ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বুধবার ● ১৮ জুন ২০২৫ ৪ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার বুধবার ● ১৮ জুন ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক : দীর্ঘ বাণিজ্যযুদ্ধ ও বিশ্বমন্দার শঙ্কা
এসএম শামসুজ্জোহা
প্রকাশ: বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৪২ এএম  (ভিজিটর : ১১৪)
রপ্তানিকারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ : সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগতে পারে তৈরি পোশাক খাতে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। সর্ব ব্যাপক এই শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় সবাই কোমর বেঁধে নেমেছে। অনেক দেশ আবার আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছে, যে কারণে তাদের ওপর শুল্কের খড়্গ অতটা মারাত্মক হয়নি। তবে আজ ৯ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি করতে হলে অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা রীতিমতো শঙ্কিত। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হওয়ায় তাদের এ পদক্ষেপে বিশ্বমন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এ পাল্টা শুল্ক আরোপের বিপরীতে যদি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে আরও শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে বাণিজ্যযুদ্ধ ঘনীভূত হবে।
তবে এরমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশের ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছে; সেটি সামলে নেওয়া খুব বেশি কঠিন হবে না। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এই শুল্কনীতিতে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে এবং যেকোনো বৈশ্বিক চাপে সরকার তা টিকে থাকতে সক্ষম হবে। উপদেষ্টা বলেন, আমাদের রপ্তানি বাজার বহুমুখী, সেই সঙ্গে উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছি। জানা গেছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। বেশিরভাগই তৈরি পোশাক খাতের পণ্য। ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্যের মধ্যে ৭৩৪ কোটি ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ট্রাম্পের এ শুল্ক আরোপের ফলে তৈরি পোশাক খাতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা।
তথ্যমতে, যেসব পণ্য ইতিমধ্যে জাহাজীকরণ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পথে রয়েছে সেগুলোতেও এ নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। যেসব পণ্য মার্কিন বন্দরে পৌঁছেছে কিন্তু এখনো শুল্কায়ন সম্পন্ন হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রেও নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। ফলে নতুন জটিলতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শাশা ডেনিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপে তৈরি পোশাক খাত মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে, বাংলাদেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা চাপের মধ্যে পড়বে। চীন থেকে বাংলাদেশে যেসব মার্কিন কোম্পানি বিনিয়োগ স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা করছিল তাদের উদ্যোগও থেমে যেতে পারে।’ এদিকে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপে ত্রুটি রয়েছে। কারণ তারা বাণিজ্য ঘাটতির ওপর ভিত্তি করে এ শুল্ক নির্ধারণ করেছে। এটি আদর্শ শুল্ককাঠামোর পরিপন্থী। কেননা বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে তুলা ও ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি করে সেটির ওপর মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ যে পোশাক রপ্তানি করে তাতে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। বাণিজ্য ঘাটতির ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের শুল্ক আরোপ অযৌক্তিক। 
এ বিষয়ে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘এভাবে গণহারে শুল্ক বসানোর ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মার্কিন ক্রেতারাও সমস্যায় পড়বেন। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ যে প্রক্রিয়ায় শুল্ক বসানো হচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নয়।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের ফলে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। আলোচনা করে শুল্কের আশু ধাক্কা সামলানোর উদ্যোগ নেওয়া, মার্কিন পণ্য আমদানিতে যে ৭৪ শতাংশ শুল্ক রয়েছে, তা যৌক্তিক হারে কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্র যেসব পর্যবেক্ষণ দিয়েছে যেসব বিষয়ে কার্যকর সংস্কারের ব্যবস্থা করে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো। যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপে স্পষ্টতই বিশ্বব্যাপী একটি বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা হলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুল্ক আরোপে পাল্টাপাল্টি ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরে বিশ্বব্যাপী যে বাণিজ্য উদারীকরণের সূত্রপাত হয়েছিল, ট্রাম্পের কলমের এক খোঁচায় তার অবসান ঘটল। এর ফলে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কার্যকারিতা অনেকখানি লোপ পেল। 
যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপে এক বছরের মধ্যে একটি বিশ্বমন্দা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। ১৯২৯ সালেও এমন হয়েছিল। এবার যুক্তরাষ্ট্র গড় শুল্ক ২.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে। এক লাফে আটগুণ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে যেসব মার্কিন কোম্পানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎপাদন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে, তারাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক পর্যালোচনা করছে এবং দুইটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব শুল্ক আরও যুক্তিসংগত করার উপায় খুঁজে বের করতে দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।’ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিষয়ে জানতে চায়লে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এ শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের বাজার অন্য দেশের দখলে চলে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে সমজাতীয় প্রতিযোগিতা অন্যদের নেই।’ তবে এ থেকে সান্ত্বনা পাওয়ার তেমন সুযোগ নেই বলে মনে করেন এ বিশেষজ্ঞ। তার মতে, ট্রাম্পের এ উদ্যোগের ফলে স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। ফলে পণ্যের চাহিদা কমবে। আর চাহিদা কমলে নিশ্চিতভাবেই রপ্তানি কমে যাবে।
ড. জাহিদ বলেন, তৈরি পোশাক খাতের ওপর ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। তাই এ খাতের উদ্যোক্তাদের উচিত যৌথভাবে ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করে বাড়তি শুল্ক তাদের পরিশোধ করার অনুরোধ জানানো। বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে সেগুলোর আর দাম কমানোর তেমন সুযোগ নেই। খুব সীমিত লাভে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা পোশাক রপ্তানি করে। দাম না কমালে ক্রেতারা অন্য দেশে যেতে চাইলেও পারবেন না। অন্য দেশে গেলে আরও বেশি শুল্ক দিতে হবে। তবে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার মোকাবিলা করতে পারেন।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]