ই-পেপার বাংলা কনভার্টার  বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৭ ভাদ্র ১৪৩১
ই-পেপার  বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা      ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেশি জরুরি : সালেহউদ্দিন আহমেদ      হঠাৎ লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত গ্রাম-শহর      উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলি, নিহত ২       চীন বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদার করবে: পরিবেশ উপদেষ্টা      




দেশটাকে সাজানোর এখনই সুবর্ণ সময়
মো. জামাল তালুকদার
Published : Tuesday, 13 August, 2024 at 3:59 PM
একটা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানের এখনই সুবর্ণ সময়। একঘেয়েমিতে বাংলাদেশ হাফিয়ে উঠেছিলো। রাষ্ট্রযন্ত্রের সব স্থানেই নানা অনিয়মে মানুষ হয়ে উঠেছিলো অস্থির। ঠিক এই সময়ই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশের স্বপ্নকে ধারন করে অগ্রসর হয়েছে। পথ চলাটা এত সহজ ছিলো না। 

যে কারণে বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করতে হয়েছে। খুব কম দিনেই এ বিজয় চলে এসেছে শিক্ষার্থীদের হাতে। এখন সময় এই দেশটাকে রাঙিয়ে দেয়ার। ইতিমধ্যেই শিক্ষার্থীরা রাস্তা-ঘাট, বাজার সহ নানা স্থাপনা পরিচ্ছন্ন করে প্রশংসিত হয়েছে।  এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। চমৎকার ভাবে বাজার মনিটরিং করছে তারা। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করছে, ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে। হেলমেট পড়ে মটর বাইক চলানেরর জন্য পরামর্শ দিচ্ছে। ছাত্রদের এই কাজগুলো দেখে অভিভাবকসহ জনসাধারণ তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। বাংলাদেশের আকাশে এখন স্বস্তির বাতাস বইছে। এই আনন্দকে ধরে রাখতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের দেখানো কাজগুলোকে আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিচ্ছন্নতা সহ যে কাজগুলো শিক্ষার্থীরা করে দেখাচ্ছে তা কিন্তু তারা সব সময় করতে পারবে না। কেননা তাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে হবে। তাদের জন্য অপেক্ষা করছে তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে স্ব-স্ব যোগ্যতায় তারাই অবদান রাখবে এদেশের জন্য। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে পথচলা। ৮৪ বছরের প্রবীণ নোবেল বিজয়ী বহুমাত্রিক জ্ঞানের অধিকারী ড. ইউনুস নবীনদের নিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন। আমরা সহযোগিতা করলেই কিন্ত একটা দৃশ্যমান রেজাল্ট পাবো। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আমরা অনেক কথা বলি। বক্তব্যে ঝড় তুলি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না। শিক্ষার্থীরা যেভাবে দেখালো এ থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। আমার শহর, আমার গ্রাম, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি আমি পরিস্কার রাখি তাহলেই কিন্তু পরিচ্ছন্নতার সুন্দর বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাবো। 

বিশে^র উন্নত দেশগুলোতে লক্ষ করলেই দেখা যায় রাস্তায় কোন রকম থুথু বা ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না। থুথু ফেলা আইনত অপরাধ। পরিবেশের কথা ভেবে সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। সিঙ্গাপুরে প্রকাশ্যে থুথু ফেললে জরিমানার বিধান রয়েছে। লন্ডনে টিস্যু, সিগারেট অথবা থুথু ফেললে এ অপরাধে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। এই রকম আরো বিভিন্ন দেশে প্রকাশ্যে থুথু ফেলার অপরাধে শাস্তির বিধান রয়েছে কিন্তু আমরা এটাকে ব্যপারই মনে করি না। অথচ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশেও কিন্তু এই বিষয় গুলোর আইন আছে। হয়তো প্রচারণা এবং প্রয়োগের অভাবে আমরা অনেকেই জানিনা এই আইনের বিষয়গুলো। প্রচারণা এবং আইনের প্রয়োগ থাকলে নাগরিক সমাজ এগুলো শিখবে এবং এই কাজগুলোর প্রতি অভ্যস্থ হয়ে পরবে। এক সময় দেখা যাবে মানুষ যত্রতত্র ময়লা ফেলছে না। যার যার জায়গা থেকে যদি প্রত্যেকেই সচেতন হয়ে যায় আর যদি যত্রতত্র আবর্জনা না ফেলে তাহলেই আমাদের গ্রাম, শহর, নগর, বন্দরসহ সব স্থানেই পরিচ্ছন্নতার একটি মনোরম দৃশ্য ভেসে উঠবে। আমরা ইচ্ছে করে কাগজ, খাদ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, পলিথিনসহ নানান বর্জ্য যত্রতত্র ফেলে রাখি। অন্যান্য দেশে কাগজ, কোমল পানীয়সহ কোন বর্জ্যই তারা রাস্তায় ফেলে না। নির্ধারিত স্থানে ফেলে। ইচ্ছে করলেই আমরা এটা করতে পারি। এটা কঠিন কোন কাজ নয়। শুধু মানসিকতার বিষয়। আমরা কলা খেয়ে রাস্তার মধ্যেই ফেলে দিই কলার খোশা। সামান্য চিন্তাও করি না, এই পিচ্ছিল খোশার জন্য কারোর জীবন সংকটাপন্ন হতে পারে। পলিথিনের অবাধ ব্যবহার হচ্ছে। অথচ পলিথিনের জন্য মাটি তার উর্বরতা হারাচ্ছে। এই বাংলাদেশের মাটি এতই উর্বর যেকোন স্থানে যেকোন বীজ ফেলে রাখলেই তা থেকে চারা জন্মায়। পলিথিন বাংলাদেশের উর্বর মাটির জন্য মারাত্মক একটি হুমকি স্বরূপ।  পলিথিন এমন একটি বর্জ্য যা মাটিতে মিশতে প্রায় চারশত বছর সময় লাগে। 

