ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বুধবার ● ১৮ জুন ২০২৫ ৪ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার বুধবার ● ১৮ জুন ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা দর্শন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫, ৮:৪৯ এএম  (ভিজিটর : ৩৩৫)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে একজন বিশ্বমানব, দার্শনিক, কবি ও শিক্ষাবিদ। তার শিক্ষা দর্শন শুধু ভারতীয় সমাজ নয়, সারা বিশ্বমানবতাকে প্রভাবিত করেছে। তিনি মনে করতেন, শিক্ষা কেবল পুথিগত বিদ্যা নয়, বরং এটি মানুষের অন্তর্গত সত্তার জাগরণ, আত্মার বিকাশ ও মানবিকতাবোধের উন্মেষ। 

তাই বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা দর্শন মূলত মানবিক, আত্মিক ও সার্বিক বিকাশকেন্দ্রিক। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষার সঙ্গে আনন্দ এবং নাড়ির সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। তাই শিক্ষা জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক সজীব প্রক্রিয়া।

তার শিক্ষা দর্শন বিশ্লেষণ করলে মূলত কিছু উপাদান পাওয়া যায়। এই যেমনÑশিশুকেন্দ্রিক ও আনন্দময় শিক্ষা। তিনি মনে করতেন, শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা না দিয়ে তাদের কৌতূহল, সৃজনশীলতা ও আনন্দকে কেন্দ্র করে শিক্ষা দেওয়া উচিত। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা হতে হবে প্রকৃতিপরায়ণ, আনন্দময় এবং শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে কেন্দ্র করে। তার মতে, শিশুর মনে কৌতূহল ও সৃষ্টিশীলতা স্বাভাবিকভাবে থাকে। শিক্ষার কাজ সেই স্বাভাবিক গুণগুলোকে দমন করা নয়, বরং লালন করা। তিনি লিখেছেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানুষকে পরিপূর্ণ করে গড়ে তোলা।

তার শিক্ষা প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে শিক্ষা দান করা। রবীন্দ্রনাথের মতে, প্রকৃতি হলো সবচেয়ে বড় শিক্ষাগুরু। তাই তিনি শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন খোলা প্রকৃতির মাঝে, যেখানে ছাত্ররা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে শিক্ষালাভ করে। 

রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার জন্য প্রকৃতিকে অপরিহার্য মনে করতেন। তার মতে, চার দেয়ালের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বন্দি করে পাঠদান কোনো শিক্ষা নয়, বরং প্রকৃতির মাঝে মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা দিতে হবে।

শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা এই ভাবনারই বাস্তব প্রতিফলন। গাছের ছায়ায় বসে পাখির ডাক শোনার মধ্যে যে জীবনবোধের জন্ম হয়, তা তিনি শিক্ষা প্রক্রিয়ার অংশ বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন।

মুক্তচিন্তা ও সৃজনশীলতা হলো রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শনের আরও একটি বড় স্তম্ভ। তিনি প্রতিযোগিতামূলক নয়, অনুসন্ধান ও অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষায় বিশ্বাস করতেন। শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য ও চিত্রকলা শিক্ষার অংশ হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করতেন।

তিনি শিশুদের ওপর চাপ প্রয়োগে বিশ্বাস করতেন না। তিনি বলতেন, ‘শিক্ষা হবে আনন্দময়, যাতে শিক্ষার্থী নিজেই শেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।’ তিনি সংগীত, কবিতা, নৃত্য ও চিত্রকলাকে শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার মাধ্যমে আত্মিক ও নৈতিক বিকাশের স্বপ্ন দেখতেন। এ জন্য তিনি শিক্ষাকে আত্মার মুক্তি ও নৈতিক চরিত্র গঠনের পথ হিসেবে দেখেছেন। তিনি চাইতেন মানুষ হোক সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের অনুসারী। রবীন্দ্রনাথের মতে, শিক্ষা কেবল পেশাগত দক্ষতা নয়, বরং মানুষের নৈতিক, আত্মিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের মাধ্যম। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা মানুষকে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণময় জীবনের পথে পরিচালিত করবে।

তার শিক্ষা দর্শনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, আন্তর্জাতিকতাবাদ ও বিশ্বজনীনতা। তিনি তার শিক্ষা দর্শনে ‘বিশ্বভারতী’র মাধ্যমে দেখা যায়, তিনি শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয় সীমারেখার বাইরেও নিয়ে যেতে চেয়েছেন। যেখানে বিশ্ব সংস্কৃতির মিলন ঘটবে।

আন্তর্জাতিকতাবাদ ও বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি, তিনি চাইতেন এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে জাতীয়তাবোধ এবং বিশ্বজনীনতা হাতে হাত রেখে চলে। বিশ্বভারতীর মূলমন্ত্রই ছিলÑ‘যত্র বিশ্বং ভবত্যেক নিডম’ অর্থাৎ যেখানে বিশ্ব এসে মিলিত হয় এক ঘরে। তিনি চেয়েছিলেন বিশ্ব সংস্কৃতির মিলনে একটি উদার ও মুক্তচিন্তাশীল সমাজ গড়ে উঠুক। 

তিনি বিশ্বাস করতেন উপার্জনের চেয়ে জীবনের দিকে অধিক নজর দেওয়া উচিত। কারণ জীবনের জন্য শিক্ষা, শিক্ষার জন্য জীবন নয়। তিনি বলতেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল উপার্জন নয়, বরং জীবনকে উপলব্ধি করা, নিজেকে আবিষ্কার করা।

সর্বোপরি বলতে চাই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা দর্শন আজও সময়োপযোগী। পরীক্ষামুখী, যান্ত্রিক ও রুটিনমাফিক শিক্ষার বিপরীতে তিনি যে মানবিক, জীবনঘনিষ্ঠ ও স্বতঃস্ফূর্ত শিক্ষার কথা বলেছেন, তা আধুনিক বিশ্বের জন্য এক অনন্য পথনির্দেশ। 

তাই বলা যায়, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শন কেবল তত্ত্ব নয়, এক জীবন্ত মানবদর্শন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শন একাধারে আদর্শবাদী, মানবিক ও চিরায়ত। আজও তার এই দর্শন শিক্ষার মানবিক রূপ রক্ষায় অনুপ্রেরণা জোগায়।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]