চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী রেয়াজউদ্দিন বাজারে আতংকের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন আড়তদাররা। একের পর এক হামলা, লুটপাট, ভাংচুরের ও উচ্ছেদের হুমকিতে প্রতিনিয়ত তারা আতংককে সঙ্গী করে আড়ত চালিয়ে যাচ্ছেন। হামলাকারীরা প্রশাসনকেও তোয়াক্কা করছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে থানা পুলিশও আদালতের শরানাপন্ন হয়েও কোন কাজ হচ্ছেনা বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
জানা গেছে, রেয়াজউদ্দিন বাজারে দীর্ঘদিন ধরে আড়তদারী ব্যবসা পরিচালনা করছেন মোহাম্মদ মিন্টু সওদাগর। তার মালিকানাধীন দোকান ‘মেসার্স রফ বাণিজ্যালয়’ নিয়ে চলমান বিরোধে আদালতের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দোকানঘরের মালিক বারবার সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালিয়ে তাকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশি উপস্থিতি থাকলেও সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গিয়ে বারবার ফিরে এসে হামলা চালাচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগী।
প্রায় ১৮ বছর ধরে রেয়াজউদ্দিন বাজারে ‘মেসার্স রফ বাণিজ্যালয়’ নামে আড়তদারী ব্যবসা পরিচালনাকারী মিন্টু সওদাগর এই ব্যবসার মাধ্যমে তিনি স্থানীয় পাইকারি বাজারে একটি নির্ভরযোগ্য অবস্থান তৈরি করেন। দোকানঘরটি তিনি নিয়মিত মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে ভোগদখল করে আসছিলেন। তার দাবি, সময়মতো ভাড়া পরিশোধসহ দোকানঘরের মালিকের সব শর্ত যথাযথভাবে পালন করে তিনি দোকান চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই দোকানঘরের মালিক কোনো পূর্ব নোটিশ বা আইনি প্রক্রিয়া না মেনে, কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে নিয়ে দোকানে হামলা চালান।
মিন্টু সওদাগরের অভিযোগ, মোছাম্মদ ইসমত আরা রউফ, তার দুই ছেলে রাকিব রেজা ও আবদুর রাহাত তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দোকানের মালামাল ভাঙচুর করে, নগদ অর্থ লুটে নেয় এবং আমাকে ও কর্মচারীদের মারধর করে দোকান থেকে জোর করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনার পর মিন্টু সওদাগর স্থানীয় কতোয়ালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং পরবর্তীতে ২৩ মে ২০২৪ তারিখে আদালতের আশ্রয় নেন।
এদিকে গত বছরের ২৩ মে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি আদেশ জারি করেন, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মিন্টু সওদাগর তার পূর্বের অবস্থায় দোকানে ব্যবসা পরিচালনা করবে এবং তাকে বাধা দেওয়া যাবে না। আদালত এ সংক্রান্ত একটি স্থিতিবস্থার আদেশও জারি করেন।
কিন্তু আদালতের এই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দোকান মালিক পুনরায় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দোকানে হামলা চালান বলে অভিযোগ করেন ওই ব্যবসায়ী।
স্থানীয় আড়তদাররা জানান, পুলিশ এলে সন্ত্রাসীরা এলাকা ত্যাগ করে; কিন্তু কিছু সময় পরই তারা আবার ফিরে আসে এবং আগের মতোই ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ নিয়ে আশপাশের দোকানদার ও সাধারণ জনগণের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে রেয়াজউদ্দিন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ সওদাগর বলেন, একজন ব্যবসায়ীকে ইচ্ছে মতো দোকান থেকে বের করে দেওয়া যায় না। এটা একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। সময় দিতে হয়। তাছাড়া দোকানঘর মালিকের শর্ত পূরণ হলে ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদের কোনো সুযোগ নেই। এখন বিষয়টি আদালতের হাতে, সেখানে যা সিদ্ধান্ত হবে সেটাই চূড়ান্ত।
জানতে চাইলে রেয়াজউদ্দিন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলী জানান, দোকানে হামলা এবং ভাংচুরের খবর পেয়ে সমিতির লোকজন ছুটে গিয়ে মিন্টু সওদাগরকে উদ্ধার করে। এরপরও হামলা অব্যাহত থাকলে স্থানীয় কোতোয়ালী থানাকে অভিহিত করলে পুলিশ এসে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু শুনা যায় সন্ত্রাসীরা বারবার হামলা করে মিন্টুর ওপর। এ বিষয়ে বৈঠকের পরও কোন সুরাহা না হলে বিষয়টি আদালতে মামলার জন্য প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে। ব্যবসায়ী মিন্টু যাতে নিয়মিত তার ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে তারজন্য আদালত নিষেধাজ্ঞা জারী করে। যা এখনো বহাল রয়েছে। তিনি বলেন, জানতে পেরেছি সন্ত্রাসীরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিন্টু সওদাগরের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা হোক। তিনি যাতে সুন্দর ভাবে নিরাপদে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে। এলাকাবাসী এবং আশপাশের ব্যবসায়ীরা হামলা ও দোকান ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। একজন প্রতিবেশী দোকানদার বলেন, আমরা সবাই আতঙ্কে থাকি। আজ ওর দোকানে হামলা হয়েছে, কাল হয়তো আমাদের দিকেও চোখ পড়বে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত দ্রুত এই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা।
এ বিষয়ে কেতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ইতোমধ্যে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে স্থানীয়রা দাবি করছেন, হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে দ্বিধাগ্রস্ত।
মোহাম্মদ মিন্টু সওদাগর বলেন, আমি এখন আদালতের নির্দেশনার আশ্রয় নিয়ে দোকানে বসে আছি, কিন্তু প্রতিনিয়ত ভয় নিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমি চাই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে এবং আমার মতো একজন সাধারণ ব্যবসায়ীকে ন্যায়বিচার পায়।