ই-পেপার বাংলা কনভার্টার রবিবার ● ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ৬ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার রবিবার ● ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




সামাজিক অপরাধ রোধে চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা
হাসান আল বান্না
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৫:১৬ পিএম  (ভিজিটর : ২১৫)
খবরের কাগজ খুললেই নানা সামাজিক অপরাধের খবর চোখে পড়ে। সামাজিক অপরাধের খবর ছাড়া খবরের কাগজ প্রকাশিত হচ্ছে বলেও মনে হয় না। অনেক সময় নিষ্ঠুর অপরাধও ঘটে। ভয়ংকর সব অপরাধের পর অনেক সময় অপরাধবোধও কাজ করে না। যা একটি জাতির জন্য কখনোই ভালো নয়। সমাজে সংঘটিত সামাজিক অপরাধের কিছু ঘটনা এতটাই নির্মম, নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর যে দেশের মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে পারে না। তিন-চার বছরের কন্যাশিশু থেকে শুরু করে চার সন্তানের জননীও বিকৃত রুচির ধর্ষকদের কাছ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এমনকি ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে অনেক ক্ষেত্রে কন্যাশিশুদের হত্যাও করা হচ্ছে। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পরিচিত মানুষ এতটা নির্মম, নিষ্ঠুর, জঘন্য ও বিকৃত রুচির হতে পারে, তা কল্পনাই করা যায় না। সারা দেশে যে সব সামাজিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তার খুব কমসংখ্যকই গণমাধ্যমে আসছে। নির্যাতিতদের বেশির ভাগই সমাজের অত্যন্ত দুর্বল শ্রেণির হওয়ায় এবং পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে অনেকেই তা প্রকাশ করতে পারছে না। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহসও অনেকে পাচ্ছেন না। এমনকি অভিযোগ করলেও প্রতিকারের পরিবর্তে নির্যাতিতদের নানাভাবে হয়রানি বা হেনস্তা হতে হচ্ছে।

সামাজিক ও মানবিক মূলবোধের চরম অবক্ষয়ই এ ধরনের নিষ্ঠুর অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির মূল কারণ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আওয়ামী লীগের অপরাজনীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার, বিশৃঙ্খল শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়া আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহারও এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিকৃত মানসিকতার জন্ম দিচ্ছে। ইন্টারনেটের সহজ প্রাপ্যতা ও অপব্যবহার সামাজিক অপরাধ সংঘটনে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করছে। সমাজের সম্ভ্রান্ত, শিক্ষিত, বিত্তশালী পরিবারের সন্তান এবং  রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও ধর্ষণ, হত্যাসহ ভয়ংকর অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। প্রশাসন এমনকি সাধারণ মানুষও এদের ভয়ংকর অপকর্ম সম্পর্কে অবগত রয়েছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনো এক অদৃশ্য কারণে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।

বিভিন্ন ঘটনা ও কেস স্টাডি বলছে, কিছু মা-বাবা কোনো কিছু চিন্তা না করেই এখন নিজ সন্তানকে হত্যা করছেন। আবার সন্তানদেরও মা-বাবাকে হত্যা করতে হাত কাঁপছে না। এর কারণ অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, জমি নিয়ে বিরোধ, অনৈতিক সম্পর্ক, আর্থিক অনটন, মাদকাসক্তি, পারিবারিক কলহের জেরে এ ধরনের সামাজিক অপরাধ ঘটছে। সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশে এখন যে সামাজিক অপরাধগুলো সংঘটিত হচ্ছে তার বেশির ভাগই অর্থসম্পদকে কেন্দ্র করে হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন পরিবারের মধ্যে সম্পদ ভাগাভাগি হতো না। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। জমিজমাকে কেন্দ্র করে এখন সামাজিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অর্থ-সম্পদ ও টাকা-পয়সার প্রতি মানুষের মোহ বাড়ছে। আর এসব কারণে সামাজিক অপরাধের মতো ঘটনাও ঘটছে। মানুষের মধ্যে এখন সহিষ্ণুুতার অনেক অভাব। যত দিন যাচ্ছে মূল্যবোধের অবক্ষয়ে সামাজিক অপরাধও বাড়ছে। এ কারণে পারিবারিক বন্ধনও শিথিল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সামাজিক অপরাধগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক চাপের সম্পর্ক রয়েছে। ঋণগ্রস্ত হয়ে অনেক মানুষ এখন নিজে আত্মহত্যা করে তার পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করছেন। মনোবিজ্ঞানীরা একে ‘সিরিয়াল সুইসাইড’ বলছেন। এ ধরনের বিষণ্ন রোগীদের অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সামাজিক অপরাধ দমনে অপরাধীদের মোটিভেশন দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে পরিবারগুলোতে যে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ আছে এ বিষয়ে সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি এক সময় আমাদের সবচেয়ে বড় সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এখন এ ধরনের অপরাধের হার তুলনামূলক কম। দারিদ্র্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এ ধরনের অপরাধের মাত্রা সঙ্গত কারণেই বেশি ছিল। প্রযুক্তির প্রভাবে যে সামাজিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়, তা অধিকাংশ সময় সমাজে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিধিবদ্ধ নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটি সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। অবশ্য অবস্থানভেদে সামাজিক অপরাধের আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের সামাজিক অপরাধগুলো ব্যক্তির জীবনযাপন পদ্ধতি বা লাইফস্টাইলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।

গভীরভাবে সাইবার ক্রাইমের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে মাদককে কেন্দ্র করে কিছু চক্র গড়ে উঠছে, কিছু অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে অর্থপাচার ও অর্থচুরির জন্য। আবার কিছু অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে। বিশেষত সম্পর্কের ধরনেও নানা পরিবর্তন আসায় হত্যা, খুন, গুম এবং ধর্ষণের মতো সমস্যাও বেড়েছে। আবার অর্থপাচারের মতো সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করেছে। সাইবার ক্রাইমের এই প্রধান কারণের ব্যাপ্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আমরা নিতে পারছি না। সর্বপরি আমরা শান্তিতে বাঁচতে চাই। স্বস্তিতে থাকতে চাই। কোনো অপরাধ চাই। কোনো অপরাধ দেখলে আমরা সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবো।

লেখক: হাসান আল বান্না, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]