সুতরাং এই পলিথিন থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। পলিথিন সবচেয়ে বেশী কাঁচা বাজারে ব্যকহৃত হচ্ছে। মাছ, চাউল তরিতরকারী সহ সব ধরণের কাঁচা বাজারেই কিন্তু পলিথিনের অবাধ ব্যবহার হচ্ছে । লক্ষ্য করলেই দেখা যায় কাঁচা বাজারগুলো পানি আর কাদার মিশ্রণে বিশ্রি অবস্থা ধারণ করে আছে। এগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভয়াবহ। এগুলো থেকেও রোগ জীবাণু ছড়ায়। ময়লা পানি জমে থাকার কারণে ডেঙ্গু মশা সহ অন্যান্য মশা ডিম পেরে মশার বিস্তার করছে এবং ডেঙ্গু ঝুঁিক পর্যায়ক্রমে বেড়েই চলেছে।  

বাংলাদেশের আইনে আছে ড্রেন বা পানিতে বর্জ্য ফেললে বা খোলা জায়গায় বর্জ্য পোড়ালে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রেখে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১’ করেছে সরকার। কিন্তু এই আইন সম্পর্কে সচেতনতা এবং আইনের প্রয়োগ না থাকায় হরহামেশায় এই আইন লংঘন করছে জনসাধারণ। তাছাড়াও সিটি কর্পোরেশন এবং বড় শহরগুলোতে বর্জ্য ফেলার নির্ধারিত ডাস্টবিন থাকলেও উপজেলা শহর, পৌরসভা ও ইউনিয়ন গুলোতে এই ডাস্টবিন ব্যবস্থা নাই বললেই চলে। নামমাত্র দু একটা ডাস্টবিন শুধুই লোক দেখানোর শামিল। আর সময় ক্ষেপন না করে এখনই উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের হাট-বাজারগুলোতে অত্যাবশকীয়ভাবে ডাস্টবিন বসাতে হবে পাশাপাশি ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ময়লা অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। আফসোসের বিষয় হলো আমাদের দেশে যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়। ইচ্ছে মত যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করে না কেবল নাকে রুমাল দিয়ে চলে যায়। এই অচলায়তন ভাঙ্গতে হবে। পরিচ্ছন্নতার আলোয় ঝলমল করে দিতে হবে আমাদের সোনার বাংলাকে। কোটা সংস্কার থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা এখন রাষ্ট্র সংস্কারে নেমেছে। এই সুযোগটি কোনভাবেই হাতছাড়া করা উচিত হবে না। পথ, ঘাট, মাঠ পরিচ্ছন্ন হলে পর্যায়ক্রমে সারাদেশই পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে। 

অতএব এই সুযোগে রাস্তায় কোন ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না-এমন শপথ আমাদের সবাইকে নিতে হবে। আমরা জানি, ইসলাম ধর্মমতে পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। তাছাড়াও  আশপাশ পরিচ্ছন্ন থাকলে মনও প্রফুল্ল থাকে। সুতরাং এই সুবর্ণ সময়েও যদি আমরা আমার শহরকে পরিচ্ছন্ন করতে না পারি, তাহলে আর সুযোগ নেই। এ সুযোগ হাতছাড়া করা মুটেই উচিৎ হবে না। হাতে হাত ধরে চেষ্ঠা করতে হবে। শিশুদের মাঝে সচেতনতা তৈরী করতে হবে যাতে করে তারা যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে।  

মূলত সম্মিলিতভাবে চেষ্টা না করলে এই দেশটাকে সাজানো সম্ভব নয়। সবাই মিলে চেষ্টা করলেই এর সুফল আমরা সবাই পাবো। প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যদি একটি করে ঝুড়ি রাখা হয় ময়লা ফেলার জন্য তাহলে এই প্রতিষ্ঠানের সবাই ঝুড়িতেই ময়লা ফেলবে। এই রকমভাবে যেকোন প্রতিষ্ঠানে যদি এই ব্যবস্থা করা হয় পাশাপাশি গণসচেতনতা তৈরী করা হয় তাহলে কিন্তু সবার মাঝেই একটা পরিবর্তনের ছোঁয়া বিরাজ করবে। সবাইকে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে যেন কেউ যত্রতত্র ময়লা না ফেলে এবং গুরুত্ব দিতে হবে যানবাহন গুলোর ফিটনেসের দিকেও। অন্যান্য দেশের যানবাহন গুলো একদিকে যেমন নজর কারে অন্যদিকে দক্ষ চালকের ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু আমাদের দেশে একেতো গাড়ীর ফিটনেস নেই এর উপর আবার সহকারী চালক দিয়ে গাড়ী চালানো হচ্ছে। অনেকে আবার মূল চালক দাবি করলেও অনেকের লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স বিহীন চালক, লাগাম ছাড়া ঘোড়ার মত। যে কারণে আমাদের দেশে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা নিজেরা যদি সচেতন হই, প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে যদি চেষ্টা করি তাহলেই সম্ভব একটি পরিচ্ছন্ন দেশ গড়ে তোলা। পরিচ্ছন্নতায় ঝলমল করুক আগামীর বাংলাদেশ এই প্রত্যাশা। 

লেখক: মোঃ জামাল তালুকদার 
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সাধারণ সম্পাদক,
দুর্গাপুর প্রেসক্লাব, পোঃ সুসং
দুর্গাপুর, নেত্রকোনা।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]