ই-পেপার শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
শিরোনাম: পিকে হালদারসহ ১৪ জনের মামলার রায় ৮ অক্টোবর       ইতালিতে ফ্লাইওভার থেকে বাস ছিটকে পড়ে নিহত ২১       প্রবল বৃষ্টিতে সিকিমে আকস্মিক বন্যা, ২৩ ভারতীয় সেনা নিখোঁজ       জলবায়ু তহবিলে ‌‌`সমানভাবে' অর্থায়ন চাইলেন শেখ হাসিনা        আবারও বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম        বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অন্যদল ক্ষমতায় আসলেও বাসন্তীদের ভাগ্যের কোন পররিবর্তন হয়নি: প্রধানমন্ত্রী        দেশকে ধ্বংস করার জন্য দুই-তিনটা রাজনৈতিক দল ষড়যন্ত্র করছে: আইনমন্ত্রী       




আখেরী চাহার সোম্বা কী এবং এর গুরুত্ব
Published : Wednesday, 13 September, 2023 at 2:13 PM
আখেরী চাহার  সোম্বা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি স্মারক দিবস। আখেরী চাহার  সোম্বা আরবী ও ফার্সি ভাষার শব্দসমষ্টি। আখেরী আরবি শব্দ, যার অর্থ শেষ এবং চাহার শব্দটি ফার্সি, যার অর্থ চতুর্থ এবং ফার্সি শোম্বা শব্দটির অর্থ বুধবার। তার মানে, এক কথায় তিনটি শব্দের অর্থ দাড়ায়, শেষ চতুর্থ বুধবার।

আখেরি চাহার সোম্বা পালিত হয় শুকরিয়া দিবস হিসেবে হিজরি সনের সফর মাসের শেষ বুধবার মুসলিম বিশ্বে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্মারক দিবস হিসেবে পবিত্র আখেরি চাহার শোম্বা পালিত হয়।

আখেরি চাহার সোম্বা কী?

প্রকৃত সত্য হচ্ছে যে, সফর মাসের শেষ বুধবার হচ্ছে, ‘আখেরি চাহার সোম্বা’। এটা কী? তা অনেকেই জানেন না। এ সম্পর্কে সিরাত গ্রন্থ থেকে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাহলো-

সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) গ্রন্থে ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক উল্লেখ করেছেন, সফর মাসের শেষ দিকে কিংবা রবিউল আউয়াল মাসের শুরুর দিকে হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার অন্তিমযাত্রার অসুখ হয়। ওই সময়ে এক মধ্যরাতে তিনি গিয়েছিলেন বাকিউল গারকাদ (জান্নাতুল বাকি) কবরস্থানে। সেখানে মৃত ব্যক্তিদের জন্য তিনি মোনজাত করেন। শেষ রাতে ঘরে ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওই অসুখ যে তার মৃত্যুযাত্রার সূচনা ছিল, তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।

হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার মুক্ত ক্রীতদাস হিবার কথোপকথন থেকেও বিষয়টি সুস্পষ্ট। মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মধ্যরাতে বাকিউল গারকাদ কবরস্থানে যান, তখন হিবাও সেখানে গিয়েছিলেন। হিবা বলেন, মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখে বললেন, ‘আমাকে দুটো বিকল্পের একটি পছন্দ করতে বলা হয়েছে-

১. এই জগতের সব সম্পদের ধণভান্ডারের চাবি ও দীর্ঘজীবন অথবা

২. বেহেশত, আমার আল্লাহর দিদার এবং তাৎক্ষণিক বেহেশত।’

হিবা বলেন, ‘আমি বললাম, আপনি প্রথমটি পছন্দ করেন।’

তিনি বললেন, ‘আমি দ্বিতীয়টি পছন্দ করেছি।’ অর্থাৎ মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে আল্লাহর দিদার লাভকে বেছে নিয়েছেন। আর এরই পরিপেক্ষিতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে ওই অসুখে তার জীবনাবসান হবে, তা তার অজানা ছিল না।

এ অসুস্থতায় আবিসিনিয়া থেকে ওষুধ এনে খাওয়ানো হলেও তাঁর অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। তিনি কিছুক্ষণ ভালো থাকলেও পরবর্তী মুহূর্তেই তিনি জ্ঞান হারাতেন। এ অবস্থায় নবি পরিবারের সদস্য ও সাহাবিরা তার বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দেন।

ওই নিরাশার মধ্যেই একদিন তিনি আশার আলো জ্বালালেন। এক সকালে তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন। অনেকটা সুস্থ স্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। সাত কুয়ার পানি দিয়ে তিনি গোসল করেন। হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা এবং দুই নাতি হাসান  ও হোসেন রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরের খাবার খান।

