দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলি উপজেলার মাঠজুড়ে এখন কৃষকদের মুখে হতাশার ছাপ। কয়েকদিনের টানা বৈরী আবহাওয়া, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে পাকা সোনালী আমন ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপজেলার হাজারো কৃষক। পরিশ্রমে ঘাম ঝরানো ফসল এভাবে নষ্ট হতে দেখে তারা এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়া। কখনো ঝড়ো হাওয়া, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি। এর প্রভাবে হিলি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ধানক্ষেতে পানির স্তর বেড়ে গেছে। ধানের গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে।
বোয়ালদাড় ইউনিয়নের কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, ধান কাটা শুরু করতেই এমন আবহাওয়া শুরু হলো। বাতাসে ধান পড়ে গেছে মাটিতে, এখন কেটে ঘরে তোলা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। শ্রমিক খরচ বেড়ে গেছে, তবুও ঠিক মতো শুকাতে পারছি না।
একই এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, যদি দ্রুত রোদ না ওঠে, তাহলে কাটা ধান শুকানো সম্ভব হবে না। ভেজা অবস্থায় ঘরে তুলতে গেলে ধান পচে যাবে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।”
এমন চিত্র দেখা গেছে হিলি উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নে। কৃষকরা বলছেন, এক মৌসুমের এই ধান বিক্রি করেই তারা পরিবারের প্রয়োজন মেটান, ঋণ পরিশোধ করেন। কিন্তু এবার আবহাওয়ার কারণে সেই আশা ভঙ্গ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার কয়েকজন কৃষক জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে এখন সেই ধানই নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে নিচু জমির ফসল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত ও বাতাসে উপজেলার কিছু এলাকায় আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিদর্শন করছেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যাতে কৃষকরা অন্তত কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন।
এদিকে, কৃষকদের আশঙ্কা যদি আবহাওয়া আরও কয়েকদিন খারাপ থাকে, তবে ধানের গুণগত মান নষ্ট হবে, ফলে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাবে না।
এখন হিলির কৃষকরা একটাই প্রত্যাশা করছেন, আকাশটা যেন দ্রুত পরিষ্কার হয়, সূর্যের তাপ ফিরে আসে। কারণ রোদেলা দিনের অপেক্ষাতেই নির্ভর করছে তাদের সারা বছরের পরিশ্রমের সার্থকতা ও পরিবারের ভবিষ্যৎ।