গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণজমায়েত ও বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারীদের নিষিদ্ধের দাবি ও আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা পরিষদ যমুনায় এক জরুরি সভার আয়োজন করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কী হবে না সে ব্যাপারে সভা চলমান ছিল। রাতে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ ছেড়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সম্মুখে জড়ো হয় এবং দাবি না মানলে যমুনা অভিমুখে মার্চ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে, সময় যত গড়ায় আন্দোলনে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। আন্দোলনকারীরা শাহবাগ ছেড়ে রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে জড়ো হয়। বিশেষ করে গতকাল শনিবার গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অবরোধ করেছেন শাহবাগ মোড়, পল্টন, মিরপুর ও উত্তরা আজমপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন সড়ক। এ ঘটনায় রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ক্ষমতাচ্যুত দলটিকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে আন্দোলনকারীরা। এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে সমাবেশ করে এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ঘোষণা দেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন না দেয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। একই সঙ্গে শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দেন তিনি। এরপর থেকে এ আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তিন দাবিতে শাহবাগে গতকাল শনিবারও গণজমায়েত কর্মসূচি পালন করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অংশ নিতে আসছেন সাধারণ মানুষ। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের উপস্থিতিও বাড়ে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শনিবার বিকাল ৩টা থেকে গণজমায়েত শুরু হয়। দুপুরের চরম তাপ উপেক্ষা করেই আসতে থাকে মানুষ। এ সময় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, করতে হবে করতে হবে; লীগ ধর, জেলে ভর; ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ; দফা এক দাবি এক, লীগ নট কাম ব্যাক; আওয়ামী লীগের নিবন্ধন, বাতিল কর করতে
হবে; দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের। এছাড়াও থেমে থেমে চলছে গান ও কবিতা আবৃত্তি। গণজমায়েতে এনসিপি নেতা আখতার হোসেন, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ আজ দুইভাগে বিভক্ত। একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি, আরেকটি বাংলাদেশি শক্তি। যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না, তারা ফ্যাসিবাদী শক্তি। আর যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় তারা বাংলাদেশি শক্তি। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে শাহবাগের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ শুরু হয়েছে। আর এই শাহবাগ থেকে ফ্যাসিবাদের পতন হবে। আমাদের মত ও পথ আলাদা হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে আমাদের মত ও পথ এক। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি সেদিন থেকে শুরু হবে, যেদিন থেকে টাইটেলটা হবে বাংলাদেশ উইদাউট আওয়ামী লীগ (আওয়ামী লীগহীন বাংলাদেশ)। আমাদের কথা অন্তর্বর্তী সরকারের কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি। তাই এখন আমরা শাহবাগ ব্লকেড করব। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত শাহবাগেই থাকব। এখান থেকে আমাদের দ্বিতীয় অভ্যুত্থান পর্ব শুরু হবে। তার এ ঘোষণার পরই আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এ সময় ওই পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কেবল অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহন চলতে দেয়া হচ্ছে। এতে সংহতি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
সারা দেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ : গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সারা দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে গণজমায়েত করার ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।