তরুণদের মধ্যেই রয়েছে দুরন্তপনা, অসীম সাহস, নবসৃষ্টির উদ্দীপনা, পাহাড়সম বাধা ডিঙানোর মনোবল। দেশের মোট ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। যে কোনো দলের জন্য এই ভোটই হবে আগামী নির্বাচনে জয়লাভের মূল ভিত্তি। তাইতো তরুণদের নিয়ে দলকে শক্তিশালী করতে কোমড়বেধে মাঠে নেমেছে বিএনপি।
তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ আয়োজনে আগামীকাল চট্টগ্রামে সেমিনার এবং পরদিন সমাবেশ। এ মাসের মধ্যেই দেশের সকল সাংগঠনিক বিভাগগুলোর সাথে সেমিনার ও সমাবেশ করবে বিএনপির এই তিন সহযোগী সংগঠন।
এ কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দলের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তরুণ প্রজন্ম ও জেন-জির সামনে উপস্থাপন করে তাদের দলে ভিড়ানো ও ভোট আদায় করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি এ সমাবেশ থেকে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষনার জন্যও জোড়ালো দাবি তুলবেন নেতারা।
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, দেশে তরুণ ভোটার চার কোটি। তাঁরা নির্বাচনে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবেন। তাঁদের বিষয়ে আমাদের কিছু চিন্তাভাবনা আছে। আমাদের দলেও মেধাবী আছে, সেটি এখানে ফোকাস করতে চাইছি। সব মিলিয়ে এই কর্মসূচির মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাই।
কেবল রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ নয়, বরং একটি উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী তথা জনবান্ধব সরকারব্যবস্থার প্রয়াস। যেখানে তরুণেরা কেবল ভোটার নয়, বরং আগামীর নীতিনির্ধারক, চিন্তাশীল অংশীদার ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামোর নির্মাতা।
যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ আয়োজনে আগামীকাল (শুক্রবার) বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগীয় সেমিনার। বিকেল ৩টায় চট্টেশ্বরী রোডের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আলোচক হিসেবে অংশ নেবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্লেষক আব্দুল্লাহ্-আল-মামুন, কর্নেল ইউনিভার্সিটির লেকচারার জামাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাহরিন খান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ, ওরাকলের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ম্যানেজার মুনতাসির মুনীর, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ, ইউনিভার্সিটি অব ডালাসের শিক্ষক শাফকাত রাব্বী এবং পাঠাও সিইও ফাহিম আহমেদ।
পরদিন (শনিবার) চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড ময়দানে চট্টগ্রাম-কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগের সমন্বয়ে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। এতে চট্টগ্রামের ১১ জেলার ৯৯টি উপজেলা ও মহনগরীর নেতা-কর্মীরা অংশ নেবেন।
সমাবেশকে ঘিরে চট্টগ্রামজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এটি সফল করতে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে জেলা, মহানগর ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কয়েক দফা প্রস্তুতি সভা করেছে নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এটি হবে তরুণদের নিয়ে স্মরনকালের সেরা সমাবেশ। এতে প্রায় ৫ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে আশা করেছেন আয়োজকরা।
চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, সেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক ভোরের ডাককে বলেন, চট্টগ্রামের সেমিনার-সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের কর্মসূচী শুরু হবে। তাই সকলের নজর এখানে। প্রোগ্রাম সফল করতে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। বিভিন্ন জেলায় জেলায় গিয়ে আমরা একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছি। আশা করছি এটি হবে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ তারুণ্যনির্ভর সমাবেশ।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ভোরের ডাককে বলেন, সেমিনারে রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরের তরুণদেরও আমন্ত্রন করা হয়েছে। তরুণদের ইচ্ছা, আকাক্সক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে । আমরা দলের নির্মিত ৩১ দফা নিয়ে তরুণদের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইব। তারা পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিবে, প্রশ্ন করবে। তাদের পক্ষ থেকে নতুন কোনো ইতিবাচক প্রস্তাব পেলে আমরা তা গ্রহন করব।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ৯ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত যৌথভাবে সেমিনার ও সমাবেশ করবে যুবদল, স্বচ্ছোসবেক দল ও ছাত্রদল। ২দিন করে ৪ ধাপে ৪ টি বৃহৎ সাংগঠনিক বিভাগে তারুণ্যনির্ভর এ কর্মসূচী পালন করবে তারা। প্রথমদিন হবে সেমিনার, পরদিন সমাবেশ। বিএনপি ও শরিক দলগুলো ঘোষিত ৩১ দফা এবং তারেক রহমানের দেওয়া দিকনির্দেশনা ও রাজনৈতিক দর্শনকে মুল ভিত্তি রেখে সেমিনারে আলোচনা হবে।
এতে অংশ নিবে নেতাকর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশের প্রতিষ্ঠিত তরুণ প্রজন্ম তথা- বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বিদেশি গণমাধ্যমে কাজ করা সাংবাদিক, মাইক্রোসফটসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যাক্তি, চিন্তাবিদ, উদ্যোক্তা ও চাকরিজীবীরা। আলোচনায় উঠে আসবে তারুণ্যের ক্ষমতায়নে একটি আধুনিক, মানবিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ গঠনের রূপরেখা।
চট্টগ্রামে প্রথম ধাপ শেষে দ্বিতীয় ধাপ হবে খুলনায়। খুলনা ও বরিশাল সাংগঠনিক বিভাগীয় কর্মসূচি হিসেবে ১৬ মে ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার এবং ১৭ মে সমাবেশ। তৃতীয় ধাপ বগুড়ায়- রাজশাহী ও বগুড়া সাংগঠনিক বিভাগীয় কর্মসূচি হিসেবে ২৩ মে ‘কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার এবং ২৪ মে সমাবেশ। সর্বশেষ চতুর্থ ধাপ হবে ঢাকায়।
ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ সাংগঠনিক বিভাগীয় কর্মসূচি হিসেবে ২৭ মে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি’ শীর্ষক সেমিনার এবং ২৮ মে হবে সমাবেশ। সেমিনারের বিষয়বস্ত ভিন্ন হলেও ৪টি সমাবেশের বিষয়বস্তু একই (তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ)।