যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনকে ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের অস্থায়ী সুরক্ষা অবস্থা (টিপিএস) বাতিল করার অনুমতি দেওয়ার পর, এই আইনি সুরক্ষা হারানো প্রায় চার ডজন ভেনেজুয়েলান কর্মীকে ছুটিতে পাঠিয়েছে ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড। শুক্রবার এক বিবৃতিতে ডিজনি জানিয়েছে, কর্মীদের যাতে কোনোভাবে আইনের লঙ্ঘন না হয়, তা নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানজুড়ে ৪৫ জন কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হলেও তারা ডিজনির দেওয়া বিভিন্ন সুবিধা ও সুযোগ-সুবিধা পেতে থাকবেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা আমাদের সব কর্মীর স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যাণ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—বিশেষ করে যখন তারা পরিবর্তিত অভিবাসন নীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, যা তাদের বা তাদের পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।'
ছুটিতে পাঠানো কর্মীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ইউনিয়ন চুক্তির আওতায় কর্মরত ছিলেন। ফ্লোরিডার ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ডে ইউনিয়ন শ্রমিকদের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, কর্মীরা যদি চাকরি হারানোর এক বছরের মধ্যে বৈধ কর্মসংস্থান অনুমোদন উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে তারা আগের পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়েই পুনর্বহাল হতে পারবেন বলে জানান ইউনাইটেড ফুড অ্যান্ড কমার্শিয়াল ওয়ার্কার্স ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়নের লোকাল ১৬২৫-এর সেক্রেটারি-ট্রেজারার জুলি জারকোভিচ।
জারকোভিচ বলেন,এটি খুবই হতাশাজনক। ডিজনিকে খলনায়ক বানানো হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে তাদের করার কিছুই ছিল না।
তিনি বলেন, যদি ডিজনি তাদের ছুটিতে না পাঠাত, আর এরপর অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইসিই) ডিজনি ওয়ার্ল্ডে অভিযান চালাত, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতো।
সুপ্রিম কোর্ট সোমবার যে আদেশ দেয়, তা সান ফ্রান্সিসকোর একজন ফেডারেল বিচারকের পূর্ববর্তী রায় স্থগিত করে। সেই রায়ে ভেনেজুয়েলানদের টিপিএস বহাল রাখা হয়েছিল, যা গত মাসেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আদালত আদেশের কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি, যা জরুরি আবেদনগুলোর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক।
এই আদেশের ফলে প্রায় ৩,৫০,০০০ ভেনেজুয়েলান নাগরিক এখন বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়েছেন। টিপিএস-এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ব্যক্তিরা বৈধভাবে বসবাস ও কর্মসংস্থানের অনুমতি পান, কারণ তাদের নিজ দেশকে নিরাপদ মনে করা হয় না—প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা গৃহযুদ্ধের কারণে।
ডিজনি ব্যবস্থাপকরা কর্মীদের প্রথমে মৌখিকভাবে জানান, এরপর তাদের কাছে ই-মেইলে ছুটির বিস্তারিত পাঠানো হয়। এই সপ্তাহেই তারা শেষবারের মতো কাজ করেন, এবং কিছু কর্মীকে তাদের পরিচয়পত্র জমা দিতেও বলা হয়েছে, জানান ইউনাইট হিয়ার লোকাল ৭৩৭-এর ভেনেজুয়েলান শপ স্টুয়ার্ড অস্কার টিনেও। এই ইউনিয়ন ডিজনি ওয়ার্ল্ডের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করে।
টিনেও বলেন 'এই সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠান নিয়েছে নিজেদের ও কর্মীদের রক্ষায়', যিনি নিজেই রাজনৈতিক আশ্রয়ের মামলা জিতে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাস করছেন।
ডিজনি ওয়ার্ল্ডের প্রায় ৮০,০০০ কর্মীর মধ্যে ১৫-২০ শতাংশই ভেনেজুয়েলান। এদের মধ্যে কেউ কেউ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন বা টিপিএস ছাড়াও অন্য অভিবাসন সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন। তবে আরও উদ্বেগজনক হলো সেইসব কর্মীরা, যাদের টিপিএস এখনো শেষ হয়নি এবং যারা সুপ্রিম কোর্টের আদেশে সরাসরি প্রভাবিত হননি।
৪৯ বছর বয়সী এক ভেনেজুয়েলান নারী, যিনি ডিজনি ওয়ার্ল্ডের হোটেলের রান্নাঘরে কাজ করেন তিনি বলেন। 'আমরা এখানে এসেছি মুক্তির আশায়, ভয় ছাড়া একটি শান্তিপূর্ণ জীবন খুঁজতে। নিরাপত্তার কারণে তিনি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
তিনি জানান, ভেনেজুয়েলায় বিরোধীদলের সক্রিয় কর্মী হওয়ায় মৃত্যুর হুমকি পেয়ে তিনি ১০ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসেন। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় ও টিপিএস -এর জন্য আবেদন করেছেন এবং তার কর্ম-অনুমতিপত্র আশ্রয়ের সঙ্গে যুক্ত। আপাতত তিনি রান্নাঘরের সহকারী হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন।
ডিজনিকে নিয়ে তিনি বলেন, তারা আইন মেনে চলার চেষ্টা করছে। 'তাদের বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।'
এই সুপ্রিম কোর্ট মামলা ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক জরুরি আবেদনগুলোর মধ্যে সর্বশেষ, যার বেশিরভাগই অভিবাসন নীতি সংক্রান্ত এবং ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে। চলতি মাসেই সরকার আদালতের কাছে অনুরোধ করেছে, কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলার শত শত হাজার অভিবাসীর মানবিক প্যারোল সুবিধা শেষ করার অনুমতি দেওয়ার, যা তাদের বহিষ্কারের মুখে ফেলে দেবে।
ডিজনি ওয়ার্ল্ডের ইউনিয়নগুলোর একটি জোট এক বিবৃতিতে বলেছে, 'এই কর্মীরা—আমাদের সহকর্মী, বন্ধু ও প্রতিবেশী—ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির সাফল্য এবং মধ্য ফ্লোরিডার প্রাণবন্ত সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। কেউ যেন এমন পরিস্থিতিতে না পড়েন, যেখানে সবকিছু গড়ে তোলার পর হঠাৎ সব হারানোর ভয় নিয়ে বাঁচতে হয়।'