প্রকাশ: শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫, ১২:১৫ পিএম (ভিজিটর : ৭৫)

গণহত্যার বিচারের পাশাপাশি মৌলিক সংস্কারের দাবি জোড়ালো করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। একই সঙ্গে সামনে এসেছে সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবি। পাশাপাশি সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারী দিচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। অপর দিকে হঠাৎ করে সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জোরালো করাকে জাতীয় নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন বিএনপির নেতারা। নির্বাচন নিয়ে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া নিয়ে আবারো এক ধরণের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে সংস্কার ও পি আর পদ্ধতি নিয়ে জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের জোরালো অবস্থান নেয়া, বিপরীতে পিআর পদ্ধতির বিরুদ্ধে বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকায় জাতীয় নির্বাচন আদৌ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে হবে কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরনের নেতিবাচক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছিল, গতমাসে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর ধারণা করা হয়েছিল সে সংশয় কেটে গেছে।
গতকাল শুক্রবার সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ভালো নির্বাচনের জন্য মৌলিক বিষয়ে কার্যকর সংস্কার জরুরি। তিনি বলেন, আমরা সবসময় মবের ঘোর বিরোধী। মব ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয়েছে। এখন দেশে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে কিসের নির্বাচন? এজন্য আগে নির্বাচনের পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। এই পরিবেশ তৈরির জন্যই সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে। তাই আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন করতে হবে। এর আগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর পদ্ধতি ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনকে গ্রহণ করবে না। একই অনুষ্ঠানে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরও একই দাবি তোলেন। তিনি জানান, আনুপাতিক হারে নির্বাচনের জন্য কয়েকটি দল ছাড়া সবাই একমত। আর সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানান ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। এদিকে উত্তরবঙ্গ সফররত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান রচনা বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নেব না এবং সেই নির্বাচন জনগণের নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে মৌলিক সংস্কারের জন্য কার্যক্রম চলছে, জুলাই সনদ এ মাসে হওয়ার কথা। সেই সনদ আদায়ের জন্যই আমরা রাজপথে নেমেছি। তবে সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির দাবি জাতীয় নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি যারা করেন, তাদের দাবির পেছনে দেশে জাতীয় নির্বাচন ব্যাহত বা পেছানোর ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন জটিল প্রক্রিয়া। এ পদ্ধতিতে জনগণ জানবে না তাদের এমপি কে, কীভাবে হলো। এলাকার উন্নয়নের জন্য তারা কার কাছে দাবি করবে? সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া চলমান বিষয় মন্তব্য করে তিনি জানান, আগামী সংসদের সদস্যদের সংবিধান সংস্কারের অধিকার আছে। সংবিধান ধর্মগ্রন্থ না, যা একবারেই ঠিক করে ফেলতে হবে। এছাড়া আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিকে বিএনপির বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক যখন প্রত্যাশা পূরণের অপেক্ষায়, তখনই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি করে মহাসমাবেশ। এদিকে মৌলিক সংস্কার ছাড়া যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রিফাত রশিদ। গতকাল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের কবর জিয়ারত শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় নির্বাচনী সংস্কার ছাড়া টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলেও জানান রিফাত। এছাড়া সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন চারটি জোট ও ৩৫টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘জাতীয় সংস্কার জোট’। সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘জুলাই সনদ, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সবাই মিলে ফ্যাসিস্টদের বিদায় করে দেশে পরিবর্তন এনেছি। তাই এখানে কোনো বিভাজন করা ঠিক হবে না। তাই আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন।