প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, -০০০১, ১২:০০ এএম (ভিজিটর : ৭০)
ভুল পরিকল্পনা ও চরম অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে সিরাজগঞ্জে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রায় তিন কোটি টাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এখন কার্যত অচল ও পরিত্যক্ত।
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সৌরবিদ্যুৎ সুবিধাসহ নির্মিত দুটি মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন কেন্দ্র বর্তমানে কোনো কাজে আসছে না। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
পরিত্যক্ত কেন্দ্রে মাদকসেবীদের আড্ডা, চুরি হচ্ছে সরঞ্জাম বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার স্টেডিয়াম এলাকা ও বেলকুচির আজুগাড়ায় নির্মিত এই কেন্দ্রগুলোর করুণ দশা। মূল্যবান সরকারি সম্পদ রক্ষকহীন অবস্থায় পড়ে থাকায় রাতে এগুলো হয়ে উঠেছে মাদকসেবীদের নিরাপদ আড্ডাখানা। পাশাপাশি, কেন্দ্র থেকে মূল্যবান সরঞ্জাম চুরি হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।২০২৩ সালে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)-এর আওতায় প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্র দুটি নির্মাণ করা হয়।
প্রতিটি কেন্দ্রে বেসিন, ট্যাপ, বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা এবং এমনকি সৌরবিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রগুলো চালু না হওয়ায় মূল্যবান সরঞ্জামাদি নষ্ট হচ্ছে এবং নির্মাণের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে চলেছে।স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত এই অচল কেন্দ্রগুলো ব্যবহার উপযোগী করে তোলা না গেলে সরকারি এই কোটি কোটি টাকার সম্পদ একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে।জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কোনো মতামতই নেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, "প্রকল্প শুরুর প্রায় তিন মাস পর আমরা জানতে পারি যে সিরাজগঞ্জে এই কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করা শুরু হয়েছে।"
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আনারুল হকও একই কথা জানান। তিনি বলেন, "এ প্রকল্প বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। ঢাকা অফিস থেকেই সরাসরি কাজ করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে পৌরসভায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে এর অবস্থা কী, তা আমাদের জানা নেই।"
পৌরসভার বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা জুলফিকার আলী প্রকল্পটির ব্যর্থতার মূল কারণ হিসেবে ভুল স্থান নির্বাচনকে দায়ী করেছেন। তিনি জানান, "এই বাজারের কোনো বাস্তব চাহিদা নেই। ৪৮টি দোকানের মধ্যে মাত্র ৮টি বরাদ্দ দেওয়া গেছে। ভুল জায়গায় স্থাপনের কারণেই এটি অকেজো হয়ে পড়েছে।"
প্রকল্পের এই ভয়াবহ ব্যর্থতা নিয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের ডিপিডি হারুন রশিদ এটিকে 'প্যাকেজ প্রকল্প' বলে দায় সারতে চান। প্রতিটি কেন্দ্রে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে জানালেও প্রকল্পের কার্যকারিতা বা পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ফোন কেটে দেন।
পরিকল্পনাবিহীনভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পটি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনসাধারণ ও সচেতন মহল। তাদের মতে, সরকারি অর্থের এমন অপচয় কোনোভাবেই কাম্য নয়।