ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বুধবার ● ১৮ জুন ২০২৫ ৪ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার বুধবার ● ১৮ জুন ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ঈদুল আজহা
‎মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: রবিবার, ১ জুন, ২০২৫, ৫:০১ পিএম  (ভিজিটর : ৭৯৪)
‎পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা ত্যাগ ও আত্মসমর্পণের মহান শিক্ষা দেয়। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে এই দিনটি আনন্দ ও উৎসাহের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। তবে আজকের প্রজন্ম—বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা—এই উৎসবের প্রকৃত তাৎপর্য ও কোরবানির মূল দর্শন কতটা হৃদয়ে ধারণ করছে, সেই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই কেবল উৎসবের বাহ্যিক রীতিনীতি পালনেই সীমাবদ্ধ থাকে। ঈদুল আজহার মূল বার্তা হচ্ছে আত্মত্যাগ, নিঃস্বার্থতা ও সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠা। এসব বিষয় শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনায় কতটা প্রতিফলিত হচ্ছে, তা জানার চেষ্টা করেছেন মাভাবিপ্রবি শিক্ষার্থী  মো: হ্নদয় হোসাইন।
‎শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের  অর্থনীতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের  শিক্ষার্থী তামান্না  মুন্নি  বলেন, “ঈদুল আজহা শুধু আনন্দ ও উৎসবের দিন নয়, এটি ত্যাগ, আন্তরিকতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিবেদনের সময়। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, কোরবানির পশুর মাংস বা রক্ত নয়, আল্লাহর কাছে পৌঁছে আমাদের তাকওয়া। এই শিক্ষা অনুযায়ী আমরা বুঝি, ঈদের অর্থনৈতিক দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ—যেখানে হালাল উপার্জন, ন্যায্য লেনদেন ও সমাজের সব স্তরের মানুষকে উপকারে আনা জরুরি।”
‎তিনি আরও বলেন, “এই সময়ে আমরা পশুর দামের ওঠানামা, খামারিদের পরিশ্রম এবং দরিদ্রদের জন্য কোরবানির গুরুত্ব অনুভব করি। একজন মুসলিম হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, ঈদুল আজহা কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি আমাদের ভোগ না করে ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামের এই শিক্ষা আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল হতে শেখায়।”
‎ঈদের আগের দিন ঘর ভরে ওঠে আনন্দ ও ব্যস্ততায়। বড়রা রান্নায়, ছোটরা খেলায়, মেয়েরা মেহেদি দেওয়ায় মগ্ন থাকে। ঈদুল আজহা শুধু উৎসব নয়, স্মৃতি ও মানবিকতার শিক্ষা, যেখানে ভোগ নয়, ত্যাগের মাধ্যমে পূর্ণতা পাওয়া যায়।
‎মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান  বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের  শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম  রাব্বি বলেন, “ঈদুল আজহা আমার কাছে শুধুই একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি ত্যাগ, মানবিকতা ও আত্মিক প্রশান্তির প্রতীক। কোরবানির মাধ্যমে আমরা আত্মত্যাগ, দান এবং দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর বাস্তব শিক্ষা পাই। এই উৎসব আমাদের মধ্যে সহানুভূতি ও সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে।”ঈদের সময় বাড়ি ফেরার অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। পরিবার, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটানো, ঈদের নামাজ আদায়, কোরবানি ও মাংস বিতরণের আনন্দ—সব মিলিয়ে ঈদ এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। গ্রামের বাড়িতে ঈদের সময় যে আন্তরিকতা ও পারিবারিক উচ্ছ্বাস দেখি, তা শহরের ব্যস্ত জীবনে পাওয়া যায় না।”
‎তিনি আরও বলেন, কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা যদি আমরা হৃদয়ে ধারণ করি, তাহলে সমাজে বৈষম্য কমবে এবং মানুষের মাঝে ভালোবাসা ও সহানুভূতি বৃদ্ধি পাবে। ঈদ তাই আনন্দের পাশাপাশি এক গভীর মানবিক শিক্ষা নিয়ে আসে।
‎বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের  ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো: ইথারুল ইসলাম বলেন“আমার কাছে ঈদুল আজহা মানে শুধুই আনন্দ নয়, বরং ত্যাগ, ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধের এক গভীর প্রকাশ। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে কোরবানির পশু কিনতে যেতাম—সেটা ছিল এক দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। ঈদের আগের দিন রাত জেগে প্রস্তুতি নেওয়া, আর সকালে একসঙ্গে ঈদের নামাজে যাওয়া—এই সবই এখন স্মৃতির অংশ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার পর থেকে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে, তাই ঈদের সময়টা কিছুটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে।”
‎তিনি আরও বলেন, “তবে হলে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে আমরা নিজেরাই ঈদ উদযাপন করি। একসঙ্গে রান্না করি, খাই, গল্প করি—এই আনন্দটাও বিশেষভাবে মনে গেঁথে থাকে। ঈদুল আজহার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে আত্মত্যাগ। এই শিক্ষাই আমাকে শেখায়—শুধু নিজের কথা না ভেবে, অন্যের দিকেও খেয়াল রাখতে। ছাত্রজীবনে আমি এই মূল্যবোধকে বাস্তবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করি।”
‎বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছে ঈদুল আজহা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়—এটি হয়ে ওঠে এক আত্মিক সংযোগের সময়। পরিবার থেকে দূরে থেকেও বন্ধুত্ব, সহানুভূতি আর ত্যাগের এই শিক্ষা তাদের মনে গেঁথে যায়। এই অনুভবগুলো শুধু ঈদের সময়েই নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ধাপে তাদের আরো সংবেদনশীল, দায়িত্বশীল এবং সহানুভূতিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
‎এই উৎসবের মর্ম উপলব্ধি করতে পারলে একজন শিক্ষার্থী কেবল ভালো ছাত্রই নয়, বরং একজন ভালো মানুষ হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে। আর সেটাই হয়তো ঈদুল আজহার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
‎চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান  বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের  শিক্ষার্থী মেহেরুন্নেসা জেরিন  বলেন,ঈদ মানেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, কিন্তু হলে থাকি বলে অনেক সময় বাড়ি ফেরা কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও চেষ্টা করি ঈদের কয়েকটা দিন যেন পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারি। ঈদুল আযহার একটা বিশেষ অনুভূতি আছে—কোরবানির সময়টা আমাদের আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়।”

‎কোরবানির মাংস বিতরণের মধ্যে যে সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ আর শ্রেণিগত বৈষম্য হ্রাসের শিক্ষা লুকিয়ে আছে, তা তরুণ সমাজের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। এই ঈদের মাধ্যমে আমরা যদি সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারি, সেটিই হবে ঈদের প্রকৃত সফলতা।”
‎সমাজে ইতিবাচক প্রভাব তৈরির সুযোগ ‎ঈদুল আজহা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠারও সুযোগ সৃষ্টি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা যদি ঈদের এই শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করে, তাহলে সমাজে একটি বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]