ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বুধবার ● ১৮ জুন ২০২৫ ৪ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার বুধবার ● ১৮ জুন ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




বিনিয়োগে স্থবিরতা
ব্যবসা-বণিজ্য সম্প্রসারণে ধীরগতি, চ্যালেঞ্জে অর্থনীতি
এসএম শামসুজ্জোহা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫, ১২:০৪ পিএম আপডেট: ২২.০৫.২০২৫ ১২:০৮ পিএম  (ভিজিটর : ২১৯)
বেশ কিছু দিন ধরেই মন্দাভাব বিরাজ করছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। বাড়ছে নানামুখী চাপ। বিনিয়োগে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নতুন ব্যবসা-বণিজ্য সম্প্রসারণেও ধীরগতি ভাব। এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা চেপে বসেছে ব্যবসা খাতে। এ রকম অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ দূরের কথা, বিদেশি বিনিয়োগও কমে আসছে। এতে করে বিনিয়োগ কম হওয়ার বিরূপ প্রভাব দৃশ্যমান হয়েছে অর্থনীতিতেও। নানা কারণে লেনদেনের ভারসাম্যহীনতায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। তথ্যমতে, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনো ঠিক হয়নি। সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। এসব কারণে একদিকে বিভিন্ন শিল্প খাতে চলমান বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমেছে, অন্যদিকে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারাও নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার উদ্বেগ ছাড়াও দেশের শুল্কায়ন ব্যবস্থার জটিলতা, দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি, মজুরি বৃদ্ধি, স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল কেনার জটিলতা, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানো সম্ভব হয়নি। নির্বাচিত সরকার ছাড়া বিনিয়োগের স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে না বলে মনে করছেন বহু বিনিয়োগকারী। এই পরিস্থিতি উত্তরণে বিদেশি বিনিয়োগ বাস্তবায়নে নজর দিতে বলছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে নেট ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে বাংলাদেশে। আগের অর্থবছরের একই সময় ১০৩ কোটি ২০ লাখ ডলার এসেছিল। সে হিসাবে আট মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২০.১৫ শতাংশ। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকট, রাজস্ব ঘাটতি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, কিছু নীতিগত সমস্যা তো দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। তার সঙ্গে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও আস্থার সংকটের মতো কিছু বিষয় নতুন করে যোগ হয়েছে; যার প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগ ও পণ্য উৎপাদনে। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আর যাদের আগ্রহ রয়েছে, তারাও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সময় নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বার্ষিক বিবেচনায়ও বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। ২০২৪ সালে দেশে মোট নিট এফডিআই এসেছে ১.২৭ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় ১৩.২৫ শতাংশ কম। এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার কমেছে এফডিআই। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী জানান, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে খুব বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এরপর জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আগস্টে সরকার পতন ঘটে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। যদিও বছরের শেষ দিকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এই অনিশ্চয়তা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় ফেলে দিয়েছে; যার কারণে বিনিয়োগ আরও কমে গেছে।

তবে আশার কথা, চলতি এপ্রিলে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি (বেজা) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’ আয়োজন করে। 

আয়োজনটি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)- এর সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, বিনিয়োগ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তার মতে, ‘বিনিয়োগ টানতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাস্তবায়নে ওয়ানস্টপ সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যয় কমিয়ে প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি বিরোধ নিষ্পত্তি দ্রুত ও সহজ করতে হবে।’

অর্থনীতির সার্বিক বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট বোদ্ধারা বলছেন, অনির্বাচিত সরকারের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করছে। এর সঙ্গে আরো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, আমদানি জটিলতা এবং অর্থনৈতিক নীতির অনিশ্চয়তা। ফলে সরকার ও বেসরকারি খাত নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কাঙ্খিত বিনিয়োগ প্রবাহ এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। সরকারি পরিসংখ্যানে বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবি করলেও বাস্তব মাঠপর্যায়ে সেই প্রবাহে রয়েছে বড় ধরনের স্থবিরতা। নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত একটি জবাবদিহিমূলক ও স্থিতিশীল সরকার ছাড়া দেশে টেকসই বিনিয়োগ সম্ভব নয় এমন মত দিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও শিল্পোদ্যোক্তারা। 

তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। পাশাপাশি দরকার স্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক নীতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ এবং একটি প্রকৃত অর্থে উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ। ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবসাবান্ধব নীতিমালার অভাব এবং নীতির অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন্ন করছে। অনেক প্রতিষ্ঠানকে বারবার নিয়ম পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের অভাব বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করছে। বিশেষত পোশাক, সিরামিক ও ইস্পাত খাত এ সমস্যার মুখে। বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়াতে হলে শুধু নীতি প্রণয়ন নয়, বাস্তবায়নেও স্বচ্ছতা আনতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসতে চায়, কিন্তু সিস্টেমের জটিলতা ও অস্থিরতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এ বিষয়ে ইয়ুথ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা আবুল কাশেম হায়দার মোবাইলে বলেন, বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ। বিনিয়োগকারী দেশি হোক কিংবা বিদেশি, সবার আগে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা চায়। আর এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন একটি নির্বাচিত, শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সরকার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল সরকার এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতির অভাব এই সবকিছু বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে। এখন দেশে একটা বিনিয়োগ স্থবিরতা চলছে। বর্তমান সরকার চেষ্টা করলেও কার্যকর কোনো সমাধান দিতে পারছে না।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]