প্রতিষ্ঠার একযুগ পেরিয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা কলেজে সরকারি কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। টিনশেডের দুটি জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান।
দীর্ঘদিন ধরে নানান সমস্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কলেজ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষায় অনগ্রসর হাওরাঞ্চলের বংশীকুন্ডা কলেজটি মধ্যনগর উপজেলার একমাত্র কলেজ। ২০১৩ সালে এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রম ও আর্থিক সহায়তায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।
উপজেলায় আরও দুটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। তবে উপজেলার একমাত্র স্বতন্ত্র কলেজ এটি। উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে এই স্বতন্ত্র কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
শুরু থেকেই পাবলিক পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় ফলাফল করে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। কলেজটিতে মানবিক ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা দুটি বিভাগ চালু রয়েছে। ১১ জন শিক্ষক ও ৬ জন কর্মচারী প্রায় বিনা বেতনে কলেজটিতে কর্মরত রয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেডের দুটি ঘরে পাঠদান ও একটি আধা-পাকা ঘরে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলে আসছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের বর্তমান দুই বারের চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই কলেজ স্থাপন করেছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে কলেজের শিক্ষার্থীর পাবলিক পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেন। বিগত ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৯৬.৪০%, ২০২৩ সালে ৭৫.৯৬% এবং ২০২৪ সালে ৭৯.০৩%।
কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, শ্রেণিকক্ষে একটা ফ্যানও নেই। গরমে যেমে ক্লাস করতে হয়। আমাদের জন্য একটা সরকারি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করে দিলে ভালো হয়।
স্থানীয়রা বলেন, হাওরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার জন্য এই কলেজটিই একমাত্র ভরসা। সাধারণত শহরে গিয়ে পড়াশোনা করার সামর্থ্য যাদের নাই, তারা এই কলেজটিতে পাশোনা করতে পারছে। এই কলেজটি না হলে, এলাকার শতকরা ৮০ ভাগ মেয়ে শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করার সুযোগ পেতো না। গড়ে ৫০ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়তো। আমরা কলেজটির উন্নয়নে বর্তমান সরকারের কাছে আকুল আবেদন করছি। অচিরেই যেনো কলেজটি এমপিওভুক্ত বা সরকারিকরণ করা হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ নূরুল আমিন বলেন, বংশীকুন্ডা কলেজ মধ্যনগর উপজেলায় একমাত্র স্বতন্ত্র কলেজ। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করছেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ জাতীয়করণ করার কথা। ইতোমধ্যে সব উপজেলায় এর বাস্তবায়নও হয়েছে। শুধু আমরাই বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। বিগত সরকারের আমলে আমাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। যার ফলে সব শর্ত পূরন করার পরেও কলেজটি এমপিওভুক্ত করা হয়নি। আমরা আশাবাদী বর্তমান সরকারের আমলেই বংশীকুন্ডা কলেজকে এমপিওভূক্ত ও জাতীয়করণ করে কলেজের একাডেমিক ভবনসহ সব সমস্যার অবসান করা হবে।
কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা রাসেল আহমদ বলেন, হাওর জনপদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উচ্চশিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কলেজটি এই অঞ্চলের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার একমাত্র ভরসাস্থল। কলেজটির প্রতিষ্ঠার একযুগ পেরিয়ে গেলেও সরকারি কোন উন্নয়ন হয় নি। নিজ অর্থায়নে বা এলাকাবাসীর সহযোগিতায় একটি প্রতিষ্ঠানকে কতদূরই বা এগিয়ে নেওয়া যায়। হাওর জনপদ ও এ অঞ্চলের মানুষের কথা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তসহ যাবতীয় সরকারি সহযোগিতা কামনা করি।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন, দুর্গম হাওর এলাকায় এমন একটির কলেজের খুব গুরুত্ব রয়েছে। কলেজটি এমপিওভুক্ত করা, একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করা হলে সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে আশা করি।