প্রকাশ: বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৬:৫৬ পিএম (ভিজিটর : ২৫০)
সম্প্রতি ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এর যে সকল সংশোধনীর প্রস্তাব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক প্রকাশ করেছে, সেখানে শহরের বাসযোগ্যতা, ধারণক্ষমতা, নাগরিক সুবিধাদি, পরিবেশ প্রাধান্য পায়নি। মূলত ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই বারবার ড্যাপ সংশোধন করা হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। বুধবার, আইপিডি আয়োজিত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পর্যালোচনা বিষয়ক অনলাইন অনুষ্ঠানে, যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল, কোন স্বার্থে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এর বারবার সংশোধনের উদ্যোগ : আইপিডি'র পর্যবেক্ষণে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ব্যবসায়ী ও স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে ড্যাপ (২০২২-৩৫) চূড়ান্ত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে দুইবার ড্যাপ সংশোধন এর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ড্যাপ সংশোধন প্রক্রিয়ায় রাজউকের কতিপয় কর্মকর্তা ও পেশাজীবীদের এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। বাসযোগ্যতার তলানিতে থাকা ঢাকা শহর থেকে ব্যবসায়িক মুনাফা ও গোষ্ঠীস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার সংস্কৃতি জুলাই গণ অভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশে কাম্য ছিল না। এই প্রবণতা চলতে থাকলে যানজট-দূষণে স্থবির ও অবাসযোগ্য হয়ে পড়া ঢাকা আরও নিশ্চল হয়ে পড়বে। এ থেকে উত্তরণের জন্য পরিকল্পনাগত টেকসই কৌশল ও পন্থা কাজে লাগিয়ে জনস্বার্থ, বাসযোগ্যতা, জনস্বার্থ ও পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়েই ড্যাপের প্রয়োজনীয় পরিমার্জনা করতে হবে।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে আইপিডি'র পক্ষ থেকে পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ড্যাপ সংশোধনে রাজউকের সংশোধনীতে ভবনের আকার-উচ্চতার বাড়ানোর প্রস্তাবনা ছাড়া অন্য কিছু আসেনি। বন্যা প্রবাহ এলাকা, জলাভূমি, কৃষিজমি রক্ষার বিষয়টি উপেক্ষায় থেকেছে। আমরা বলে এসেছিলাম, আবাসন ব্যবসায়ী ও কিছুসংখ্যক পেশাজীবিরা ড্যাপ বাতিল বা স্থগিতের আবেদন করছে শুধুমাত্র ভবন নির্মাণে বেশি এফএআর (ফার) মান বাড়ানোর জন্যেই। আমাদের সেই শংকাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ড্যাপ সংশোধনে প্রস্তাবিত এরিয়া ফার ও ব্লকভিত্তিক ফার মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাসযোগ্য শহর নির্মাণে পরিকল্পনার ব্যকরণ অনুসরণ করা হয়নি। ফলে ড্যাপে প্রস্তাবিত সংশোধনীসমূহ ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতাকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। এসময় বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, পরিকল্পনাবিদ রাকিবুল রনি, স্থপতি আমিনুল ইসলাম ইমন, পরিবেশকর্মী আমিরুল রাজিব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর প্রমূখ। এসময় আইপিডি'র পক্ষ থেকে বলা হয়, বড় শহরের জনঘনত্ব সাধারণত একরপ্রতি ১০০-১০০ জন বা প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৫ - ৩০ হাজার হয়। এই জনঘনত্বও শহরের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু নগর এলাকায় থাকে, যা শহরের প্রান্তের দিকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। চূড়ান্ত ড্যাপে ঢাকার অপরিকল্পিত এলাকা জিনিজিরা'র জনঘনত্ব কাঠাপ্রতি পরিবারসংখ্যা ১.২ বা একরপ্রতি ১৫০ দেয়া থাকলেও ১৮ নভেম্বর এ রাজউক প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ১৫০ শতাংশ বেড়ে কাঠাপ্রতি পরিবারসংখ্যা ৩.০ বা একরপ্রতি প্রায় ৩৫০ জন প্রস্তাব করা হয়েছে। এই এলাকার আগে প্রস্তাবিত এফএআর মান ১.৩ থেকে ১৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রস্তাব করা হয়েছে ৩.৩। একইসাথে ওয়েবসাইটে আপলোডকৃত প্লটভিত্তিক ফার সূচকে এ-৩ (ফ্ল্যাট ও এপার্টমেন্ট বাড়ি) ক্যাটাগরির ফার মানসমূহ যেভাবে অপরিপক্কভাবে কেটে দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে, তা দুরভিসন্ধিমূলক। ব্লক ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক ফার বোনাস সাধারণত ১৫ - ২০ শতাংশ হয়ে থাকে। অথচ রাজউক এলাকাভিত্তিক ফার মান এর তুলনায় ব্লকভিত্তিক ফার মান ৯০ - ১২০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রস্তাব করেছে, যা বৈশ্বিক পরিকল্পনা কৌশলের সাথে সাংঘর্ষিক। এভাবেই অনেক এলাকারই ফার মান অযাচিতভাবে বেড়েছে। ফলে এসব এলাকার বাসযোগ্যতা আরো সংকটে পড়বে বলে মনে করে আইপিডি।