গত কয়েকদিনে লক্ষ্মীপুরের রামগতির বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে চুরি-ডাকাতির ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। বসতবাড়ির পানির কল, পানির মোটর, পরিধেয় বস্ত্র, গরু-ছাগল থেকে শুরু করে বসত বাড়ি ও দোকানপাটের মালামাল কোন কিছুই বাদ যাচ্ছেনা চোরের হাত থেকে।
উপজেলার দুর্গম ইউনিয়ন বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়ন দুটিতে সবচেয়ে বেশি চুরির ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়সূত্রে জানা যায়। চোরের দল সংঘবদ্ধ হয়ে গভীর রাতে মানুষের গরু চুরি থেকে শুরু করে বসত বাড়িতে হানা দিচ্ছে।
জানা যায়, গত ১০মাসে চরগাজী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের টুমচর গ্রামের মাইন উদ্দিন মিয়ার বাড়ি থেকে ৬টি গরু চুরি হয়, ৩নং ওয়ার্ডের সামা গ্রামের জসিমের বাড়ি থেকে ৩ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৬০হাজার টাকা, ৬নং ওয়ার্ডের নুর উদ্দিনের বাড়ী থেকে একটি অটোরিকশা ও নগদ ১২ হাজার টাকা, ৪নং ওয়ার্ডের হক সাহেব প্রকাশ ডুবাইওয়ালার বাড়ি থেকে নগদ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণ ডাকাতি হয়, ৬নং ওয়ার্ডের মীর বাড়ীর হাসান বেপারীর ঘর থেকে নগদ দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা ও আড়াই ভরি স্বর্ণ ডাকাতি হয়।
এছাড়াও ৬নং ওয়ার্ডের মীর বাড়ীর নুর আলমের ঘর থেকে নগদ ৪ লাখ টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণ ডাকাতি হয়, ৩নং ওয়ার্ডের জসিম বেপারীর বাড়ি থেকে নগদ ৩ লাখ টাকা , ৬নং ওয়ার্ডের হেলাল মেস্তরীর বাড়ী থেকে নগদ ২৬ হাজার টাকা ও একসেট কানপাশা, ৩নং ওয়ার্ডের হাসান ড্রাইভারের দোকান থেকে নগদ ১লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, ৬নং ওয়ার্ডের সাইফুদ্দিনের দোকান থেকে নগদ ২৮ হাজার টাকা ও মালামাল, ২নং ওয়ার্ডের বেচুর দোকান থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা ও মালামাল, ৬নং ওয়ার্ডের আহমদিয়া মার্কেটের নুর উদ্দিনের দোকান থেকে নগদ ১৭ হাজার টাকা ও মালামাল এবং ৮নং ওয়ার্ডের নোমান সিদ্দিকীর বাড়ী থেকে দুইটি গরু চুরি হয়।
সর্বশেষ ২০মে, মঙ্গলবার রাতে চর রমিজ ইউনিয়নের চরমেহার গ্রামের সারোয়ারের বাড়িতে হানা দিয়ে চোরের দল নগদ এক লক্ষ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এসময় ঘরের জিনিসপত্রও ভাংচুর করে চোরেরা। এর আগে চর আলেকজান্ডার ইউয়িনের সবুজগ্রামে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা হাবিবুর রহমান টিটোর ঘরে রাতের খাবারে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় চেতনানাশকযুক্ত খাবার খেয়ে চারজন আহত হয়। একই সময়ে চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে কাতার প্রবাসী মোশারেফ হোসেন এর বাসায়ও দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া বড়খেরী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আলিম উদ্দিনের বাড়ী থেকে এক ভরি স্বর্ন ও নগদ ৩২হাজার টাকা,বড়খেরী ইউনিয়ন রামগতি বাজারের হাজী জসিম উদ্দিন ট্রেডার্স থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা ডাকাতি হয়, ৬নং ওয়ার্ডের রামগতি বাজারের মাইনউদ্দিনের দোকান থেকে নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা, চার নম্বর ওয়ার্ডের তেলি বাড়ীর এরশাদের ঘর থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও পাঁচ ভরি স্বর্ণ চুরি। চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার চররমিজ, চরপোড়াগাছা, চরবাদাম, আলেকজান্ডার, চরআলগী ইউনিয়ন ও রামগতি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে চুরির খবর পাওয়া গেছে।
চরগাজী ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের মাইন উদ্দীন বলেন, যে ভাবে চুরি ডাকাতি বেড়ে গেছে তাতে আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। আমার ছয়টি গরু চুরি হলেও এখন পর্যন্ত কোন সন্ধান পায়নি। বড়খেরী ইউনিয়নের মোঃ এরশাদ বলেন, মানুষের নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই। চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়নে গণহারে চুরি ডাকাতি হচ্ছে। থানা পুলিশকে জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না।
ব্যাপকহারে চুরি ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. নাছির উদ্দিন বলেন, কি করতাম? কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা। পুলিশের টহল জোরদার করতে বলে আসছি। এতো বড় ইউনিয়নে একদিকে পাহারা দিলে অন্যদিকে ঢুকে পড়ে চোরের দল। বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা গ্রাম পুলিশ দিয়ে নিয়মিত পাহারা দিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা সভায় বার বার বলছি। এরপরেও কোনভাবেই চুরি ডাকাতি বন্ধ করা যাচ্ছেনা। পাশাপাশি এলাকার মানুষজনকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন বলেন, টুকটাক কিছু চুরি-ডাকাতির খবর আমরাও পাচ্ছি। থানায় আসা অভিযোগগুলো গ্রহন করছি। অপরাধী ধরতে পুলিশ কাজও করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভাল বলে দাবি করেন তিনি।