ই-পেপার বাংলা কনভার্টার রবিবার ● ২৫ মে ২০২৫ ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ই-পেপার রবিবার ● ২৫ মে ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




প্রশাসন ও পুলিশে পদ ছাড়াই পদোন্নতি
পদোন্নতিতে বৈষম্য হতাশায় শিক্ষা ক্যাডার
নাজিউর রহমান সোহেল
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০২৫, ৭:১৭ পিএম  (ভিজিটর : ১৩৩)
দেশে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য প্রকট আকারে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের গুটি কয়েক ক্যাডারে পদ না থাকলেও বছর বছর হয় পদোন্নতি। বাকি ক্যাডারগুলোর চিত্র ভিন্ন। পদ থাকলেও পদোন্নতি আটকে থাকছে দীর্ঘসূত্রিতা ও নানা শর্তের বেড়াজালে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারেও একই দশা। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজরের বেশি কর্মকর্তা চরম হতাশা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে কর্মস্পৃহা হারাতে বসেছেন।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষা ক্যাডারে বঞ্চনার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। এই ক্যাডারে বিলম্বিত পদোন্নতি এবং যোগ্যতা থাকলেও পদোন্নতি না দেওয়ার কারণে জটিলতা দিন দিন বাড়ছে। অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে বেতন ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশাল বৈষম্য। ফলে শিক্ষা দেশের বৃহৎ ক্যাডার হওয়া সত্তে¡ও সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তলানিতে রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে তারা অন্য ক্যাডারের তুলনায় ব্যাপক পিছিয়ে পড়ছেন।

এমন হতাশার মধ্যেই শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল থেকে দফায় দফায় বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক পর্যায়ে প্রভাষকদের এসিআর নিয়ে আপত্তি তুলে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় আবারও সভা ডেকেছেন কমিটির সভাপতি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। 

বিষয়টি জানাজানির পর এই ক্যাডারের পদোন্নতি প্রত্যাশীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ টায়ারে সহকারী অধ্যাপক পদে কতজন পদোন্নতি পাবেন তা নিয়ে আলোচনা ও দেনদরবার চলছে। বিগত পদোন্নতিতে বঞ্চিত অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদেরও এই ধাপে পদোন্নতি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে এ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মজিবর রহমান ভোরের ডাককে বলেন, আগের ডিপিসিতে বঞ্চিত অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। তাদের পদোন্নতি হলে নিচের কিছু পদ (সহকারী অধ্যাপক) খালি হবে এবং প্রভাষকদের পদোন্নতি প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে। প্রভাষকদের এসিআর কাল (বৃহস্পতিবার) যাচাইয়ের পর শিগরিই চূড়ান্ত ডিপিসি সভা অনুষ্ঠিত হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালে চাকরিতে যোগদান করে শিক্ষা ক্যাডারের ৩২তম ব্যাচের কর্মকর্তারা এখনও নবম গ্রেডেই পড়ে আছেন। এই ব্যাচের ভ‚গোল বিষয়ের শিক্ষক (বর্তমানে গবেষণা কর্মকর্তা, মাউশি) রিয়াদ আরাফাত। চাকরির বয়স সাড়ে ১১ বছর পার হয়েছে, কিন্তু এখনো একটি পদোন্নতিও পায়নি সে। এই ব্যাচের আরেক কর্মকর্তা হোসনে আরা ফেরদৌস লোপা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে চাকরিতে যোগ দিয়ে তাদের ব্যাচের ৫৪জন এখনও পদোন্নতি পাননি শুধুমাত্র বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতির কারণে। 

তিনি ২০২২ সালে রিয়াদ ষষ্ঠ গ্রেডের বেশি বেতন পেলেও পদোন্নতি পাননি। এখনও তিনি প্রভাষক পদে ৯ম গ্রেডে কর্মরত রয়েছেন। রিয়াদ এবং লোপার মতো এই ব্যাচে এরকম আরও ৫৪জন প্রভাষক রয়েছেন। অথচ একই সময়ে প্রশাসনে ৩২-৩৭তম ব্যাচ দুই ধাপে পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র সহাকারী সচিব হিসেবে ষষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারের ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচেরও বহু কর্মকর্তা (যথাক্রমে ৩৬১, ৬৩১ ও ৭৪০ জন) দীর্ঘ সময় ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন। এমনকি ৩৬ ও ৩৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও ৭ ও ৬ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি পাননি।

বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১ অনুযায়ী সহকারী অধ্যাপকের পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ হওয়ার কথা। প্রভাষকদের পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা, চাকরি স্থায়ীকরণ, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং সন্তোষজনক চাকরিজীবন বাধ্যতামূলক হলেও, এসব শর্ত পূরণের পরও দীর্ঘকাল ধরে এই ব্যাচগুলো পদোন্নতি বঞ্চিত। শিক্ষা খাত সংশ্লিষ্টরা যাকে আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের বিরল দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন। মাউশির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চিত (৩২ ব্যাচ থেকে ৩৪ ব্যাচ) কর্মকর্তারা ষষ্ঠ গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। আর ৩৫তম ব্যাচ আগামী জুলাই থেকে এই (ষষ্ঠ গ্রেড) গ্রেডে বেতন পাবেন। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিপিসি সভার কার্যপত্র অনুযায়ী, শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ১৬ হাজার পদের মধ্যে সাড়ে ১৩ হাজার কর্মকর্তা কর্মরত। সহকারী অধ্যাপকের ৪৩৮৯টি পদের বিপরীতে মূল পদে আছেন ২৭৭৯ জন এবং ইনসিটু পদে ১২৫১ জন। বিষয়ভিত্তিক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে মোট ১১২৬টি শূন্যপদ রয়েছে। এছাড়াও সৃষ্ট পদের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৩৯টি পদ রিজার্ভ রাখা হয়েছে। আত্তীকৃত কলেজগুলোতে আরও ১০৩০টি শূন্যপদ বিদ্যমান। সব মিলিয়ে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য মোট ২১০২টি কর্মকর্তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।  মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ১ হাজার ৪শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ জন প্রভাষককে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির বিবেচনায় রাখা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি কোন পর্যায়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত রয়েছেন ডিপিসির সভাপতি। 

জানা গেছে, বিগত সময় পদোন্নতি বঞ্চনাসহ শিক্ষা ক্যাডারের নানা ইস্যুতে সোচ্চার থাকত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। এবার পদোন্নতি নিয়ে সমিতির নিষ্কৃয়তায় ক্যাডারের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক মহাসচিব মোঃ শওকত হোসেন ভোরের ডাককে বলেন, শিক্ষা ক্যাডারে ৩২ থেকে ৩৭তম বিসিএস পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যকলক দূর করা জরুরি। অন্য ক্যাডারে যেখানে সমব্যাচের কর্মকর্তারা দুইটা পদোন্নতি পেয়েছেন সেখানে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা ১০-১২ বছর প্রবেশ পদে রয়েছেন, এটি চরম বৈষম্যমূলক। পদোন্নতিযোগ্য সবার ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি। 
বেতন বৈষম্য ও ওপরে উঠার সুযোগ কম

প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে যান। অথচ শিক্ষা ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে জাতীয় বেতন স্কেলের চতুর্থ গ্রেডে যান। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে অষ্টম জাতীয় স্কেল কার্যকরের আগে চতুর্থ গ্রেড পাওয়া শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে যেতে পারতেন। সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় তাদের সেই পথও এখন রুদ্ধ। বেতন বৈষম্য নিরসনে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে সে সময় গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটি এই ক্যাডারে সিলেকশন গ্রেড দিতে রাজি হলেও অদ্যাবধি তা কার্যকর হয়নি।

এই ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। পদটি দ্বিতীয় গ্রেডের। প্রধানমন্ত্রী এ পদটিকে প্রথম গ্রেডে উন্নীতের সিদ্ধান্ত দিলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া অধ্যাপক পদে কর্মরতদের শতভাগ তৃতীয় গ্রেডে যাওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তও থমকে আছে। এই ক্যাডারে দ্বিতীয় গ্রেডে আরও সাতটি পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন।

সিনিয়র অধ্যাপকদের পরামর্শ
শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র অধ্যাপকরা পরামর্শ দিয়ে বলেন, এই ক্যাডারে বিদ্যমান পদোন্নতির জট ও জটিলতা নিরসনে উর্ধ্বতন পর্যায়ে নতুন পদ সৃষ্টি করা খুবই জরুরি। যেখানে প্রশাসন ও পুলিশে পদ ছাড়াই পদোন্নতি হয়, সেখানে এই ক্যাডারের জন্য এই প্রচলন কেনো হয়না। প্রয়োজনে সুপার নিউমারারি পদ্ধতিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হোক। অন্যথায় সংকট আরও বাড়বে। ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দিলে এই ক্যাডারের বিদ্যমান সংকট কিছুটা কমবে বলে মনে করেন তারা। জানা গেছে, ২০১৮ সালের পর থেকে শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতিতে ব্যাপক ‘শ্লথগতি’ তৈরি হয়েছে।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]