ই-পেপার শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
শিরোনাম: মোবাইল ইন্টারনেট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামীকাল : পলক       মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ও ফেসবুক চালুর বিষয়ে যা জানা গেলো       নেপালে বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ১৮       আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সব নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী       খুলেছে অফিস-আদালত, গণপরিবহন সংকটে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি        বান্দরবানে কেএনএফের দুই সদস্য নিহত       লাখাইয়ে রোপা আমন ধানের বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত কৃষক      




সমুদ্র রাজনীতি যখন উত্তাপ ছড়ায়
রায়হান আহমেদ তপাদার
Published : Saturday, 10 February, 2024 at 11:27 AM
বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে উন্মেষ ঘটেছিল যে বিশ্বায়নের, একুশ শতকে এসে তা তুমুল গতি পেয়েছে। সংস্কৃতি থেকে শুরু করে অর্থনীতি-সবকিছুতেই এর প্রভাব আজ প্রকট। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি বিশ্বকে একটি শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার পর অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও বেশি বিশ্বজনীন রূপ ধারণ করেছে। বাণিজ্য আজ আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ গিতে আবদ্ধ নেই। একটি দেশের পণ্য এখন অন্য দেশের বাজারে আধিপত্য করতে পারছে এই বিশ্বায়নের প্রভাবেই। বিশ্ব বাণিজ্যে মোট পণ্যের ৯০ শতাংশ পরিবহন হয় সমুদ্রপথে। ফলে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের চাপও বেশি সামাল দিতে হচ্ছে সমুদ্র পরিবহন খাতকে। চাহিদা মেটাতে বৈশ্বিক বহরে জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া একটি শিপমেন্টে অধিক পরিমাণে বাণিজ্য পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক মেগা কনটেইনার শিপ।সমুদ্রবন্দর গুলোয় কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্দর থেকে পণ্য দ্রুত গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাড়ানো হচ্ছে ইন্টারমোডাল কানেক্টিভিটি।অবশ্য বিশ্ববাণিজ্য ও সমুদ্র পরিবহন খাতের গতি যে সবসময় সুষম থাকে,তা নয়।গাজা থেকে হাজার মাইল দূরে এক নৌ-সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকটের জেরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নতুন মোড় নেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়তে পারে। ১৫ ডিসেম্বরের পর বিশ্বের পাঁচটি বড় কনটেইনারবাহী জাহাজের মধ্যে চারটিই লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। সুয়েজ খাল থেকে যে জাহাজগুলো আসে, সেগুলোকে এই পথেই চলতে হয়। ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা করায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, হুতিরা আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। এ হামলায় বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্যপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা মধ্যপ্রাচ্যে নৌ তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। এমনকি বাণিজ্যপথ বিপদমুক্ত করতে তারা হুতি বিদ্রোহীদের ওপর হামলাও করতে পারে। আফ্রিকা ও আরব উপদ্বীপের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা বাব-এল-মান্দেব প্রণালিতে বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ ও কনটেইনার ট্রাফিকের ৩০ শতাংশ পরিবাহিত হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিদ্রোহীদের আক্রমণের কারণে এই পথ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, যেসব জাহাজে এই হামলা করা হয়েছে, সেগুলো সবই ছিল লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ। এর প্রতিক্রিয়ায় গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জাহাজ ইউএসএস কারনি লোহিত সাগরে ১৪টি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে। ব্রিটিশ জাহাজ এইচএমএস ডায়মন্ড নামিয়েছে আরেকটি ড্রোন। অর্থাৎ বাব-এল-মান্দেবের মতো এমন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যে বাড়ছে,এসব তারই লক্ষণ।নৌবাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, এ লক্ষ্যে লোহিত সাগরে বিপুলসংখ্যক যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি থাকতে হবে। বিকল্প হিসেবে সরাসরি হুতিদের ডিপো ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালানো যেতে পারে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের হামলার পরিকল্পনা করলেও তাদের মধ্যে অনাগ্রহ আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র হামলায় সরাসরি জড়াতে চায় না, অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের সম্পৃক্ততা আর বাড়াতে চায় না। ইসরায়েল গাজার যুদ্ধ থামানো বা তার তীব্রতা হ্রাসের বিষয়ে চাপে আছে। হুতিদের এই তৎপরতা চলমান থাকলে, অর্থাৎ বিশ্ববাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে মধ্যপ্রাচ্যে আবার যুদ্ধ পরিস্থিতি অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোর সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই দ্বীপগুলোতে নিজস্ব প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করে চলেছে। এসব দ্বীপ এবং সেগুলো ঘিরে যে বলয়, সেখানে দেশদুটি নিজেদের শক্তিপ্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আমরা জানি, সমুদ্রে রাজনীতি যখন প্রবেশ করে, তখন সেটি উত্তপ্ত প্রতিযোগিতার স্থান হয়ে ওঠে। আর নিরাপত্তার প্রশ্নে দ্বীপগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের স্বার্থ বিরাটভাবে বেড়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা (বিশেষ করে জাপান ও অস্ট্রেলিয়া) প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। চীনকে মোকাবিলা করার প্রচেষ্টা হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্র মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরে ৮০ বছরের মধ্যে এই প্রথম তাদের সামরিকশক্তি বাড়িয়েছে। বিশ্বের যেখানে অবস্থিত হোক না কেন, দ্বীপ সব সময়ই সম্পদের ভান্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোর সুনির্দিষ্ট তাৎপর্যের কারণ হচ্ছে; এক দ্বীপের সঙ্গে অন্য দ্বীপের মধ্যকার দূরত্বটা অনেক বেশি। এবং ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে দ্বীপগুলোর একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি মূলত কয়েকটি বড় ঘাঁটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে গুয়ামের অ্যান্ডারসন বিমানঘাঁটি এবং জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপের কাদেনা বিমানঘাঁটি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আমেরিকান সামরিক সক্ষমতা কয়েকটি দ্বীপে কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকায় বড় একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রতিপক্ষ যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা আঘাত করার সক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যাবে। যা-ই হোক, প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের গতিবিধির সঙ্গে তাল মেলাতে যুক্তরাষ্ট্রও জুয়া খেলার মত অবস্থায় নেমেছে। প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের কর্মতৎপরতাকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলা হুমকি বলে মনে করে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যত দিন যাচ্ছে, চীনের এই হুমকি ততই বাড়ছে। ধীরে ধীরে বড় এলাকাজুড়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে ওই অঞ্চলে স্থিতাবস্থা বদলে দেওয়ার পথ খুঁজছে চীন।

