ঈদ মানেই নতুন পোশাক কেনার ধুম। ফলে এবার ঈদে দেশে তৈরি পোশাকের চাহিদা বেশি ক্রেতাদের। কিন্তু গতবারের চেয়ে দেশি পোশাকের দাম বেড়েছে ফ্যাশন হাউসগুলোতে। ফলে এসব পোশাক ক্রয়ক্ষমতার বাইরে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তদের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নামীদামি ডিজাইন দিয়ে তৈরি করা হয় এই পোশাক। নানা কারণে অন্য বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফলে ফুটপাতের দিকেই ঝুঁকছেন মধ্যবিত্তরা। কারণ সেখানে সাদ্যের মধ্যে সব ধরনেরই পোশাকই মিলছে।
পোশাক তৈরির জন্য ব্যবহৃত জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় এবার ঈদে নতুন পোশাকের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ বলে জানান বিভিন্ন মার্কেটের দোকানি, ফ্যাশন হাউস ও শপিংমল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পোশাক তৈরির সুতা, রং, কেমিক্যালসহ বিভিন্ন উপাদানের দাম বাড়ার অযুহাত দেখাচ্ছেন তারা। তাই পোশাকের কস্টিং মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। রাজধানীর মৌচাকের ফ্যাশন হাউস একান্ত আপন-এর এক কর্মী জানান, গত ঈদে যে দেশি পোশাক ৭শ’ টাকা বিক্রি করতাম এবার সেই পোশাক ৯শ’ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
ফ্যাশন হাউসগুলোতে আসা ক্রেতারা জানিয়েছেন, সব কিছুর দাম বাড়ার অযুহাতে অন্য বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন মার্কেটের দোকানি, পোশাক তৈরির সুতা, রং, কেমিক্যালসহ বিভিন্ন উপাদানের দাম আগের থেকে বেড়েছে। ফলে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই। রাজধানীর মালিবাগ সুপার মার্কেটের এক ক্রেতা বলেন, গত ঈদের চেয়ে এবার তুলনামূলক পোশাকের দাম একটু বেশি। গতবার যে দেশি পোশাক ১১০০ টাকা বিক্রি করছি এবার সেই পোশাক ১৪০০ টাকার উপরে বিক্রি করতে হচ্ছে। না হয় আমাদেরও লাভ থাকে না। তবে তুলনামূলক ভারতীয় পোশাকের দাম কম আছে।
বিক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, মানুষের আগ্রহ বাড়ছে দেশি পোশাকের প্রতিই। কিন্তু ভ্যাট দিতে হয় বেশি। অন্যদিকে বিদেশি পণ্যের জন্য ভ্যাট কম। এই বৈষম্যের কারণে দেশি পোশাক পিছিয়ে পড়ছে বলে তারা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের তৈরি কাপড়ের রং ও কাপড়ের গুণগতমান ভালো রাখা হয়েছে। ক্রেতারা এখন সবাই অনেক বেশি সচেতন। যার কারণে তুলনামূলক নিম্নমানের কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করলে তার চাহিদা থাকে না। ফলে দেশি পোশাকের দাম কিছুটা বেড়েছে।
দেশি ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান অন্যমেলা, নিত্য উপহার, হযবরল, সাদাকালোসহ বড় ফ্যাশন হাউসগুলোতে ঈদ ঘনিয়ে আসায় এরই মধ্যে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা।
হাউসগুলোতে সাজানো ডামির গায়ে শোভা পাচ্ছে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক। পোশাকের দাম বাড়ানোর ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ বিপাকে পড়েছে বলে জানালেন অনেকে। টুইন টাওয়ার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি পোশাকের চেয়ে ভারতীয় পোশাকের তুলনামূলক দাম কম। ফলে দাম নিয়ে ক্রেতাদের সাথে আমাদের মতানৈক্য দেখা দিচ্ছে।
এদিকে, দেশের ফ্যাশন হাউজগুলো ট্রেন্ডের বিষয়টি মাথায় রেখেই সাজিয়েছে ঈদ কালেকশন। ঝলমলে পোশাকে, সবার মাঝে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে নতুন প্রজন্মের আগ্রহটা থাকে বেশি। তবে, এথনিক বা মোঘল আমলের স্টাইলিশ পোশাকও রয়েছে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায়। আর তা হতে হবে ট্রেন্ডি ফ্যাশনের। তাই এবার ঈদে ছেলেদের পোশাকে এগিয়ে আছে ওয়েস্টার্ন এবং এথনিক পোশাক। ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য পোশাকের নকশায় আনা হয়েছে একটু রাজকীয় ঢং।
দোকানীরা বলছেন, প্রতিটা কালেকশনে ফেব্রিক সিলেক্ট করার সময় সবার আগে মাথায় থাকে কাস্টমারের লুক ও কমফোর্টের বিষয়টি। ভাবতে হয় আর্থিক দিকটি নিয়েও। আর নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা না হলে যেন পুরো সাজটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আর এবারও নিত্যনতুন ডিজাইনের জুতার পসরা বসেছে নামিদামি সব ব্র্যান্ডের শোরুমে। পাঞ্জাবির সঙ্গে পরার জন্য বরাবরই কলাপুরি ও নাগরা পছন্দের তালিকায়। তবে এখন লোফার, স্নিকারও পরেন অনেকে। ছেলেদের ফ্যাশনে প্রাধান্য পেয়েছে হাত ঘড়িও। তবে সবকিছুরই দাম তুলনামূলক বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।