ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শনিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ৬ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার শনিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




ঢাকার বুকে এক টুকরো ফিলিস্তিন
সাইদুল ইসলাম:
প্রকাশ: শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ৭:০৯ পিএম  (ভিজিটর : ১২৬)
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসার পর মনে হয়েছে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের সাথেই রয়েছি। এক কথায় বলতে গেলে এ যেন ঢাকার বুকে এক টুকরো ফিলিস্তিন দেখলাম। শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মার্চ ফর গাজায় অংশ নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন যাত্রাবাড়ি থেকে আসা আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষা করেন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার আলো দেখান।  

বিশ্বজুড়ে যখন ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ-সমাবেশ হচ্ছে, ঠিত তখন বাংলাদেশেও ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত হয়েছে এই ব্যতিক্রমধর্মী সমাবেশ। এতে অংশ নিয়ে সাধারণ মানুষরা বলছেন, আমরা সরাসরি ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে না পারলেও লাখ লাখ মানুষ এখানে এসে একসাথে প্রতিবাদ করছি। আশাকরি এর উছিলায় মহান সৃষ্টিকর্তা গাজাবাসীকে রক্ষা করবে। সমাবেশে বিশেষ মুনাজাতে অংশ নিয়ে গাজাবাসীর জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন লাখো মানুষ।

আজ সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মার্চ ফর গাজায় সকাল নয়টার পর থেকেই হাজার হাজার মানুষ আসতে থাকে। বেলা সাড়ে এগারোটার মধ্যে পুরো উদ্যান পূর্ণ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। উদ্যান পূর্ণ হয়ে আশপাশের সড়কে অবস্থান নেয় লাখো মানুষ। অবশেষে সড়কে জায়গা না পেয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয় নেয় রমনা পার্কে, যা একপর্যায়ে পরিণত হয়েছে আরেকটি জনসমুদ্রে। পুরুষের পাশাপাশি হাজারো নারীও অংশ নিয়েছেন এ কর্মসূচিতে। 

শনিবার সকাল থেকেই মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে যোগ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সী মানুষ ছোট-বড় মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে দেখা গেছে। এ কর্মসূচিতে এক হয়েছেন সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নানান ধর্ম-বর্ণের মানুষ। ফলে পুরো ঢাকার সড়কে সকাল থেকেই জনস্রোত নামে। বিশেষ করে গতকাল সকাল নয়টায় বায়তুল মোকাররম থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে বিশাল মিছিল ও বাংলামটর থেকে মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে বিশাল মিছিল ছিল চোখে পড়ার মতো। 

এতে দক্ষিণ জামায়াতের মিছিলে অংশ নিয়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ফিলিস্তিনের জেরুজালেমের উপর আঘাত মুসলিম উম্মাহ সহ্য করেত পারে না। মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা, জেরুজালেমে লক্ষ-লক্ষ নবী-রাসূলের স্মৃতি বিজাড়িত। এই স্মৃতি মুছে দিয়ে ইহুদীরা ফিলিস্তিন দখল করতে যাচ্ছে। অথচ ফিলিস্তিনের দয়ায় ইসরায়েল সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলে, মানবতার দুশমন ইসরাইলি বাহিনীর পাশবিক হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি নিহত এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩ জনেরও অধিক নিরীহ ফিলিস্তিনি। 

নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। অবিলম্বে এ হামলা বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তরের মিছিলে অংশ নিয়ে দলের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, সকল প্রকার যুদ্ধবিধি ও আইন-কানুন লঙ্খন বিশে^র সবচেয়ে বড় ইবলিস ও মহাশয়তান নেতানিয়াহু গাজায় ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা ও নির্মম মানবতাবিরোধী অপরাধ চালাচ্ছে।  ইসরাইলী বর্বরতা ও নির্মমতা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করলেও জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শুধু বিবৃতি দিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছে উল্লেখ করে সেলিম উদ্দিন বলেন, ওয়াইসিও রয়েছে রীতিমত নিরব দর্শকের ভূমিকায়। মূলত, মুসলমানদের নামে এ সংস্থাটি মাজাভাঙা ও অতিশয় দুর্বল। 

এমন নাম সর্বস্ব  সংস্থা দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের কোন কল্যাণই সম্ভব নয়। মিছিলে কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতারাসহ হাজার হাজার কর্মী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া, গতকালের মার্চ ফর গাজা গণজমায়েতের মঞ্চে বিএনপি, এনসিপি, লেবার পার্টি, ইসলামি আন্দোলনদলসহ দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। আয়োজকরা জানান, এই কর্মসূচির লক্ষ্য-গাজার নিরস্ত্র জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ, বিশ্বজনমত গঠন এবং মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে সোচ্চার হওয়া। একই সঙ্গে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ এর পেছনের কুশিলবদের বিচারের আওতায় আনতে বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানান তারা। 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ বিকেল পর্যন্ত চলে এই গণসমাবেশ। আয়োজনে ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী, শায়েখ আহমদউল্লাহসহ খেলোয়াড়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা একাত্মতা প্রকাশ করে সরব সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়া অংশ নেয় শিল্পী, কবি, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয় মুখ। সমাবেশ শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের চোখে ছিল অশ্রু। 

ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা, শিশু ও নারীদের মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকার করুণ বাস্তবতা হৃদয়ে নিয়ে মানুষ প্রার্থনা করেন শান্তির জন্য। মোনাজাতে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হওয়া, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহতদের সুস্থতা, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ, বিশ্ব নেতাদের বিবেক জাগ্রত হওয়া, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত আগ্রাসনের বিচার চেয়ে দোয়া করা হয়েছে।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]