অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন ২০২৩ প্রণয়নের উদ্যোগকে দেশবিরোধী ও সংঘর্ষিক উল্লেখ করে আইনটি প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের (বিভিএ) নেতারা। পাশাপাশি তারা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশিদের বিচারের দাবিও জানান।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিভিএ’র নেতারা এ দাবি জানান। বিভিএ’র সভাপতি ডা. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা। এ সময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যানিমেল হেল্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক নীতিশ চন্দ্র, ভেটেরিনারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার্ড ডা. গোপাল চন্দ্র, বিসিএস লাইভস্টোক এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ডা. মো. শহিদুল ইসলাম, ডা. মাহবুব আলম, বর্তমান মহাসচিব ডা. মো. আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব ডা. মো. মনজুর কাদের প্রমুখ। এদের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের সচিবের বিচার দাবির এই কর্মসূচিতে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে অধিদপ্তরের ‘পিপিআর রোগ নির্মূল এবং ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ’ প্রকল্পের পরিচালক ডা. অমর জ্যোতি চাকমাসহ একাধিক কর্মকর্তা অংশ নেন।
বিভিএ নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল এক্টের আওতায় সারাদেশে প্রাণিসম্পদের অগ্রগতি ও উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সচিব একজন এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী গ্রাজুয়েট হওয়ায় সম্পূর্ণরূপে পক্ষপাতদুষ্ট ভাবে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের নিমিত্তে জনস্বার্থ বিরোধী এবং অপ্রয়োজনীয় এই কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বিভিএ নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, দেশের প্রায় ১৫ হাজার ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েট, ৫০ হাজার পোল্ট্রি খামারি ও ৪০ লাখেরও অধিক ডেইরী খামার মালিকরা বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশ বিরোধী বিতর্কিত ও সাংঘর্ষিক অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন ২০২৩ প্রত্যাহার করতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিভিএ’র মহাসচিব মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে আমরা কোনো প্রভাব বিস্তার করি না। আমরা উন্নয়নে ভূমিকা রাখি।
উন্নয়নের স্বার্থেই আইনের বিরোধিতা করছি। প্রাণীর সব বিষয় বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইনে বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। কাজেই নতুন করে হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন বিভ্রান্তিকর ও জনস্বার্থবিরোধী। দেশবিরোধী ও অপ্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রত্যাহারের পাশপাশি পক্ষপাতদুষ্ট সচিব ড. নাহিদ রশিদের অপসারণ দাবি করছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ কোনো সচিব কিংবা দ্বায়িত্বশীল ব্যাক্তি যেন না করেন সেজন্য ড. নাহিদ রশীদের অবসরোত্তর বিচার দাবি করছি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নিরাপদ প্রাণিজাত খাদ্য উৎপাদন, রপ্তানি বাড়ানো, পশু পালনের সঙ্গে জড়িতদের আইনি সুরক্ষা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যুগান্তকারী এ আইনকে স্বাগত জানিয়েছে এ খাতের রংশ্লিষ্টরা। তবে আইনটির বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ)। সংবাদ সম্মেলনে নতুন আইনের বিরোধিতার যুক্তিসঙ্গত কারণও তারা উপস্থপনা করতে পারেননি। ঘুরে ঘুরে ফিরে তাদের জবাব ছিল, এক আইন থাকতে আরেক আইনের দরকার নেই। এটি দেশ বিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী সিদ্ধান্ত।