ই-পেপার বাংলা কনভার্টার সোমবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ই-পেপার সোমবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২৪
Select Year: 
শিরোনাম:




ঈদের আগে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করুন
প্রকাশ: শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪, ১২:৫২ পিএম  (ভিজিটর : ৭০৮)
সারাদেশ যখন ঈদ-উল-আযহা উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং চট্টগ্রামের মতো প্রধান শিল্পাঞ্চলে গার্মেন্টস শ্রমিকেরা তাদের বেতন-বোনাসের দাবীতে আন্দোলন করছে। এমন খবর উঠে আসছে সংবাদপত্রে। মাসের দশ তারিখ পাড় হয়ে গেলেও অনেক কারখানাই এখনো শ্রমিকদেরকে বেতন দেয়নি ঈদের বোনাস তো সপ্নের বিষয়।

প্রতি বছর এই শ্রমিকেরা তাদের প্রাপ্য বেতন এবং ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ ও আন্দোলনে লিপ্ত হয়। তবে প্রায় বেশিরভাগ সময়ই কোন লাভ হয় না। পোশাক শ্রমিকদপর পারিশ্রমিক পরিশোধের প্রক্রিয়াটা আরও সুরক্ষিত করা হলে ভালো হয়। ঈদের আগেই তাদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হলে তারা অনেক উপকৃত হয়। তারা তো কোনো দয়াদাক্ষিণ্য চাচ্ছেনা, তাদের পরিশ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিবে। এটা অনেক সময় মালিকপক্ষ বুঝতে চায় না। 

ঈদের সময় দেখা যায় যে পোশাক কারখানার মালিক নিজেই কয়েকটা গরু কোরবানী দিচ্ছেন অথচ তার কারখানাতেই কর্মরত শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবীতে সড়কে আন্দোলন করছেন। শ্রমিকেরা বেতন না পেলে যে তাদের সংসারে চুলা জ্বলেনা সেদিকে কি কারও খেয়াল আছে? অমেক সময় ঈদের আগে শ্রমিকেরা পরিবারের সদস্যদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেওয়া ত দূরের কথা তাদের জন্য সুতোর বান্ডিল ও কিনতে পারেনা। ঈদের দিন এক চামচ সেমাই ও একটুকরো মাংস তাদের মুখে তুলে দেওয়ার মতোও সামর্থ্য হয়না অনেকের। এইসব বিষয় শ্রমিকদেরকে ঈদের দিনেও হতাশাগ্রস্ত করে।

শ্রমিকদের এই দুর্দশা একটি গুরুতর অন্যায়কে তুলে ধরে যা অবিলম্বে সমাধান করা উচিত।  গার্মেন্টস শ্রমিকরা বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড, সারা বছর শ্রম দিয়ে দেশের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখে।  ঈদের আগে তারা তাদের ন্যায্য বেতন এবং বোনাস পাবে, তারা সম্মানের সাথে ঈদ উৎসবে অংশগ্রহণ করবে এটাই ন্যায্য ও মানবিক।

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (২০০৬ সনের ৪২ নং আইন) এ স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, প্রত্যেক মালিক তৎকর্তৃক নিযুক্ত প্রত্যেক শ্রমিককে, এই আইনের অধীন পরিশোধ করিতে হইবে এরূপ সকল মজুরী পরিশোধ করিবার জন্য দায়ী থাকিবেন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক অথবা উহার তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের জন্য মালিকের নিকট দায়ী অন্য কোন ব্যক্তিও উক্তরূপ পরিশোধের জন্য দায়ী থাকিবেন।

তবে দুঃখজনকভাবে, কিছু কারখানার মালিক তাদের আর্থিক সমস্যা এড়াতে তাদের কারখাানর কার্যক্রম ঈদের ছুটিতে বন্ধ করে দেয়। এই ধরনের অভ্যাসগুলি কেবল অনৈতিক নয়, কর্মীদের বিশ্বাস এবং মনোবলের উপর গভীরভাবে ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। শ্রমিকদের তাদের প্রাপ্য অর্থ প্রদানকে অস্বীকার করা, বিশেষ করে একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সময়কালে, তাদের অধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের নীতির অবমাননা।


