জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় অভিবাসীদের মধ্যে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। নাগরিকত্ব নিয়ে এই জটিল আইনি সিদ্ধান্তের মানবিক প্রভাব অনুধাবনের চেষ্টায় বহু অভিবাসী আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
শুক্রবার, সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে রায় দিলেও মূল মামলার কেন্দ্রীয় বিষয়—জন্মসূত্রে নাগরিকত্বে আইনি সীমা—নিয়ে সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের নাগরিকত্বের অধিকারের বিষয়ে স্পষ্টতা না থাকায় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
হিউস্টনে বসবাসরত ২৪ বছর বয়সী কলম্বিয়ান আশ্রয়প্রার্থী লোরেনা, যিনি সেপ্টেম্বরে সন্তান প্রসব করবেন, শুক্রবার সকালের সংবাদ দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, 'খুব একটা স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। আমি বুঝতে পারছি না।'
লোরেনা আশঙ্কা করছেন, তার সন্তান কোনো দেশের নাগরিকত্ব নাও পেতে পারে। 'আমি জানি না তাকে আমার দেশের নাগরিকত্ব দিতে পারব কি না, আর জানিও না তাকে আমার আশ্রয় মামলায় যোগ করা সম্ভব কি না।'
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যাতে বলা হয়—যদি কোনো শিশুর বাবা বা মা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হন কিংবা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা না হন, তাহলে সেই শিশুকে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলেও নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এই আদেশ তিনটি জেলা আদালত দ্বারা স্থগিত করা হলে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়।
সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, ট্রাম্পের নীতিটি ৩০ দিনের মধ্যে কার্যকর হতে পারে, তবে নিম্ন আদালতগুলোতে মামলা চলার সুযোগ এখনো খোলা রয়েছে। ইতোমধ্যে, ম্যারিল্যান্ডে বাদীপক্ষ একটি সংশোধিত মামলা দায়ের করেছে, যাতে একটি ‘জাতীয় শ্রেণি’ নির্ধারণ করে এই নীতির বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে।
নন-প্লেইন্টিফ ২৮টি রাজ্যে এই সীমাবদ্ধতা কার্যকর হতে পারে, যা দেশব্যাপী এক ‘অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর অবস্থা’ সৃষ্টি করবে বলে সতর্ক করেছেন অভিবাসন নীতি বিশ্লেষক ক্যাথলিন বুশ-জোসেফ।
তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত হাসপাতাল বা ডাক্তারদের কী এখন প্রতিটি শিশুর নাগরিকত্ব যাচাই করতে হবে?”
এই সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন রাজ্যে আইনজীবী ও অধিকারকর্মীরা গর্ভবতী অভিবাসী ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে আতঙ্কিত ফোন কল পেতে শুরু করেছেন।
ওহাইও ইমিগ্র্যান্ট অ্যালায়েন্সের পরিচালক লিন ট্রামন্টে জানান, “একজন এশীয় ভিসাধারী ফোন করে বলেছিলেন, তিনি তার শিশুর সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন।” কারণ, ওহাইও ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া রাজ্যগুলোর মধ্যে নেই।
ইউনাইটেড উই ড্রিম’ নামক অভিবাসী অধিকার সংগঠনের মুখপাত্র জুলিয়ানা ম্যাসেডো বলেন, “এই সীমাবদ্ধতা বছরে আনুমানিক ১ লাখ ৫০ হাজার নবজাতককে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করবে।”
সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছে, মামলার দু’টি বাদী সংগঠন—মেরিল্যান্ডভিত্তিক সিএএসএ এবং আশ্রয়প্রার্থী অ্যাডভোকেসি প্রকল্প-এর সদস্যদের ওপর নিম্ন আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। কিন্তু অন্য রাজ্যে অবস্থানরত কেউ কীভাবে এই সংগঠনে যোগ দিয়ে নাগরিকত্ব বাঁচাতে পারবেন, তা অনিশ্চিত।
ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা এবং সিএএসএ সদস্য, সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাস করা বেটসি বলেন, “এটা সেই শিশুদের লক্ষ্য করে যাদের জন্মই হয়নি এখনো।”
লুইজিয়ানায় বসবাসরত হন্ডুরাসের আশ্রয়প্রার্থী নিভিদা জানান, তাঁর এক বন্ধু যিনি গর্ভবতী এবং বৈধ কাগজপত্র নেই, ফোন করে উদ্বিগ্নভাবে জানতে চেয়েছেন, “আমার বাচ্চা যদি লুইজিয়ানায় জন্মায়… তাহলে সে কি নাগরিক হবে?”
এই পরিস্থিতি অভিবাসী পরিবারগুলোর জন্য এক গভীর অনিশ্চয়তা ও মানবিক সংকট তৈরি করেছে।