প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩, ৩:১২ পিএম (ভিজিটর : ৩০৬)
উপকূলীয় অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে মিঠা পানির খাল। সুপেয় পানি এবং মৎস সম্পদ আহরন ও যোগাযোগের মাধ্যমেও ছিলো এসব খাল। জলাবদ্ধতার দূরীকরণ, পানি নিষ্কাসন, সেচ সুবিধা বৃদ্ধিতেও খালগুলো মূখ্য ভুমিকা পালন করে থাকে। কালের পরিক্রমায় খালগুলো তাদের স্বরুপ প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। যথাযথ পরিচর্যা,অযত্নে,অবহেলায় খালগুলো দিনদিন ময়লার ভান্ডারে পরিনত হচ্ছে। যে খালগুলো থেকে মানুষ প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতো তা দিন দিন আরো সংকুচিত হচ্ছে। দেশের প্রায় সব জেলাতেই ছোট বড় অনেক খাল রয়েছে, তেমনি উপকূলীয় জেলা নোয়খালী জেলার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মিলেমিশে আছে নানান খাল। নোয়াখালী জেলার নামকরণের পিছনেও "নতুন খাল" এর বর্ণনা শোনা যায়।
সম্প্রতী নোয়াখালী জেলার পুরাতন দুটি খাল 'দত্তের হাট খাল' এবং 'বসুরহাট খালে'র দূষণ, দূষণের কারণ,দূষনের ফলে ক্ষতি সমূহ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক "বায়োডারভারসিটাস্" জার্নালে। গবেষণাপত্রে খাল দুটির সামগ্রিক পরিস্থিতি উঠে আসে। গবেষণা পত্রটিতে অপরিকল্পিত নগরায়ন, আবাসিক এলাকা,হাসপাতাাল, কল কারখানার দূষিত বর্জ্য পদার্থ এবং পাশ্ববর্তী পথের ক্ষতিকর ময়লা-আবর্জনা দূষনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি ওশানোগ্রাফী বিভাগের চেয়ারম্যান ও কোস্টাল প্লাঙ্কটন ল্যাবরেটরীর প্রধান গবেষক নাজমুস সাকিব খান বলেন, বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে আমাদের জলাধার গুলোর যত্ন, সংরক্ষন এবং পুনরুদ্ধারের বিকল্প নেই। অনেকদিন ধরেই আমরা নোয়াখালীর উপকূলীয় খাল গুলোর পানির গুনগত মান এবং ক্ষুদ্র জলজ শৈবাল এবং জুওপ্লাঙ্কটনের ওপর গবেষণা করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় বসুরহাট এবং দত্তের হাট খাল দুটো নিয়ে আমাদের প্রাথমিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে দত্তেরহাট খালটি প্রায় বিপন্ন, অন্যদিকে বসুরহাটের খাল খুবই ক্ষীণভাবে স্রোতশীল।
অপরিকল্পিতভাবে খালে আবর্জনা ফেলার দরুন খালের পানি প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটছে এর ফলে পানিতে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস জমে ক্ষতিকর শৈবাল দূষণ ঘটছে। ক্ষতিকর শৈবাল দূষণ খালের অক্সিজেন মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং বিষাক্ত এ্যামোনিয়া বাড়িয়ে মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রানীর জন্য হুমকি তৈরি করে। ক্ষতিকর শৈবাল সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে নিঃসৃত প্রাণঘাতী সায়ানোটক্সিন(ক্ষতিকর পদার্থ) পানির গুনাগুণ নষ্ট করে পানিতে দূর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
শৈবাল দূষণের জন্য সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত পদার্থ জিওসমিন,মিথাইলিসোবরনিওল পানিতে, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রানীর শরীরে বিষাক্ততা ও দূর্গন্ধ সৃষ্টি করে। এমন বিষাক্ত শৈবাল দূষণের জন্য খালের পানি পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
তিনি আরো বলেন, খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে ক্ষতিকর শৈবাল( সায়ানোব্যাকটেরিয়া,ইউগ্লেনোফাইট) এর বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। পানির গুনাগুন স্বাভাবিক থাকলে খালগুলো থেকে প্রাকৃতিক ভাবে মৎস আহরনের পাশাপাশি খাঁচায় মাছ চাষ ও ঝিনুক চাষ করাও সম্ভব। যথাযথ পুনরুদ্ধার এবং পরিচর্যার মাধ্যমে খালগুলোতে জীবন ফিরিয়ে আনার জন্য অতিশীঘ্রই সরকারের মনোযোগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।