রীতিবাজ উপদেষ্টারা কতটুকু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবেন, সেটি নিয়ে সংশয় ও সন্দেহ আছে।
এমতাবস্থায় নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মকর্তাদের রদবদলের পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যেও শুদ্ধি অভিযান জরুরি এবং বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।