গেল ২৭-মে পূর্ব শক্রুতার জেরে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি জরুন এলাকায় রাত ১২টার সময় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুত্বর আহত হন নাসির উদ্দিন পালোয়ান (৯০) ও তাঁর পরিবারের ৮ সদস্য।
দীর্ঘ ১ মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে বিধাতার কাছে হারমানলেন। গেল বুধবার রাত ১১টার দিকে তিনি উত্তরার শিপ-ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ খবরে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারেও চলছে শোকের মাতম।
বৃহস্পতিবার (৩রা জুলাই) গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে নাসিরউদ্দিন পালোয়ানের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানান, ওই হামলায় একই পরিবারের আরো ৮ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতরা বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে নিহতের পরিবারের দাবী এ ঘটনার ১ মাস পর কোনাবাড়ি থানায় হত্যার চেষ্টা মামলা রুজু হলেও জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মামলার আসামিরা হলো, কোনাবাড়ি থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো.বাবুল হোসেনের ছেলে মো. ওয়াসিফ সালিম (২২), কোনাবাড়ি জরুন এলাকার শহিদুল মিয়ার ছেলে পাভেল (৩০), একই এলাকার রমযান আলীর ছেলে মো. মিনহাজ শেখ (২৫), কুদ্দুসনগর জরুন পেয়ারাবাগান এলাকার রফিক মোল্লার ছেলে মো. ফজলে রাব্বী (২৭), জরুন এলাকার রূপা মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিন মিয়া (৪৬), একই এলাকার মৃত মোহাম্মদ খাঁনের ছেলে বিপ্লব খাঁন (৪০), সিয়াম (২২) পিতা বাঙ্গা মিয়া, নাওফিল রাব্বী (২৩) পিতা ও সাং অজানা জেলা সিরাজগঞ্জ, রাহিম (১৮) পিতা অজানা মাতা শারমিন সাং জরুন, সিহাফ (২৭) পিতা এরশাদ আলী, হাবিব (৪০) পিতা মৃত শফিজ উদ্দিন, আশিক (২২), জিসান (২৩), পিতা মোকলেছুর রহমান জেলা বরিশাল, নাজমুল (২০) পিতা অজানা গোপালপুর টাঙ্গাইল, আমির হোসেন (২৬) জেলা টাঙ্গাইল, বর্তমান ঠিকানা কোনাবাড়ি জরুন।
মামলার বাদী নিহতের ছেলে মো. শাহ আলম পালোয়ান এজাহারে উল্লেখ করেন, অচেনা আরো ১৪ থেকে ১৫ জনের একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। পূর্ব শক্রুতার জেরে গেল ২৭ জুন রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বেআইনী জনতাবদ্ধে ধারালো দা, হকিস্টিক, লোহার রড, ও বাঁশের লাঠি সোটা নিয়ে বসত বাড়িতে প্রবেশ করে।
এরপর ১নং আাসমি ওয়াসিফ সালিম এবং ৫নং আাসামি সালাউদ্দিন মিয়া অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে। ওয়াসিফ সালিম এবং সালাউদ্দিনের হুকুমে সকল কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নাসিরউদ্দিন পালোয়ান (৯০), তাঁর বড় ছেলে আক্তার পালোয়ান (৫৪), লুৎফর পালোয়ান (৫০), ছোট ছেলে শাহ আলম পালোয়ান (৪৮), নাতিন শারমিন (২৭), নাতী শাহরিয়া (১৭) সহ পরিবারের ৮জনকে হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারী ভাবে মারপিট করতে থাকে।
এসময় নাসিরউদ্দিন পালোয়ানের মাথার ডান পাশে হত্যার উদ্দেশ্যে দা দিয়ে স্বজোরে কোপাতে থাকে সন্ত্রাসীরা। দায়ের কোপে নাসিরউদ্দিন পালোয়ানের মাথার খুলি উঠে যায়। পূর্ব শক্রুতার জেরে একই পরিবারের ৮জনকে এলোপাথারীভাবে দেশীয় অস্ত্রদ্বারা আঘাত করে এবং বাড়িতে লুটপাট করে তাঁরা চলে যায়।
হামলা শিকার হয়ে গুরুত্বর জখম হয়ে পড়ে থাকেন সবাই। এসময় তাঁদের ডাক চিৎকারে আশেপাশে লোকজন এসে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেলে ভর্তি করেন।
তাজউদ্দিনের চিকিৎসকেরা নাসিরউদ্দিন পালোয়ানের অবস্থার অবন্নতি দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিলে ছেলেরা উত্তরা শিব ইন্টারন্যাশনাল হসপিতালে তাকে ভর্তি করান। সেখানে দীর্ঘ লাইফ সাপোর্টে এক মাস থাকার পর গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে নাসিরউদ্দিন পালোয়ানের মৃত্যু হয়।
জিএমপি’র কোনাবাড়ি থানার ওসি মো.সালাউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানালেন, প্রথমে ৩০৭ হত্যার চেষ্টা মামলা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে সংজোন করে তা ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা রুজু করা হবে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়ছে।