সড়ক নিরাপত্তা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ৯ম বারের মতো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বুধবার (২২ অক্টোবর) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দিবসটির এবারের মূল প্রতিপাদ্য ছিলো “মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি, কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি”।
প্রতিবছর সড়ক দূর্ঘটনায় বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রানহানি ঘটে, মারাত্মক আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে আরো অনেক মানুষ। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১৪ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একযুগে সারাদেশে ৬৭ হাজার ৮৯০ টি সড়ক দূর্ঘটনায় মোট ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত হয়েছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আরো বেশি। এসব দূর্ঘটনার মূল কারণ চালক, যাত্রী ও পথচারীদের অসেচতনতা ও চালকদের অদক্ষতা। একারণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদযাপিত হয় জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, মাননীয় উপদেষ্টা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ খোদা বখস চৌধুরী, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৫ উদ্যাপন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০.০০ টায় হাতিরঝিল থেকে সড়ক ভবন পর্যন্ত শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে সকাল ১১.০০ টায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ, সংস্থা, সুশীল সমাজ, এনজিও এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে সড়ক ভবন, জাহাঙ্গীর গেইট থেকে ফার্মগেট, মহাখালী-আমতলী থেকে কাকলী মোড় এবং তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড় পর্যন্ত রাস্তার দ্বীপসমূহ আলোকসজ্জা ও ব্যানারে সজ্জিত করা হয়। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বাস টার্মিনালে জনসচেতনতামূলক লিফলেট, পোস্টার, স্টিকার ও ব্রসিয়ার বিতরণ করা হয়। এছাড়া দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে প্রচার এবং মোবাইল ফোনে বিটিআরসি’র মাধ্যমে ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) প্রচার করা হয়।
মূল অনুষ্ঠানে বিআরটিএ কর্তৃক নির্বাচিত ১৬ জন দক্ষ পেশাদার মোটরযান চালককে নিরাপদ গাড়ি চালনার স্বীকৃতিস্বরূপ সেরা চালকের সনদপত্র প্রদান করা হয়। একই সাথে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় র্যালি, আলোচনা সভা এবং সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজন করা হয়।
দিবসের পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে ঢাকা শহরের ১০টি এবং জেলা পর্যায়ে ০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বালক (স্কুল ও কলেজ) ১টি করে, বালিকা (স্কুল ও কলেজ) ১টি করে এবং মাদ্রাসা ১টি, সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ক্ষেত্র বিবেচনা করা হয়েছে।
দিবসের পরবর্তী ১ সপ্তাহব্যাপী পেশাজীবী গাড়ি চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠান চলাকালীন দেশের বিভিন্ন স্থানের দূর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে ২৮টি হেলমেট বিতরণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে চালকদের মাঝে মোট ১০,০০০ হেলমেট বিতরণ করা হচ্ছে।
দিবসের সকল কার্যক্রমের সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে বিআরটিএ, সওজ, ডিএমপি, বিআরটিসি, ডিটিসিএ, ব্র্যাক, আহছানিয়া মিশন, নিরাপদ সড়ক চাইসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
এ বছরের জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও দুর্ঘটনা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট সকলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।