দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার কোনও লক্ষণ দেখি না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতন্ত্র ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন- নির্বাচন ডিসেম্বরে না হলেও জুনের মধ্যে হবে। এই কথাটাই আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। একবার বললেন ডিসেম্বর, আবার বললেন জুনের কথা। ভোট ডিসেম্বরে, প্রধান উপদেষ্টা এটা বলার পরপরই, আবার আরেকজন বললেন ভোট জুনে হবে। সম্ভবত নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি তারা করবেন না। নির্বাচন দ্রæত দেওয়ার কোনও লক্ষণ আমি দেখি না।
তিনি বলেন, কয়েকটা দল বলা শুরু করেছে, এটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না। যদি এগুলো বলতে থাকে, তাহলে নির্বাচন কেমনে হবে! কেউ কেউ আবার বলেই ফেলেছেন, আমরা নির্বাচনে যাবো না। কয়েকদিন আগে হলেন, আপনারা নির্বাচনে গেলেই কী আর না গেলেই কী! আপনাদের বাংলাদেশে কে চিনতো! এখন ধমক দেন, আপনারা নির্বাচনে যাবেন না। এগুলো করে কোনও লাভ নেই। নির্বাচনটা যথাসময়ে হবে, এটা আমরা আশা করতে পারি। খুব দ্রæত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু আমি আশা করছি, নির্বাচনটা হবে।
নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন দেবে। আজ আমাদের যে নির্বাচন ব্যবস্থা, এটা কিন্তু ধসে পড়া। এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঠিক করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কোনও প্রকার ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যাবে না।
তিনি বলেন, আজ আমাদের দেশের একটা অবস্থা এসেছে নির্বাচন না সংস্কার। তবে আমি বলতে চাই, নির্বাচনের বিকল্প কেবল নির্বাচনই হতে পারে। অন্য কোনোকিছু হতে পারে না। এখন আমরা কথা বললেই বলবে, মির্জা আব্বাস সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলে, সংস্কার চায় না। কিন্তু আমাদের জন্য, নির্বাচনের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যে সংস্কারটুকুর প্রয়োজন, আমরা সেটুকু চাই।
মির্জা আব্বাস বলেন, এনসিপির একজন বলে ফেললেন- এখন নির্বাচন করা সম্ভব না। কারণ প্রশাসনের সব জায়গায় বিএনপির লোক বসা আছে। ১৭ বছর আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করলো, আপনি বিএনপির লোক কই পাইলেন আমি বুঝলাম না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, যে দলই হোক, বিএনপি-জামায়াত, এনসিপিসহ অন্যান্য সব দলকে জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশি জনগণের একটাই শক্তি রয়েছে, সেটা হলো ঐক্য। সেটা আমরা জুলাই-আগস্টে প্রমাণ করেছি। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা এ দেশকে থেকে স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। আমাদের বিপরীত শক্তি আমাদের বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, কয়েকদিন আগে শফিউর রহমান নামে একজন লোক নিয়োগ হয়েছে। সে তো আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট। আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট কিন্তু আপনার ডানে-বামেও আছে। সচিবালয়ের চার জন সচিব, এর বাইরে আরেকজন সচিব মর্যাদায় রয়েছে, এই মোট পাঁচ জন এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক আপনাকে সঠিক রাস্তায় চলতে দেবে না। আপনার সারা জীবনের অর্জন কিন্তু তারা শেষ করে দেবে। আপনি দয়া করে তাদের কাছ থেকে সাবধানে থাকবেন। আপনার সফলতার ওপর নির্ভর করছে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।
আলোচনা সভায় গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভি পি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
