ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শুক্রবার ● ১১ জুলাই ২০২৫ ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার শুক্রবার ● ১১ জুলাই ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




তারেক রহমান, আসামি থেকে আরাধ্য জননেতা
সুজন দে:
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫, ৫:৩৬ পিএম  (ভিজিটর : ৩৬৪)
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ওয়ান-ইলেভেন সরকারের দায়ের করা অসত্য, হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার আসামি হয়ে চিকিৎসার নাম করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমান। এর আগের বছর ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। টানা দেড় বছর কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। 

মুক্তি পাওয়ার মাত্র ৭ দিনের মধ্যেই অসত্য মামলার আসামি হিসেবে এক প্রকার জোর করেই তৎকালীন সরকার তাকে মার্কিন যুক্তরাজ্যে পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে টানা ১৭ বছর বাধ্য হয়েই লন্ডনে প্রবাস জীবন-যাপন করছেন। কিন্তু এই ১৭ বছরে কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য, সংযম আর নানা ঘাত-প্রতিঘাত সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করে দলের কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি দেশের মানুষের কাছে নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। 

স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দূর প্রবাসে থেকেও নিজের দলকে যেমন ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন, তেমনি কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে বিএনপিকে গড়ে তুলেছেন সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল হিসেবে। ফলে যে তারেক রহমান ১৭ বছর আগে অসত্য মামলার আসামি হিসেবে নিজের মাতৃভ‚মি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, সেই তারেক রহমান এখন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির কোটি কোটি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কাছে আরাধ্য (যাকে আরাধনা করে পাওয়া যায়) জননেতা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছেন। সেই সঙ্গে অন্য সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের কাছে যেমন তারেক রহমান সমান জনপ্রিয়, তেমনি দেশের একটি বিরাট অংশের সাধারণ মানুষের কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তারেক রহমান। 

শুধু তাই নয়, গেলো বছরের ৫ আগস্টের আগের দিন পর্যন্ত যে রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মীদের মুখে মুখে থাকত তারেক রহমানের তীব্র সমালোচনা, ক্ষমতা হারানো সেই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখে গত দশ মাসে তারেক রহমানের সমালোচনা করে একটি বাক্যও বের হয়নি, বরং বিদেশে পালিয়ে থাকা দলটির বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও নেতার মুখে শোনা গেছে তারেক বন্দনা।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গেল বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর থেকেই দেশের রাজনীতির চালকের আসনে অধিষ্ঠিত হন তারেক রহমান। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরপরই লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন তারেক রহমান। সেই ভাষণে তারেক রহমান বলেছিলেন, পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয়। সুতরাং বিজয়ের এই আনন্দঘন মুহ‚র্তে শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় উদযাপন করুন। অনুগ্রহ করে কেই পতিশোধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। 

তারেক রহমানের সেই দিনের বক্তব্য দেশকে অনিবার্য সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে। যে মানুষটি প্রতিহিংসার শিকার হয়ে টানা ১৭ বছর নিজের দেশ ছেড়ে প্রবাস জীবন-যাপন করতে বাধ্য হয়েছেন, সেই মানুষটি তার দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতিহিংসামূলক আচরণ না করতে। তারপরও বিভিন্ন অপরাধ, অনৈতিক ও অসাংগঠনিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে নিজ দলের অগণিত নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। এই তালিকায় বাদ পড়েনি দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাও। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এই ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে দেশে-বিদেশেও বিএনপির ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।

বিগত দশ মাসে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত ধৈর্য, বিচক্ষণতার সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন তারেক রহমান। এই সময়ের মধ্যে নিজের রাজনৈতিক দলের কর্মীদের যেমন নিয়ন্ত্রণ করেছেন শক্ত হাতে, তেমনি সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বন্ধুত্ব দৃঢ় করেছেন তিনি। গেল রমজান মাসে নিজেদের মিত্র শক্তি হিসেবে পরিচিত প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের ইফতারে তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন। সেই সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন আগামীতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে সকল মিত্র শক্তিকে নিয়ে সরকার গঠন করবে বিএনপি। 

এর পাশাপাশি ৩১ দফার সমর্থনের ঢাকাসহ সারা দেশেই কর্মশালা করেছে বিএনপি। সেই কর্মশালায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ঢাকাসহ সারা দেশে অনুষ্ঠিত অগণিত সমাবেশ ও আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করেছেন তারেক রহমান। এছাড়া দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গত দশ মাসে বেশ কয়েকবার হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গেও মতবিনিময় করতে ভুল করেননি তারেক রহমান। নিজের দলের সমাবেশ-কর্মশালা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময়, পেশাজীবী সংগঠনের সমাবেশ ও অন্যন্য রাজনৈতিক দলের সমাবেশে দেয়া বক্তব্যের সময় তারেক রহমানের প্রতিটি বাক্যের শব্দচয়ন ছিল অসাধারণ ও আগামীর বাংলাদেশে বির্নিমাণের পথনির্দেশক। যে বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন ও আম্প্রদায়িক। হবে সাম্য-মৈত্রী, ঐক্য আর গ্রগতির বাংলাদেশ। 

লেখার শুরুতেই বলেছিলাম অসত্য মামলার আসামি হিসেবে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তারেক রহমান। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, নাশকতা, গ্রেনেড হামলা ও দুর্নীতির অভিযোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ৮০টি (দু-একটি কম বেশি হতে পারে) মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের আমলে ১৭টি মামলা দেয়া হয় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। বাকি মামলাগুলো দায়ের করা হয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। তবে মামলাগুলো হয়রানিমূলক ও মিথ্যা হওয়ায় সকল মামলা থেকেই তারেক রহমানে অব্যাহতি দেন আদালত।

তারেক রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরেই গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে এবং শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তবর্তীকালীন সরকার। বিচার, সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়ে যাত্রা শুরু করে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। শুরু থেকেই এই সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে আসছে বিএনপি। এই সময়কালে বিএনপির নেতারা সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করলেও তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মী সরকার বিব্রত হয় এমন সব ধরনের কর্মকান্ড থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। 

তবে সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, সংস্কার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানো, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেয়া, রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ ও কয়েকজন উপদেষ্টার পদত্যাগ ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। এসব বিষয় নিয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। শুরু থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে দলটি। 

কিন্তু ৬ জুন সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেন আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো দিন অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। এই ঘোষণায় চরম হতাশা ব্যক্ত করে বিএনপি। শুধু বিএনপি নয় দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনীতিতে দেখা দেয় সংকট। এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যায় আগামীর বাংলাদেশ। 

চারদিকে শুরু হয় নানা গুঞ্জন, দেখা দেয় নানা অশ্চিয়তা। তবে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল শুক্রবার লন্ডনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে দুই নেতা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেন ডিসেম্বরে নয়, নয় এপ্রিলের প্রথমার্ধে। ফেব্রুয়ারি মাসে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কেটে গেছে সকল শঙ্কা, আবারও আশার আলো ফুটেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। সাধারণ মানুষ ফেলেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। 





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]