ই-পেপার শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
শিরোনাম: প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কাল        মোবাইল ইন্টারনেট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামীকাল : পলক       মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ও ফেসবুক চালুর বিষয়ে যা জানা গেলো       নেপালে বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ১৮       আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সব নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী       খুলেছে অফিস-আদালত, গণপরিবহন সংকটে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি        বান্দরবানে কেএনএফের দুই সদস্য নিহত      




তালিকা প্রায় চূড়ান্ত
শতাধিক পণ্যে যোগ হচ্ছে বাড়তি শুল্ক
রিজার্ভে চাপ কমাতেই পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ হচ্ছে
ভোরের ডাক রিপোর্ট
Published : Wednesday, 22 May, 2024 at 11:11 AM
বাজারে আগে থেকেই পণ্যের ওপর প্রযোজ্য হারে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর ও অগ্রিম আয়করসহ উচ্চ হারে শুল্ক-কর আরোপ করা আছে। এর মধ্যে আগামী বাজেটে বিদ্যমান শুল্কের পাশাপাশি অনন্ত শতাধিক পণ্যের ওপর বাড়তি আমদানি ও সম্পূরক নতুন শুল্ক-কর আরোপ করা হচ্ছে। মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে নতুন বাজেটে এসব পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবে শতাধিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানোর কথাও থাকছে। বাড়তি শুল্কহার কার্যকর হলে ওইসব পণ্যের দাম দেশীয় বাজারে আরও বেড়ে যেতে পারে। জানা যায়, প্রস্তাবিত বাজেটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশে শতাধিক পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি কমানো ও প্রত্যাহার এবং সম্পূরক নতুন শুল্ক-কর আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাজেট ঘোষণার পরই এসব পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, চলতিবারের চেয়ে আগামী অর্থবছরে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি ভ্যাট আদায় করতে হবে। বাড়তি ভ্যাট আদায় করতে গিয়ে এনবিআরকে অনেক পণ্যের ওপর ভ্যাটের হার বাড়াতে হচ্ছে। ভ্যাটের হার বাড়ানোর জন্য নতুনভাবে অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ করতে হচ্ছে। এছাড়া ভ্যাট অব্যাহতি বা প্রত্যাহার ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে হচ্ছে। কোন কোন পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি ও প্রত্যাহার এবং সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে তার চূড়ান্ত তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এরই মধ্যে এসব তালিকায় সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে এমন অনেক পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাব ঘোষণার পরই এসব পণ্যের ওপর ভ্যাটের হার বেড়ে যাবে। আর এতে পণ্য কিনতে হলে বেশি দাম দিতে হবে। বাড়তি ভ্যাট আদায় করতে হলে এনবিআরকে অবশ্যই বিভিন্ন খাতে ভ্যাটের হার বাড়াতে হবে এমন মত জানিয়ে সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ বলেছেন, বেশকিছু নতুন ভ্যাট যোগ করে পণ্যের দাম হিসেবে আদায় করা হয়। আমাদের দেশে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ না জেনেই তা পণ্যের দাম হিসেবে পরিশোধ করে থাকে। ভ্যাট রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে নিরাপদ হাতিয়ার। রাজস্ব আদায়ে চাপ থাকলেই এনবিআর সহজ পথ হিসেবে ভ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে আদায় করে। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে ভ্যাটের পরিমাণ বাড়াতে হলে পণ্য মূল্যের ওপর ভ্যাটের হার বাড়াতে হবে। ভ্যাটের হার বাড়াতে হলে নতুনভাবে ভ্যাট আরোপ করতে হবে। আবার ভ্যাট অব্যাহতি কমালে; প্রত্যাহার করলে এবং সম্পূরক শুল্ক আরোপ করলেও ভ্যাটের হার বাড়বে। যেসব পণ্যের ওপর ভ্যাটের হার বাড়ানো হবে তার দাম বেড়ে যাবে। তাই আগামী অর্থবছরে ভ্যাট আদায় বাড়াতে গিয়ে এনবিআর পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে। একই মত জানিয়ে সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরি একটি সাবান উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি ১০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হলো, তবে ৫০ টাকার সাবানের দাম ৫ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকা হবে। এই সাবানটি ধনী-দরিদ্র সবাইকে একই দাম দিয়ে কিনতে হবে। ধনী ব্যক্তির জন্য বাড়তি দাম দিতে কষ্ট না হলেও একজন দরিদ্র ব্যক্তির জন্য তা যথেষ্ট ভোগান্তির। তাই ভ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষের ভোগান্তি বাড়ানো হবে। এমনিতেই এখন জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাটের পরিমাণ বাড়ানো হলে তাদের ওপর খরচের চাপ আরও বাড়বে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজেট প্রস্তুত কমিটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফের পরামর্শ মানতে গিয়ে শতাধিক পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি, প্রত্যাহার ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে হচ্ছে। ভ্যাটের আদায় বাড়ানোর জন্য এনবিআরও তা মেনে নিয়েছে। এতে এসব পণ্য উৎপাদন এবং আমদানিতে খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা। শেষ পর্যন্ত দাম বেড়ে যাবে। অন্যদিকে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এতেও দাম বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দাম বাড়া ঠেকাতে অন্য কোনো সুবিধা দিয়ে উৎপাদন ও আমদানি খরচ কমানো যায় কি না; তা নিয়ে হিসাব করা হচ্ছে। দেখা যাক- শেষ পর্যন্ত কী করা যায়। ইতোমধ্যে আইএমএফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি অর্থবছরে শুধু আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ায় সরকার গড়ে ৪৪ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় করে। এছাড়া অন্যান্য খাতের ভ্যাট অব্যাহতিতেও এ অর্থের সমান আদায় কম হয়। অব্যাহতি তুলে নেয়া হলে এ অর্থ নিশ্চিত আদায় হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা সেবা খাতে কোনো ভ্যাট নেই। অর্থাৎ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ অবদান রাখে, এমন খাতগুলোতে ভ্যাট আরোপ করা নেই। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক আইনের প্রথম তফসিল অনুযায়ী ৪৮৯ এইচএস কোডভুক্ত প্রাথমিক পণ্য, জীবনধারণের জন্য মৌলিক পণ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া আছে। এছাড়া একই তফসিল অনুযায়ী প্রায় ৫০টি সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রায় ৫০০ পণ্যকে বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট অব্যাহিত দেয়া হয়েছে। এভাবে জিডিপির প্রায় ৫০ শতাংশ পণ্য সেবা ভ্যাট অব্যাহতির আওতাভুক্ত। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এমন একটি পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে যে, অতি জরুরি ক্ষেত্র ছাড়া এই মুহূর্তে অন্য কোথাও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করার মতো সুযোগ নেই। অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, এটা এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, অনেক বেশি সুচিন্তিত হওয়া; অনেক বেশি কাটছাঁট করা দরকার। গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য পণ্য ছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ পণ্য; বিলাসবহুল পণ্য আমদানি সীমিত করে দেয়ার সময় এসেছে। সরকারের এসব ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যদিও শুল্ক আরোপের ফলে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কিন্তু তাতে উচ্চবিত্ত বা ধনী শ্রেণির ওপর চাপ পড়লেও বেশিরভাগ মানুষের জন্য কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেছেন, সব আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হলে সেটা জনগণের ওপর চাপ তৈরি করত; জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়িয়ে দিত। কিন্তু যদি বিলাসী এবং কম গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়; তাহলে ধনী শ্রেণির ওপর হয়তো চাপ বাড়বে। কিন্তু সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। কারণ এসব পণ্য আমদানি কমলে সেই অর্থ অন্যত্র কাজে আসবে।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]