সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক এমপি সাদেক খান ও ঢাকা উত্তর সিটির ২৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সলিমুল্লাহ সলুকে ফের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি.এম ফারহান ইসতিয়াক রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এদিন সকালে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর উত্তরা পূর্ব থানার হত্যা মামলায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে আসামির আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র জনতার সঙ্গে গত ৫ আগস্ট অংশ নেন ভুক্তভোগী মো. ফজলুল করিম। এদিন বিকেলে আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। রাতে আইসিইউতে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আনোয়ার হোসেন আয়নাল গত ২১ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যা মামলা করেন।
এছাড়াও এদিন মোহাম্মদপুর থানার এক হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি সাদেক খান ও ঢাকা সিটির সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সলিমুল্লাহ সলুর পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে আসামিদের রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করে তাদের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী ও তরিকুল ইসলাম। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে প্রত্যেক আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন শুনানিকালে পলকের আইনজীবী ফারাজানা ইয়াসমিন রাখি আদালতকে বলেন, আসামি পলকের ৫৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এর ভেতর ৩৪ দিন রিমান্ডে ছিলেন তিনি। একজন মানুষকে আর কতবার রিমান্ডে নেয়া যায়। আসামি রিমান্ডে থাকার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাকে বারবার রিমান্ডে নিয়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে নিছক কারণে বারবার রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে৷ এ সময় বিচারক বলেন, এ মামলায় তো আর রিমান্ডে নেওয়া হয়নি।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, রিমান্ড তো মাত্র শুরু হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হত্যার ষড়যন্ত্র। গণভবনে বসে হত্যা বা হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তারা। ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন পলক। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার উদাহরণ টেনে পিপি বলেন, ১৫ আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা মামলাও নয়, প্রথমে জিডি করা হয়। এই জিডির ৪ লাইন টেনে ২১ বছর পর কত মানুষকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাই ক্রিমিনাল মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামির রিমান্ড প্রয়োজন।
মামলাটির সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভ্যানচালক ইনছান আলী (২৬) ভ্যান নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা মিস্টার হোসেন গত ১৩ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় ২৬৬ জনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
নতুন মামলায় কামাল মজুমদার, মামুনসহ গ্রেফতার ৪। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রিক রাজধানীর বিভিন্ন থানার পৃথক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ চার হেভিওয়েট আসামিকে। গ্রেফতার দেখানো অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, ডিবির রমনা জোনের সাবেক দুই ডিসি মো. মশিউর রহমান ও মোঃ জুয়েল রানা।
বুধবার সকালে আসামিদের ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি.এম ফারহান ইসতিয়াকের আদালতে উপস্থিত করে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা। অন্যদিকে আসামিদের গ্রেফতার না দেখাতে শুনানি করেন তাদের আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালাত তাদের বিভিন্ন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখান।
এর মধ্যে সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে মিরপুর থানার পৃথক দুই হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এছাড়াও হাজারীবাগ থানার এক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে।
অন্যদিকে ধানমন্ডি থানার একই হত্যা মামলায় ডিবির রমনা জোনের সাবেক দুই ডিসি মো. মশিউর রহমান ও মো. জুয়েল রানাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।