এই খবর মদীনার সকল স্থানে ছাড়িয়ে পড়লো। অনেক সাহাবী এই খবর পেয়ে আনন্দে আত্মাহারা হয়ে গেলেন। কেউবা দাস মুক্ত করে দিলেন। কেউবা উট দান করলেন। কেউবা বহু দান-সাদকা করলেন। সাহাবীরাও অনেকে রাব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়ার নামাজ ও দুআ করলেন।

বর্ণিত আছে যে, এই খুশিতে সাহাবাদের মধ্যে- হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু পাঁচ হাজার, হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সাত হাজার, হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু তিন হাজার দিরহাম এবং হজরত আবদুর রহমান বিন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু ১০০ উট দান করেন।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার এক বর্ণনা থেকেও জানা যায় যে, সফর মাসের শেষ বুধবার মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হঠাৎ সুস্থ হয়ে ওঠেন। যদিও দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে নামতে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওই ঘটনাকে অঞ্চলভেদে কিছু মুসলিম প্রতিবছর স্মরণ করেন। সফর মাসের শেষ বুধবার বিশ্বনবি সুস্থ হয়ে ওঠেছেন বিধায় পারসিক মুসলিমরা এর নামকরণ করেন ‘আখেরি চাহার সোম্বা’।

বিশ্বনবির অুস্থতা কী ছিল?

আখেরি চাহার সোম্বার আগে আমাদের বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অসুস্থতা ভোগ করেছিলেন তা নিয়ে দুইটি বিবরণ পাওয়া যায়-

১. ইবনে ইসহাকের বর্ণনা মতে, হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাকিউল গারকাদ কবরস্থান থেকে ফিরে প্রচণ্ড শিরপীড়ায় আক্রান্ত হন।

২. ইবনে হিশামের বর্ণনা মতে, হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার অন্তিমযাত্রায় প্রচণ্ড মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন।

মূলত প্রচণ্ড শিরপীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণেই হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসহ্য মাথাব্যথা অনুভব করেন। ওই মাথাব্যথা এতটা মারাত্মক ছিল যে, তিনি তার অন্তিমযাত্রার অধিকাংশ সময় অজ্ঞান ছিলেন। কখনও একটু সুস্থ হলেও আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন।

আখেরি চাহার সোম্বা পালন করতেই হবে এমনটি নয়; তবে এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করারও কিছু নেই। তাছাড়া প্রত্যেক আরবি মাসেই রয়েছে সুন্নাত ইবাদতের দিকনির্দেশনা। আবার আছে সাপ্তাহিক ইবাদতের দিকনির্দেশনা। যা পালনে রয়েছে অনেক মর্যাদা ও সাওয়াব। যেমন-

প্রত্যেক সপ্তাহে জুমআর দিনের ইবাদত। সোম ও বৃহস্পতিবারে রোজা পালন। আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত আমল ছিল প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল রোজা রাখা। যাকে আইয়ামে বিজের রোজা বলা হয়ে থাকে।

তাই বালা-মুসিবত, রোগ-শোক থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে মুসলিম সমাজ এ দিবসটি গোসল, দোয়া, মিলাদ-মাহফিল, জিকির-আজকার, দরূদের মাধ্যমে ভাল ও উত্তমপন্থা হিসেবে পালন করে থাকে। ওয়াজিব ও জরুরি হিসেবে নয়। ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী সৈয়দ আজিজুল হক শেরে বাংলা (রা:) “জাওয়াহেরুল কুনুজ” কিতাবের ৫ম খন্ডের ৬১৬ পৃষ্ঠার বরাতে স্বীয় রচিত “ফতোয়ায়ে আজিজীতে উল্লেখ করেন সফর মাসের শেষ বুধবার সূর্যোদয়ের পূর্বে গোসল করা উত্তম। আর সূর্যোদয়ের পর দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা ভাল ও সাওয়াবের কাজ।

ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, যে ব্যক্তি আখেরী চাহার সোম্বার দিন দু’রাকাত নফল নামায আদায় করবে আল্লাহ তাকে হৃদয়ের প্রশান্তি দান করবেন। মাহে সফরের শেষ বুধবার নফল নামায, দোয়া-দরূদ পড়া, কলা পাতায়/কাগজে আয়াতে শেফাসমূহ লিখে গোসল করা এবং আয়াতে সালামসমূহ লিখে পানিতে দিয়ে তা পান করা ভাল ও উত্তম আমল। এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে বাধা নেই।

সুতরাং সফর মাসের বিশেষ কোনো ঘটনা বা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে পক্ষ-বিপক্ষ মতভেদ না করাই উত্তম। হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণে নেক আমল ও ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করলেই মিলবে অনেক সাওয়াব।

এই দিনটি সম্মন্ধে অনেকেই না জানার ফলে দ্বিধা দ্বন্ধের ভেতরে থাকেন। তাই ক্ষুদ্র এ আলোচনা। 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নেক আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]