উৎসাহজনকভাবে, গেলো ঈদুল ফিতরের সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী ঘোষণা করেছেন যে, ঈদুল ফিতরের ছুটির আগে পোশাক শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস প্রদান করা হবে। কিন্তু তারপরেও দেশের কোথাও কোথাও শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া গেছে। যাইহোক, মন্ত্রী মহোদয় যদি এবারও কুরবানী ঈদের আগে একটি কঠোর পদক্ষেপ নিতেন তাহলে সকল শ্রমিকদের জন্যই মঙ্গল হতো। মালিক ও শ্রমিক নেতাদের মধ্যে প্রতিবছর ঈদের আগে আলোচনা অসন্তোষ রোধ করবে বলে মন্ত্রীর আশাবাদকে অবশ্যই দৃঢ় পদক্ষেপ এবং প্রয়োগযোগ্য প্রতিশ্রুতি হিসেবে সমর্থন করছি।

সাম্প্রতিক বিক্ষোভ, যেমন নারায়ণগঞ্জে টোটাল ফ্যাশন লিমিটেডের কর্মীদের ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ এবং গাজীপুরে ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের কর্মচারীদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থান, এই ইস্যুটির জরুরিতার উপর জোর দেয়। এই বিক্ষোভগুলি পদ্ধতিগত ব্যর্থতার একটি প্রখর অনুস্মারক যা কর্মীদের মাস ধরে তাদের ন্যায্য উপার্জন ছাড়াই অসচ্ছল করে রেখে দেয়, ষার ফলে তাদের এসব মরিয়া পদক্ষেপ (বিক্ষোভ-আন্দোলন) গ্রহনে বাধ্য করে।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশের নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সহ এধরনের সকল সংগঠন এর আওতাধীন সমস্ত পোশাক কারখানাকে ঈদের আগে বেতন ও বোনাস প্রদান নিশ্চিত করতে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি শুধুমাত্র একটি আইনি ও নৈতিক দায়িত্বই নয় বরং একটি স্থিতিশীল ও উৎপাদনশীল শিল্প গড়ে তোলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ইসলাম, আমাদের ন্যায়বিচার ও সহানুভূতির মূল ধর্ম। ইসলাম ধর্ম'ও শ্রমিকদের প্রতি ন্যায্য আচরণে বাধ্য করে। শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম বদ্ধপরিকর। আর একজন শ্রমিকের সবচেয়ে বড় অধিকার বা দাবী হলো, তার শ্রমের যথোপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভ করা। এজন্য বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- أُعْطُوا الْأََجِيْرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَّجِفَّ عَرقُهُ

অর্থ: ‘তোমরা শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর পূর্বেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও’। (তথ্যসুত্র: ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৯৮৭, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়)।

ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করা হজের চেয়ে বেশি; হজ আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত। এ ইবাদতকারীর জন্য আগে ঋণ পরিশোধ করা জরুরি। সামর্থ্য থাকলে ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা নিষেধ। এটিকে জুলুমের সঙ্গে তুলনা করেছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কোনো শিল্পের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য এবং স্থায়িত্বের জন্য একটি বিষয়বস্তু এবং অনুপ্রাণিত কর্মীবাহিনী অপরিহার্য। কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান কেমন ডেভলপ হচ্ছে এটা কর্মরত শ্রমিকদের মর্যাদা, ভালোবাসা ও অধিকারের উপর নির্ভর করে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, আসুন আমরা ন্যায্যতা ও সহানুভূতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হই, নিশ্চিত করি যে প্রতিটি গার্মেন্টস কর্মী আনন্দ ও মর্যাদার সাথে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করবে।

আমাদের সমাজের সম্মিলিত মঙ্গল নির্ভর করে যারা এই সমাজের ভিত্তি তৈরিতে অবদান রাখে সেই পোশাক শ্রমিকদের সাথে কিভাবে আচরণ করি তার উপর। ঈদের আগে গার্মেন্টস শ্রমিকেরা তাদের প্রাপ্য পাওনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে, আমরা তাদের অধিকার সমুন্নত রাখি, সদিচ্ছাকে লালন করি এবং সবার জন্য আরও ন্যায্য ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করি।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]