বিএনপির অর্থদাতা তকমা দিয়ে দেশের অন্যতম ট্রান্সপোর্ট ও স্টিল খাতের প্রতিষ্ঠান এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলীকে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন তিনি নিজেই। তাঁর দাবি, বিগত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তাঁকে বিএনপির অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে একের পর এক মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। সেই সুযোগে তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য দখল ও লুটপাট করা হয়।
আজ শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর মগবাজারের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ আলী এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। এরশাদ আলীর অভিযোগ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তাঁর ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতি, নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং রাজশাহীর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, এই চারজন প্রভাবশালী ব্যক্তি তাঁর প্রতিষ্ঠান দখল ও লুটপাটে জড়িত। তাঁদের সহযোগিতা করেছে তৎকালীন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কয়েকজন কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে, এরশাদ আলী বলেন, আমাকে বিএনপির অর্থদাতা বানিয়ে ৪২টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আমার প্রধান কার্যালয়, বাসা, ট্রাক, গুদাম, স্টিল কারখানা সব জায়গায় হামলা চালিয়ে শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরশাদ আলী জানান, তিনি ১৯৯২ সালে পারিবারিক ব্যবসা থেকে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথমে ‘শাহ মখদুম ট্রান্সপোর্ট’ নামে একটি পরিবহন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যার মাধ্যমে দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্য পরিবহন করতেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সিস্টার কনসার্নের মাধ্যমে গড়ে তোলেন ‘এরশাদ গ্রুপ’। এই গ্রুপে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয় এবং দেশ-বিদেশে বেশ কিছু পুরস্কারও অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি।
তাঁর দাবি, ২০১০ সালের পর রাজনৈতিক কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু হয়। কলাবাগানের নাসির ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত প্রধান কার্যালয় দখল করে নেয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি। ধানমন্ডির বাসভবন দখল করে নেয় তাদের সহযোগী গোল্ডেন খোকন। সোনারগাঁ ও ডেমরার দুটি স্টিল মিল দখল করে নেয় শামীম ওসমানের সহযোগী আজিজুর রহমান আজিজ।
সম্প্রতি দর্শনা সীমান্ত থেকে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হন ওই আজিজুর রহমান আজিজ। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, গুম ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান এরশাদ আলী। তিনি বলেন, আজিজের বাহিনী এখনো এলাকায় সক্রিয়। তাদের হাতে নির্যাতিত অনেকেই এখন মুখ খুলছে। আমরা আদালতের কাছে অনুরোধ করছি যেন আজিজের জামিন না হয়, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়।
এরশাদ আলী অভিযোগ করেন, অতীতে তাঁকে একাধিকবার মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে এবং বড় অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়েছে। ২০১৭ সালে তিনবার তাকে তুলে নিয়ে ৫০ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়, দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বলেন, এরশাদ আলীর বিরুদ্ধে দায়ের করা অনেক মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব মামলার অনেকগুলো এখনো বিচারাধীন। এরশাদ আলী বলেন, দীর্ঘ কারাবাস ও নির্যাতনের কারণে আমার শারীরিক অবস্থাও মারাত্মকভাবে অবনতি হয়েছে। আমার ৮০ শতাংশ কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। ডায়াবেটিস ও লিভারের জটিল রোগে ভুগছি। তবুও আমি হাল ছাড়িনি। ন্যায়বিচার পেলে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে চাই।