নিজেদের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বদলে দেওয়ার পথ খুঁজছে বেইজিং। প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর জবরদস্তি করার ক্ষেত্রে চীনের সক্ষমতা বাড়ছেই। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ওয়াশিংটন ও এর মিত্রদেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বেইজিং। প্রশান্ত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলনীতি দিনে দিনে প্রভাববিস্তারী হয়ে উঠছে। উদাহরণ হিসেবে ২০১৯ সালে দ্বীপদেশ কিরিবাতি তাইওয়ানকে রেখে চীনের ওপর কূটনৈতিক সমর্থন দেয়। পাপুয়া নিউগিনিতে হুয়াওয়ের উপাত্ত সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে চীন। ফিজির পুলিশ বিভাগের সঙ্গে নানা প্রকল্পে জড়িয়েছে চীন। সলোমন দ্বীপপুঞ্জসহ কয়েকটি জায়গায় গবেষণাকেন্দ্র করেছে। সামোয়াতে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে। ওয়াশিংটন মনে করে, এ ধরনের ভাষাশিক্ষার কেন্দ্রটি চীনের প্রভাব বিস্তারে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওশেনিয়া অঞ্চলে চীন ধ্রুপদি চীনা মতাদর্শ প্রয়োগ করছে। এই মতাদর্শের কেন্দ্রে যে যুদ্ধগুলো রয়েছে, সেগুলো হলো: মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ, গণমাধ্যম অথবা জনমত যুদ্ধ ও আইনি যুদ্ধ। আইনি ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার পদ্ধতি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সলোমন দ্বীপপুঞ্জে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে উত্তেজনা তৈরি করছে চীন। দেশটিতে বেকারত্বের হার এখন অনেক বেশি। এর ফলে সেখানে আরও উত্তেজনা ছড়ানো ও নিজেদের প্রভাব তৈরির সুযোগ পাচ্ছে চীন। সলোমন দ্বীপপুঞ্জে যদি অস্থিতিশীলতা তৈরি করা যায়, তাহলে তার প্রভাব অন্য দ্বীপগুলোরও ওপরে পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাতে করে এই দ্বীপরাষ্ট্রগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ-দুইয়ের স্বার্থের ওপর চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। চীনকে মোকাবিলা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোর বিমানক্ষেত্রগুলোর ওপর জোর দিচ্ছে। 

