দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় কাঞ্চনা হাজারিখীল বুড়াইছড়ি খালের উপর ১৫ মিটারের কম একটি ব্রীজ নির্মাণে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতা ও ঠিকাদারের খামখেয়ালি তামাশা ও অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ নির্মাণ কাজ।ফলে চরম ভোগান্তিতে হাজারো বাসিন্দারা।
কাঞ্চনা হাজারিখীল বুড়াইছড়ি খালের উপর ১৫ মিটারের কম ব্রীজটি সাতকানিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুল হোসাইন এর অধীনে নির্মাণের দায়িত্বে আছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আফছানা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মোহাম্মদ ফারুক।কৃষিকাজের জন্য খালে বাঁধের (পানি সংরক্ষণ) সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় দুইমাস ধরে পুরোপুরি বন্ধ থাকে ব্রীজের কাজ।কিন্তু বাঁধের পানি ছাড়ার পর কাজের উপযোগী হওয়ার একমাসেও শুরু হয়নি ব্রীজের নির্মাণ কাজ।
এমনকি গত সপ্তাহে কয়েকদিনের মধ্যে ব্রীজের কাজ শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সপ্তাহ যেতে না যেতেই উল্টে যায় কথার ধরণ।নির্মাণ কাজ শুরু তো দূরে থাক ঘটনাস্থলে পর্যন্ত এসে দেখে যাননি সাতকানিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুল হোসাইন ও ঠিকাদার ফারুক।
ব্রীজ নির্মাণের কাজ শুরু না হওয়ার কারণ জানতে বেশ কয়েকবার কল করেও গ্রহণ করেননি সাতকানিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুল হোসাইন।তবে ঠিকাদার ফারুক কল গ্রহণ করে পাল্টে যায় কথার ধরণ।বিশেষসূত্রে জানা যায়, ক্ষমতার দাপটে ব্রীজ নির্মাণ শুরুর নির্দেশ থাকলেও কাজ শুরু করছেন না তিনি।
ঠিকাদার ফারুক ব্রীজের কাজ শুরু না করে একের পর এক অজুহাত দেখাতে থাকেন।বিভিন্নসূত্রে জানা যায়, কখনো অসুস্থ,কখনো কাজের কন্টাক্টর পালিয়ে যাওয়া,কখনো জিনিসপত্র না থাকা,কখনো সল্ট টেস্ট ও কখনো পানি না শুকানোর অজুহাত পেশ করেন।
ব্রিটিশ আমল থেকে অবহেলিত এই একটু সাঁকো দিয়ে পারাপার করছে স্কুল মাদ্রাসাগামী শতশত শিক্ষার্থী,মুসল্লী ও দুই এলাকার হাজারো বাসিন্দা।অনেক সময় সাঁকো থেকে পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন অনেক ছাত্রী,মুসল্লী ও পথচারী।ব্রীজের অভাবে লাশ জানাযার মাঠে নিতে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।এরমধ্যে ১৫ মিটারের চেয়েও কম দৈর্ঘ্যের একটি ব্রীজ অনুমোদন হলেও ব্রীজের কাজ শুরু হতে না হতেই খালের পানি বাঁধ নির্মাণ করায় বন্ধ হয়ে যায় কার্যক্রম।
এই বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন জানান, হাজারিখীল ব্রীজ নির্মাণ নিয়ে ঠিকাদার ও প্রশাসন ইচ্ছেকৃতভাবে অবহেলা করছে।তারা চাইলে ব্রীজের কাজ এতদিনে প্রায় হয়ে যেতো।
তৌহিদুল ইসলাম নামক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, পিআইও আর ঠিকাদার মিলে এলাকাবাসীর সাথে তামাশা শুরু করে দিয়েছে।গরমে আমরা ধান শুকাচ্ছি আর তারা বলছে কাজের পরিবেশ হয়নি।মানুষকে কষ্ট দিলে তাদের শান্তি লাগে।
ব্রীজে নির্মাণে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের চরম অবহেলায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উপজেলা প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করেন এলাকাবাসী।কাজের ধীরগতি ও অবহেলার জবাবদিহিরও দাবি জানান তারা।
স্থানীয়দের অনেকের দাবি, ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ না করলে প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে যেকোনোভাবে কাজ শুরু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এই বিষয়ে জানতে সাতকানিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুল হোসাইন এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু প্রতিশ্রুতি দিলেও সপ্তাহ শেষে কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।এমনকি ঘটনাস্থল এসে দেখে যাওয়ার প্রয়োজনবোধটুকু পর্যন্ত করেননি।সপ্তাহ শেষে ব্রীজের কাজ শুরু না হওয়ার কারণ জানতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও কল গ্রহণ করেননি তিনি।
তবে কাজের ধীরগতি ও শুরু না হওয়ায় তিনদিনের মধ্যে জবাব দিতে ঠিকাদার বরাবর দেওয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাক্ষরিত একটি নোটিশ হাতে আসে।যদিও এরকম কোন নোটিশ পাননি বলে দাবি করে ঠিকাদার বলেন, এরকম কোন নোটিশ পাইনি।আমার হাতে পাঁচ বছর সময় আছে।এখন কাজ শুরু করতে পারবো না আপনাদের কথায়।সময় হলে শুরু করবো।
বৃষ্টি নাই,উপযোগী পরিবেশ থাকার পরও কেন কাজ শুরু করছেন না জানতে চাইলে ঠিকাদার বলেন, এখন বর্ষাকাল।এখন কোথাও কাজ চলতেছে না।আপনাকে জবাব দেওয়ার কে?
তবে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস আগামী সোমবারের মধ্যে ঠিকাদারের সাথে বসে এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।