গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা ও উপর্যপুরি বিমান হামলার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে বর্বরোচিত হামলা বন্ধের দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ও উত্তরের উদ্যোগে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সেইভ গাজা ও ফিলিস্তিন মুক্ত হোকসহ ইসরায়েল বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টু এবং প্লেকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ করেন তারা।
এছাড়াও বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শন করে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়। এসময় জামায়াত নেতারা বলেন, গাজাবাসী নারী ও শিশুকে হত্যা করে আইয়ামে জাহেলিয়াতের বর্বর যুগের ইতিহাসকে হার মানিয়েছে। গণহত্যা বন্ধ না হলে ইসরায়েলকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয়া নেতারা।
সোমবার মহানগরী উত্তর জামায়াতের উদ্যোগে রাজধানীর মহাখালী ওভারব্রিজ থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মগবাজার হাতিরঝিল মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত পথ সভার মাধ্যমে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ড. রেজাউল করিম।
এছাড়া, মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। এছাড়া, দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় জামায়াতের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিক্ষেভ সমাবেশে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা বন্ধে জাতিসংঘ ও ওআইসি চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ ইস্যুতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোও ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারেনি, যা দুঃখজনক। মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান মাদানী, মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসেন, ড. আবদুল মান্নান, সহকারী সেক্রেটারি শামসুর রহমান প্রমুখ।
বুলবুল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেন, কোনও এক উপদেষ্টা ফিলিস্তিনের পতাকার সঙ্গে দাঁড়িয়ে একটি ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে ছবি দিলেই সংহতি প্রকাশ হয়ে যায় না। সদিচ্ছা থাকলে জাতিসংঘের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিবাদ পাঠাতে হবে। তিনি বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়কে অবিলম্বে নেতানিয়াহুর লাগাম টেনে ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রাসুলের ভবিষ্যৎ বাণী অনুযায়ী ইসরায়েল ধ্বংস হয়ে যাবে। আর গাজা ও রাফা নিশ্চিন্ন করা যাবে না। যারা এ ধরনের অপচেষ্টা চালাবেন তারা টিকতে পারবেন না। মানবতাবিরোধী ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্চের বিষফোঁড়া ইসরায়েলকে বিশ্ব মানচিত্র থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানান।
এদিকে, বিক্ষোভ সমাবেশে মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ড. রেজাউল করিম বলেন, সারা পৃথিবীর কাছে কুখ্যাত সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে খ্যাত ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজাবাসী নারী ও শিশুকে হত্যা করে আইয়ামে জাহেলিয়াতের বর্বর যুগের ইতিহাসকে হার মানিয়েছে। ইসরায়েল গণহত্যা পরিচালনার মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।
এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে মুসলমানদের গুঁড়িয়ে দিতে হবে। সামাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত,শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জিয়াউল হাসান, মুহিবুল্লাহ,জামাল উদ্দীন,ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার,নাসির উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান,জননেতা অধ্যক্ষ আশরাফুল হক, ছাত্রনেতা আনিসুর রহমান, সালাহ উদ্দিন প্রমূখ। ড. রেজাউল করিম বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা শুধু ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করতে চাই না।
পৃথিবীর বুকে যেখানেই ইহুদি থাকবে সেখানেই তাদের বয়কট করা হবে। তরুণ যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ছাত্রশিবিরের সাবেক এই কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ হয়ে তৈরি হওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েলকে বয়কট করে গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাসী ইসরায়েলের কালো থাবা থেকে তাদের মুক্ত করতে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দক্ষতার মাধ্যমে চূড়ান্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তিনি জাতিসংঘ ও ওআইসিকে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলকে বয়কট এবং জেনোসাইডের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
ইন্ধনদাতা-সমর্থন দেওয়া রাষ্ট্রগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এ জামায়াত নেতা বলেন, অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, হামলা বন্ধ করুন। যদি তা করা না হয়, তাহলে গোটা মুসলিম উম্মাহ দুর্বার বৈশ্বিক আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে। অন্যদিকে, গণহত্যা বন্ধ-স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
সোমবার এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরমধ্যে রয়েছে, গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন এবং সর্বস্তরে অফিস-আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান। মঙ্গলবার ৮ এপ্রিল দেশের সব মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।
আগামী ৯ এপ্রিল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভবনের ছাদে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ‘সলিডারিটি উইথ প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচি পালন। আগামী ১০ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান। আগামী ১১ এপ্রিল জেলা পর্যায়ে ‘ম্যাস মুভমেন্ট’ কর্মসূচি পালন।
ছাত্রশিবির নেতারা বলেন, গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা ও গণহত্যা মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধ। এ বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঘোষিত কর্মসূচিগুলোতে ছাত্রসমাজসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ কামনা করছি।