ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শনিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ৬ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার শনিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




স্কুল ব্যাংকিং : সঞ্চয় বাড়ছে শিক্ষার্থীদের
ভোরের ডাক রিপোর্ট
প্রকাশ: শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫, ১১:২২ এএম  (ভিজিটর : ৯২)
ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১০ হাজার ৪৩৯টি নতুন স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে

গত কয়েক বছরে দেশে স্কুল ব্যাংকিং ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে দেশের স্কুল শিক্ষার্থীরা। এর মধ্য দিয়ে তারাও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে মাঝে কিছুটা ভাটা পড়লেও আবার বাড়ছে তাদের হিসাব সংখ্যা; সেইসঙ্গে আমানতও। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংকের ব্যাপক প্রচারণা ও সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়ের মানসিকতা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১০ হাজার ৪৩৯টি নতুন স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলো স্কুল ব্যাংকিংয়ের পরিধি বাড়াতে প্রতিনিয়ত কাজ করছে। স্কুল ব্যাংকিং প্রকল্পের আওতায় অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ও মোট সঞ্চিতি আরও বেশি হবে। এর মাধ্যমে একদিকে এসব শিক্ষার্থীর সঞ্চয়ের মানসিকতা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতেও তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তথ্যমতে, স্কুল ব্যাংকিংয়ের বেশিরভাগ হিসাবই বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খোলা হযেছে। জুন পর্যন্ত মোট হিসাবের ৭১ দশমিক ৬৯ শতাংশ হিসাবই এসব ব্যাংকে খোলা হয়েছে। আর মোট স্কুল ব্যাংকিংয়ের ৮০ শতাংশ আমানতও রয়েছে এই ব্যাংকগুলোতে। এর পরিমাণ ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকে রয়েছে ৫৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ হিসাব। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিসাব রয়েছে ডাচ-বাংলায়, ৯ লাখ ৯৮ হাজার ২৭০টি। এসব হিসাবে আমানত রয়েছে ৫৪১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

হিসাব অনুযায়ী আগের প্রান্তিকের তুলনায় স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ০.২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশজুড়ে স্কুল ব্যাংকিং সম্মেলন ফের শুরু হওয়ার কারণে এই বৃদ্ধি ঘটেছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর মাসে স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে দেশের সব শিক্ষার্থীর মোট আমানত ছিল দুই হাজার ৮৭ কোটি টাকা এবং নভেম্বরে কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে আমানত কমলেও ডিসেম্বরে এসে কিছুটা বেড়েছে। জানা যায়, বর্তমানে দেশের ৫৬টি ব্যাংকের মধ্যে স্কুল ব্যাংকিং চালু করেছে। ইয়ং স্টার, ফিউচার স্টার, প্রজন্ম স্টার ইত্যাদি নানা আকর্ষণীয় নামে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিম চালু করেছে ব্যাংকগুলো। স্বভাবতই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাতে আকৃষ্ট হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কিছু করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে ব্যাংকগুলোকে। সত্য বটে, দেশে সঞ্চয়ের বিপরীতে সুদের হার অনেক কম। 

অথচ আমানত আকৃষ্ট করতে হলে সুদের হার বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই বললেই চলে। সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয়ের এহেন আর্থিক নীতি সমালোচিতও হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। সে অবস্থায় সঞ্চয়ের বিপরীতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সুদের বিকল্প হিসেবে কিছু প্রণোদনা দেয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখতে পারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অবশ্য কতিপয় ব্যাংক প্রতিবছর দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধাসহ বিভিন্ন বৃত্তি দিয়ে থাকে। এর আওতা আরও সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। মোটকথা, সঞ্চয়ের প্রতি আগ্রহী ও আকৃষ্ট করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। আর তাহলেই স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাফল্য সুনিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে শিশু ও কিশোর শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। তদুপরি মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও বৃত্তি পেয়ে ইতিবাচক অবদান রুখতে পারে এ জাতীয় সঞ্চয়।

ব্যাংকাররা জানান, সাধারণত বছরের শুরুতে কিংবা শেষের দিকে অনেকের টাকা উত্তোলনের চাপ থাকে। অনেকে জানুয়ারি-মার্চের সময়ে বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বেড়াতে যান। আবার অনেকে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করতে গিয়ে আমানত ভাঙেন। কিন্তু বছরের পুরো সময়জুড়ে শিক্ষার্থীদের আমানত কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে নিয়মিত খরচ মেটাতে হিমশিম অবস্থার মধ্যেই আমানত উত্তোলন করতে হচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি ও ঊর্ধ্ব মূল্যস্ফীতি এমনটাই ইঙ্গিত করছে। এত কিছুর পরও ফেব্রুয়ারিতে যে উন্নতি হয়েছে; তা বেশ ইতিবাচক। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুখপাত্র) আরিফ হোসেন খান বলেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে আমাদের ব্যাংক খাতের ওপর অনেক গ্রাহক আস্থা হারিয়েছিল। এর প্রভাবও কিছুটা স্কুল ব্যাংকিংয়ে পড়ে। তবে এখন তা ধীরে ধীরে কেটে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। সে কারণে শিক্ষার্থীদের আমানত ও হিসাব সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা ও তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হয়। এ কার্যক্রমের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের আরও উপযোগী করে তোলা। ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়। পরের বছর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যাংকগুলোতে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭টি হিসাব খোলা হয়। এ পর্যন্ত ৫৯টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।এই অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন- সব ধরনের ফি ও চার্জের ক্ষেত্রে রেয়াত পাওয়া, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া, ন্যূনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় ও স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ। মাত্র ১০০ টাকা আমানত রেখেই এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]