ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শনিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ৬ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার শনিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা; মঞ্জুরি নেই, তবুও অনুমতির তোড়জোড়
নাজিউর রহমান সোহেল
প্রকাশ: রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৪৭ এএম  (ভিজিটর : ১৩৭)
*বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ ও বিধিমালায়, ২০১৪ ‘সাংঘর্ষিক’
*বিদেশি স্টাডি সেন্টারের মঞ্জুরি দিতে আইনগত অবস্থানে নেই ইউজিসি
*‘কথিত’ স্টাডি সেন্টার চালুর তৎপরতায় অসন্তোষ

দেশের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থী না বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাখা ক্যাম্পাস, ‘উপশাখা’ বা ‘স্টাডি সেন্টার’। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এ দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার খোলার আইনগত বৈধতা না থাকলেও দেশে নতুন আরও একটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার স্থাপনের অনুমতি দিতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মঞ্জুরি ছাড়াই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার খোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনুমোদনের অপেক্ষায় নতুন এই স্টাডি সেন্টারটি- যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমিকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার চালুর অনুমতি দিতে আবেদন করেছে ডিআইএ’র চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান। এতথ্য জানা গেছে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) নুরুন আখতার ভোরের ডাককে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার পরিচালনা সংক্রান্ত বিধিমালার স্পষ্টীকরণ নিয়ে একটি কমিটি রয়েছে। কমিটি এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি গাইডলাইন ও নীতিমালা তৈরির কাজ করছে। এই মুহূর্তে নতুন কোনো স্টাডি সেন্টার অনুমতির বিষয়টি আমার জানা নেই।

মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, দেশে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি এর স্টাডি সেন্টার খুলতে কার্ডিফ মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে অনলাইনে একটি সভা আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, আইন ও বিধিতে সাংঘর্ষিকতা থাকলেও ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের একটি চক্র বাংলাদেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার অনুমোদন তদবির চালাচ্ছেন। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে দেশে নতুন স্থাপিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংকট তৈরি হবে। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পিছিয়ে পড়বে। অথচ এখন পর্যন্ত বিদেশি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টারে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়নি ইউজিসি। অর্থ্যাৎ ইউজিসির মঞ্জুরি ছাড়া দেশে এ পর্যন্ত ৪টি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টারের অনুমতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই পরিস্থিতিতে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা বিদেশি ‘কথিত’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস চালুর তৎপরতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, ৮ থেকে ১০টির বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত আসনে প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী পাচ্ছেন না। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, প্রতিযোগিতায় না টিকলে নতুন প্রজন্মের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসনও ফাঁকা থাকবে। তৈরি হবে নশংন সংকট। 

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি গত ১৬ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রেরিত এক আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমিকে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি এর স্টাডি সেন্টার পরিচালনার জন্য দেশে ৩০ হাজার বর্গফুটের ক্যাম্পাস তৈরি করে অবকাঠামো, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগ দিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর অপেক্ষা করা হচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরির জন্য ৭৬ কাঠা জমি ক্রয় করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ অবস্থায় কার্ডিফকে স্টাডি সেন্টারের অনুমতি দিলে সরকারের সকল নিয়মকানুন মেনে পরিচালনা করা হবে। 

আইগত অবস্থানে নেই ইউজিসি 
সম্প্রতি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনের মতামতে ইউজিসি বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৩৯ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের নামে ক্যাম্পাস স্থাপন করার বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও ২০১৪ সালের প্রণীত বিধিমালায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা বা স্টাডি সেন্টার স্থাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। অর্থ্যাৎ ২০১৪ এর বিধিমালায় স্টাডি সেন্টার পরিচালনার সুযোগ দানের বিষয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৩৯ ধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। স্টাডি সেন্টার সংক্রান্ত আবেদনের মঞ্জুরিকরণ বা অনুমতি দিতে ইউজিসি আইনগত অবস্থানে নেই। 

গত ৬ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইউজিসির এক পত্রে আরও বলা হয়, কার্ডিফ ইউনিভার্সিটিকে স্টাডি সেন্টার চালুর অনুমতির জন্য ২০১৫ সালের মার্চে আবেদন পাওয়া যায়। এর প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে কমিশন ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি পরিদর্শন টিম যুক্তরাজ্যে কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন মর্মে জানা যায়। তবে ইউজিসি থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অফিস আদেশ জারি করা হয়নি বলে ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ সংক্রান্ত কোনও পরিদর্শন রিপোর্ট নেই ইউজিসিতে। তৎকালীন ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে টিমের পেছনে উদ্যোক্তা কর্তৃপক্ষ প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পত্রে ইউজিসি আরও জানায়, পরিদর্শন পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার পরিচালনার কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখা হয় মর্মে উদ্যোক্তা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 
গাইডলাইন নিয়ে কাজ করছে কমিটি 
এদিকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা ২০১৪ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর আলোকে ক্রস বর্ডার হাইয়ার এডুকেশন সংক্রান্ত একটি গাইডলাইন প্রস্তুত এবং আবেদন ফরম হালনাগাদ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে ইউজিসি।  গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ইউজিসির এক আদেশে ৬ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন আর ইউজিসির ইন্টারন্যাশনাল কোলাবরেশনের পরিচালক জেসমিন পারভিনকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়।
জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সচিব জেসমিন পারভিন ভোরের ডাককে বলেন, কমিটি ক্রস বর্ডার হাইয়ার এডুকেশন সংক্রান্ত একটি যুগোপযোগী গাইডলাইন ও চেকলিস্ট প্রস্তুতের কাজ করছে।

কোম্পানি আইনে ‘রমরমা’ ব্যবসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘ট্রাস্ট আইন, ১৮৮২’-এর অধীনে অলাভজনক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। ওই আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। কিন্তু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস কিংবা স্টাডি সেন্টার ‘কোম্পানি আইন, ১৯৯৪’-এর অধীনে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার, ২০১৪ বিধি ৭(ঝ) অনুযায়ী, উদ্বৃত্ত অর্থসম্পদ উদ্যোক্তা, স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বিভাজিত হবে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ভোরের ডাককে বলেন, বিষয়টি অবশ্যই সাংঘর্ষিক। মূল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু বিধি ও প্রবিধানমালা যুক্ত করার সুযোগ নেই। ইউজিসির একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, শুধু তাই নয়, এই শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টারে ৩ সদস্যর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ রাখা হয়েছে। কিন্তু এই বিওটির কাজ কি তা সেটা উল্লেখ করা হয়নি বিধিমালায়। অথচ কোম্পানি আইনে রমরমা ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে ৩টি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার এবং ১টি শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার সাময়িক অনুমতি রয়েছে। সবশেষ গত বছরের এপ্রিলে যুক্তরাজ্যের দি ইউনির্ভাসিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কশেয়ার ১৪টি শর্তে সাত বছরের জন্য বাংলাদেশে স্টাডি সেন্টার খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে, ২০২৩ সালের মে মাসে দেশে তিনটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টাডি সেন্টার’ অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। নিম্ন সারির হওয়ায় প্রস্তাবিত যুক্তরাজ্যের লিডস্ ট্রিনিটি ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়ার মাহ্সা বিশ্ববিদ্যলয় এবং যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট লন্ডন’স এর স্টাডি সেন্টার খোলার অনুমতি দেননি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী। ইউজিসি জানিয়েছে, একসময় অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশে অবৈধভাবে বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছিল। তখন প্রায় ৫৬টি বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে বিজ্ঞপ্তিও জারি করে ইউজিসি। কারণ, যেগুলো ছিল মূলত সনদনির্ভর প্রতিষ্ঠান। 





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]