যুক্তরাষ্ট্র এখন আবার মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের তিনিয়ানকে বিমান ও নৌকর্মকাণ্ডের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। ১০১ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপটিতে মাত্র তিন হাজার মানুষ বাস করে, কিন্তু দ্বীপটির কয়েকটি বিমানবন্দর নানাধরনের সেবা দিয়ে চলেছে।কৌশলগতভাবে তিনিয়ান, সাইপান ও গুয়াম দ্বীপপুঞ্জে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান পরিচালনার লম্বা ইতিহাস রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এই তিনটি দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানবাহী রণতরি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্থায়ী রূপ নিতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে বিশ্বের তিনটি প্রধান ভূরাজনৈতিক সংকটে জড়িয়েছে। দূরবর্তী তিন দেশে কমপক্ষে তিনটি শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে তারা। এমন সব দেশের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র দাঁড়িয়েছে, যাদের সামরিক সুরক্ষা দিতে তারা চুক্তিবদ্ধ নয়। সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তির পরও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির একটা উদ্দেশ্য আছে। তারা চায় ইরান ও হিজবুল্লাহ যেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযানে না যায়। কিন্তু এই উপস্থিতি মার্কিন বাহিনীকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার। ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত বাহিনী উপর্যুপরি ড্রোন ছুড়েছে মার্কিন সেনাদের ওপর। মার্কিনিরাও তাদের প্রতিহত করেছে। পূর্ব ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়েছে প্রক্সি যুদ্ধে। পূর্ব এশিয়ায় তাইওয়ানের রাজনৈতিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনের মুখোমুখি। গত বছর ওভাল অফিসে দেওয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দেখান। তিনি ও তাঁর প্রশাসন বলতে চাইছে, এই যুদ্ধগুলো গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রে মধ্যে চলা বৈশ্বিক যুদ্ধ। মধ্যপ্রাচ্য বা ইউক্রেনে সংঘাত না এড়িয়ে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ওভাল অফিসে দেওয়া বক্তৃতায় এই সংকটকে বৈশ্বিক সংকট বলে উল্লেখ করেন।

বাইডেন দাবি করেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র দূরের শত্রুদের প্রতিহত করতে না পারে, তাহলে তারা আরও শক্তিশালী ও আগ্রাসী হয়ে উঠবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও শীতল যুদ্ধের সময় আলোচিত ‘মিউনিখ অ্যানালজি’ ও ‘ডমিনো থিওরি’র উদাহরণ টানেন তিনি। এই উদাহরণ দুটি আবার প্রমাণনির্ভর নয়। এবং যদি রাশিয়াকে ইউক্রেনে থামানো না যায়, তা হলে পুতিন পোল্যান্ড অথবা বাল্টিকের দিকে এগোবেন। এটা একটা অবাস্তব চিন্তা। রাশিয়া চাইলেও পূর্ব ইউরোপ দখলের মতো বস্তুগত সক্ষমতা তাদের নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ছাড়া, ইউরোপের ন্যাটো সদস্যরা ২০২২সালে সামরিক খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে।রাশিয়ার চেয়ে তাদের সক্রিয় সেনার সংখ্যা বেশি, সম্মিলিতভাবে তাদের মোট দেশজ উৎপাদন প্রায় ৯ গুণ বেশি, জনসংখ্যাও সাড়ে ৩ গুণ পর্যন্ত বেশি, তাদের পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধের নিজস্ব ব্যবস্থা আছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যে হাল, তাতে বোঝা যায় যে রাশিয়াকে নিয়ে এই ভয়ের কোনো ভিত্তি নেই।প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরও বলেন, যদি ইউক্রেনে রাশিয়ার চূড়ান্ত পতন না হয়, তাহলে তাইওয়ান দখলে চীন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড্যারিল প্রেস ও জোনাথন মার্সার যেমনটি বলেন, শত্রুরাষ্ট্রের সক্ষমতা বিচার করতে হয় দেশটির বর্তমান সক্ষমতা ও স্বার্থ বিবেচনায়, তাদের অতীত দেখে নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব দেশের প্রতি একটু কম মনোযোগী হতো, তাহলে তারা নিজেরাই নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সচেষ্ট হতো। বিনা প্রতিরোধে সার্বভৌমত্ব চীন বা রাশিয়ার হাতে তুলে দিত না। সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্র যদি বিশ্বব্যাপী তার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসার চায়, তাহলে নিজ দেশে মডেল গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটাক। এই মডেল তখন অন্য দেশে অনুসৃত হবে। বাইডেন বলেন, আমেরিকা সারা বিশ্বের বাতিঘর। কিন্তু আমেরিকা যখন তার সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটাচ্ছে, তখন তার নিজের দেশই বেদনাহত।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক 







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]