ই-পেপার শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
শিরোনাম: মোবাইল ইন্টারনেট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামীকাল : পলক       মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ও ফেসবুক চালুর বিষয়ে যা জানা গেলো       নেপালে বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ১৮       আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সব নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী       খুলেছে অফিস-আদালত, গণপরিবহন সংকটে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি        বান্দরবানে কেএনএফের দুই সদস্য নিহত       লাখাইয়ে রোপা আমন ধানের বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত কৃষক      




কৌশলী কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে নামতে চায় সরকার বিরোধীরা
বায়েজীদ মুন্সী
Published : Saturday, 10 February, 2024 at 10:57 AM
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বয়কটকারী রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে জনসম্পৃক্ত আন্দোলনে নামতে চাইছে। সরকারপতনসহ সমসমায়িক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বহুমুখী কর্মসূচী দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে তারা। ব্যালটের পরিবর্তে রাজপথে আন্দোলনে জনসমর্থণ দেখাতে দলগুলো কৌশলী তৎপরতা শুরু করেছে। সাধারন জনগণের দাবি আদায়ের ব্যানারে দেশব্যাপী দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করার ইঙ্গিতও রয়েছে সরকার বিরোধী দলগুলোর অদূর ভবিষ্যত আন্দোলনের রূপরেখায়।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং গণসংহতি আন্দোলনসহ আন্তত ১০টি পুরানো রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে পৃথক আলাপচারিতায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বড় কয়েকটি দল রোজার আগেই রাজপথ দখলে নেওয়ার কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামতে চাইছে। রাজধানীসহ সারাদেশে কর্মসূচীতে বিএনপির সংগে যুগপৎ আন্দোলনের কথাও বলেছেন একাধিক দল। বাকি দলগুলো নিজ নিজ দলীয় কর্মসূচী দিয়ে রাজনীতিতে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান প্রমান করে দেবেন বলেও জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে।

সরকার পতনের এক দফাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গত কয়েক বছর ধরে হরেক কর্মসূচী দিয়েও লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। দেশী বিদেশী সমালোচনা এড়িয়ে সরকার নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সরকার গঠন করেছে।

সদস্য সমাপ্ত নির্বাচনে ভোটের হার ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই নতুন করে উপজেলা নির্বাচনের ডামাঢোল বাজাতে শুরু করেছে। ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ সারাদেশে ২৩৩টি উপজেলায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় সরকারের অন্যতম বৃহৎ এ নির্বাচনেও সরকার বিরোধীরা অংশ না নেওয়ার কথা বলছেন। এতে উদ্বিগ্ন রাজনীতি সচেতন বিশিষ্ট নাগরিকরা সংশ্লিষ্ট দলগুলোর অস্তিত্ব শঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে এখনো দলের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা বলেছি অংশগ্রহণ করবো না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়াই রজনীতি নয়। রাজনীতি হচ্ছে একটি নীতি। নীতির বিসর্জন দিয়ে রাজনীতি হয় না। যে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, ভোটে বিশ্বাস করে না তাদের সাথে নির্বাচনে যাওয়া অর্থহীন।

চলমান রাজনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, দেশের এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে এবং আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। জনসম্পৃক্ত আন্দোলন করবো। পাশাপাশি ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সংগ্রামকে বেগবান করবো।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাঁচ বারের নির্বাচিত সাংসদ জয়নাল আবেদীন ফারুকের মতে, শুধু নির্বাচন করলেই যে সে সুসংগঠিত দল বিষয়টি তা নয়। 

জনগনের পক্ষে কথা বলা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরাই একটা রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করে যাবো। যতোই অত্যাচার, অবিচার আসুক। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে না আনা এবং সরকারের বিদায় ঘন্টা না বাজা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

এদিকে দলীয় নিবন্ধন হারানোসহ নানা কারণে রাজনীতিতে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামীও নিজেদের সুসংগঠিত করে রাজপথের আন্দোলনে শক্তি সামর্থ্য প্রমাণে কৌশলী কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে চলার আভাস দিয়েছে। প্রসঙ্গতঃ দলটির সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম জানেিয়ছেন, সাময়িক সঙ্কটে জামায়াতে ইসলামী হতাশ নয়। জামায়াত একটি গণমুখী, আদর্শবাদী ও কল্যাণকামী রাজনৈতিক সংগঠন। 

তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সরকার দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং আইনের শাসনকে ধ্বংস ও পদদলিত করেছে। রাজনৈতিক ময়দানকে প্রতিপক্ষমুক্ত রাখতে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে আটক করে রেখেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই।

নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি সরকার বিরোধী আন্দোলনে থাকা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ- এর মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ বলেন, দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে আন্দোলন সংগ্রাম অবহ্যাত থাকবে। নতুন নতুন কর্মসূচী দিয়ে জনসমর্থনে সফলতা আসবেই।

সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা গণসংহতি আন্দোলন এর প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, রাজপথে নামার ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা হলো সরকারের দমন-পীড়ন। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জনগণের শক্তিকে সংগঠিত করাই আগামীতে আমাদের চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে এই রাষ্ট্রশক্তি যেভাবে সরকারের পেছনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন দমনে কাজ করছে এবং যেভাবে মিথ্যা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মানুষকে বিপথগামী করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে আমরা আমাদের মতাদর্শিক, চিন্তাগত লড়াইও করব। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের যে আন্দোলন, সেগুলোর মধ্যে আমাদের যতটুকু সাংগঠনিক শক্তি আছে, সেটাকে সংহত ও বৃদ্ধি করে আন্দোলনকে একেবারে গোড়া থেকে গড়ে তোলার জন্য আমরা সর্বশক্তি নিযুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৮টি দল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ ১৫টি দল নির্বাচন বর্জন করেছে। বর্জন করা বাকি দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ। নির্বাচন ও সরকার বিরোধী এসব দলকে নিয়ে বিএনপি সামনে কিভাবে পথ চলবে রাজনৈতিক সচেতন মানুষের নজর এখন সেদিকেই।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, যারা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন রাজনৈতিক শুদ্ধাচার ও নৈতিক অবস্থানের মানদন্ডে এই জয়টি সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে। অন্যদিকে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তারাও দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের টিকে থাকার চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে কি না এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। তবে যৌক্তিক কারণ থাকা সত্ত্বেও বিএনপিকে এটাও ভাবতে হবে যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নিজেদেরকে সংকটে ঠেলে দিয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন থেকে সরে থাকলে রাজনৈতিক দল হিসেবে সংকট তো কিছুটা বাড়বেই। আবার দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও কোন লাভ নেই। সবকিছু মিলিয়ে ভবিষ্যত অন্ধকার। এ বিষয় থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনার কোনো বিকল্প নাই। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা, সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান। আমাদের এখন দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানের কথা চিন্তা করতে হবে। এগুলো সমাধান করতে না পারলে আমরা আরও সংকটের দিকে ধাবিত হবো।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]