ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শুক্রবার ● ১১ জুলাই ২০২৫ ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার শুক্রবার ● ১১ জুলাই ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




চারদিকে বিশ্বাসঘাতক, তবুও সিংহের মতো লড়ছে ইরান
সুজন দে:
প্রকাশ: সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ৭:৩১ পিএম  (ভিজিটর : ২৯৯)
নিজেদের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হারিয়ে গর্জে উঠেছে ইরান সেনা বাহিনী। প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে প্রতিটি ইরানির হৃদয়ে। সেই আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে তেল আবিবসহ ইসরায়েলের অনেক শহর। ইসরায়েলের শুক্রবারের আকস্মিক হামলার কঠিন প্রতিশোধ নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের পরাশক্তি ইরান। 

পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের বহু সামরিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে তেহরান। ধ্বংস করা হয়েছে আয়রন ডোম। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের মুহুর্মুহু আঘাতে বেশির ভাগ বাসিন্দাকেই আশ্রয় নিতে হচ্ছে বাংকারে। 

পরিস্থিতি মোকাবিলায় খাবার পানি ও শুকনা খাবার মজুদ করতে বাধ্য হচ্ছে ইসরায়েলের বাসিন্দাদের। অথচ ইরানে হামলা চালানো আগে এমনটি কল্পনা করেনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাসভবনও বাদ পড়েনি ইরানের হামলা থেকে। তেহরানের পাল্টা আঘাতে হতবিহ্বল ও ভীত হয়ে পড়েছেন ইসরায়েলিরা। এক কথায় সকল সংশয় দূর করে সাহসিকতার সঙ্গে সিংহের মতো লড়ছে ইরান। তবে ইরান লড়ছে পুরোপুরি একা। 

পাশপাশের অসংখ্য মুসলিম দেশ থাকলেও তারা ইরানিদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না, বরং বেশ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশের আকাশপথ ব্যবহার করে ইরানে হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া রয়েছে নিজ দেশের বিশ্বাসঘাতক। যে বিশ্বাসঘাতকের কারণে ইরান হারিয়েছে তার দেশপ্রেমিক শীর্ষ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাকে। 

জানা গেছে, ইরানের ভেতরে লুকিয়ে থাকা মোসাদের ছদ্মবেশী সশস্ত্র গোয়েন্দা দল, একঝাঁক সশস্ত্র ড্রোন এবং সাধারণ যানবাহনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা বিস্ফোরক দিয়েই হামলা হয় ইরানের জেনারেলদের ওপর। টার্গেট কিলিং চালানো হয় ইরানের ঘুমন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তি ও স্থাপনার ওপর। কোনো রকম নিরাপত্তা নেয়ার সুযোগও পাননি ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। 

কিছু বুঝার আগেই নিজ দেশের মধ্যেই লুকিয়ে থাকা ইসরাইলি গুপ্তচরদের হাতে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয় ইরানের সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে শীর্ষ ছয় কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীকে। কয়েক দশক ধরেই ইরানে হামলার হুমকি দিয়ে আসছে ইসরায়েল। অবশেষে গত ১৩ জুন গভীর রাতে হামলা হয়। ঘুমন্ত ইরানি সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের প্রধানরা ছিলেন লক্ষ্যবস্তু। নাম দেয়া হলো অপারেশন রাইজিং লায়ন।

এদিকে ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের মোট ৪ সদস্যকে আটক করেছে ইরান। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্যও জব্দ করা হয়েছে। খবর ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনার। ইরানের পুলিশ কমান্ডের মুখপাত্র সাঈদ মোনতাজের আল-মাহদি জানিয়েছেন, তেহরান প্রদেশের রে কাউন্টির ফাশাফুইয়েহ জেলায় এই দুই এজেন্টকে শনাক্ত করে আটক করা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যা ৭.৩০টায় যখন এই রিপোর্ট লেখা হচ্ছে, ঠিক তখনও ইরান-ইসরায়েলের মাঝে টানা চতুর্থ দিনের মতো হামলা-পাল্টা হামলা চলছে। সর্বশেষ ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ চার শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যার তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল। সোমবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। 
রোববার রাতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমির জন্ম ১৯৬১ সালের ১১ জুলাই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আইআরজিসির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে তিনি এ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সুরক্ষা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এ হত্যাকান্ডকে ‘কাপুরুষোচিত অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, ইরান এই ঘটনার প্রতিশোধ নেবে। আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।

এর আগে ইরানের সেনাবাহিনী প্রধান, পুলিশ বাহিনী প্রধানসহ অন্তত ২০ জন শীর্ষ জেনারেলকে হত্যা করে ইসলায়েল। এছাড়া হত্যা করা হয় সেনা সদস্যসহ অন্তত ২০০ শতাধিক মানুষকে। মূলত ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় শুক্রবার অতর্কিতভাবে ইসরায়েল নগ্ন হামলা চালায়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চারপাশে বিশ্বাসঘাতকদের মোকাবিলা করেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলজুড়ে তান্ডব চালানো শুরু করে ইরান। টানা চার দিন ধরে ভয়হীনভাবে ইসরায়েলের প্রতিটি হামলার কড়া জবাব দিয়ে যাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। 

ইরান বাহিনীর তান্ডবে তেল আবিবের রাস্তায় ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেখানে উদ্ধারকারী ও সামরিক কর্মীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তল্লাশি চালাচ্ছেন। ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এমন দৃশ্য তৈরি হয়েছে। তেল আবিবের বাসিন্ধারা বিদেশি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকে তেল আবিব ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এত ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি আর কখনোই হয়নি। সেই সময় শহরটিতে স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছিল। 

বিদেশি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ইসরায়েলের শক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে চুরমার করে দিয়ে গত চার দিনে ইরান মোট ৩৭০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত এ হামলায় দেশটিতে অন্তত ২৪ জন নিহত ও ৫৯২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ইরানি হামলায় ইসরায়েলের অন্তত ৩০টি স্থানে আঘাত লেগেছে বলেও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে ইরানে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]