দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত লুটতরাজ মূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর এবং উপাসনালয়ে হামলা ভাংচুর প্রতিরোধে দলীয় ভাবে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। এছাড়া হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার পাশাপাশি বিভিন্ন মঠ মন্দিরে সর্তক রয়েছে।
এদিকে দেশের কয়েকটি জেলায় সহিংসতা ও জবরদখল মুলক কর্মকান্ডে প্রাথমিক ভাবে জড়িত থাকার দায়ে দলের বিভিন্ন স্থরের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে বহিস্কারও করেছে বিএনপি। বাদ যায়নি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো নেত্রীও। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যার তারেক রহমান একাধিক ভিডিও বার্তায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিপিড়ন বন্ধ করার পাশাপাশি তাদের পাশে দাড়াঁনোর জন্য দলের সর্বস্থরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। একই কথা বলেছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমানও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নির্যাতন প্রতিরোধ করার জন্য জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া তিনি নিজে প্রথমবারের মতো ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করে হিন্দু নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা মহিববুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমানও বিবৃতি দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ী, ঘর ও মন্দির রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য নিজ সংগঠনের সদস্যদের সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেন।
গত ৫ আগষ্ট রাত থেকেই বিএনপি, ছাত্রদল, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র শিবিব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মীর ও সমর্থকরা হিন্দুদের মন্দির পাহারায় কাজে সক্রিয় রয়েছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রাজধানীতে বিএনপি ও জামায়াত ও হেফাজতের নেতাকর্মীরা গত এক সপ্তাহ ধরে আন্তরিক ভাবে মন্দির রক্ষার কাজে সক্রিয় রয়েছে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনাকালী মন্দির, স্বামীবাগ ইসকন সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত প্রায় সকল মন্দিরে পরিদর্শন করেছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তারা স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন, এবং আতংকিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।
এদিকে ছাত্র গণ আন্দোলনে মুখে ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সারাদেশে সহিংসতা ও লটতরাজমুলক কর্মকান্ড শুরু হয়ে যায়। কিন্তু ঐ দিন সন্ধ্যা থেকেই প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে সহিংসতা ও লুটতরাজ মূলক কর্মকান্ড না করার জন্য দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্থরের জনগণকে বারবার আহবান জানাতে থাকেন বিএনপি ও জামায়াতের শীষ নেতারা।
বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও বার্তা দিয়ে সহিংসতা না করার জন্য আহবান জানান। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর যাতে কোনো প্রকার হামলা না হয় সে ব্যাপারে বিএনপির সকল স্থরের নেতাকর্মীদের সর্তক করে সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও বাড়ি ঘর পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দলীয় নেতাকর্মীদের একই বার্তা দেন। ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের সভাপতিও ভিডিও বার্তা দিয়ে সহিংসতা বন্ধ করার আহবান জানান। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। তাদের এই আহবানের পর মোটামুটি ভাবে সহিংসতামুলক কর্মকান্ড যেমনি কমে আসে, তেমনি লুটতরাজ, জবরদখল মুলক কর্মকান্ডও অনেক কমতে শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে অনেকস্থানে বিএনপি জামায়াতের নেতারা আওয়ামী লীগের নেতার বাড়ি থেকে লুট করা মালামালও ফেরত দিয়ে আসতে দেখা গেছে। যা সর্বস্থরে প্রশংসিত হচ্ছে ।
এদিকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। রোববার বিকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান।
রিজভী জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) হিসেবে অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত।
এছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি বেনজীর আহম্মেদ তাবরিজকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই অভিযোগে বগুড়ায় চার যুবদল নেতা ও দুই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার রাতে পৃথকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ধারনা করে হচ্ছে ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপস্থি কাজে জড়িত থাকার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ভাবে শাস্তি মূলক ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে।