প্রকাশ: বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ১১:২৯ এএম (ভিজিটর : ২৯৩)
দু’টি নতুন আইনসহ ৬টি আইনের সংশোধন হচ্ছে

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব ছিল। এই সুযোগে প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে কাজ করেছে; তাতে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সর্বত্রই খারাপ অবস্থা বিরাজ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি বের করতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। অর্থনীতি নিয়ে সরকারের শ্বেতপত্রে দেশের অর্থ লুুটপাটের চিত্র উঠে আসে। সেখানে দেখা গেছে, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা অপচয় বা নষ্ট হয়েছে। গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর ৪০ শতাংশ পর্যন্ত লুটপাট করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে মূলত রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং বাড়তি খরচ দেখিয়ে এই বিপুল অর্থ লুটপাট করেছেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও সুবিধাভোগীরা। আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দুটি নতুন আইন প্রণয়নসহ ৬ আইন সংশোধন হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট ২০২৫ (বাস্তবায়নকাল : ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে এপ্রিল ২০২৫) এবং অপরটি হচ্ছে ডিসট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট (অক্টোবর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৬)। সব কটি আইনেরই খসড়া প্রণয়নের কাজ বর্তমানে চলমান। ইতোমধ্যে কোনো কোনোটির খসড়া চূড়ান্ত করে এর ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য খসড়া আইনটি বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
জানতে চায়লে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দেশের আর্থিক খাত ও ব্যাংকগুলো ঠিক করায় কঠোর নজর দেওয়া হচ্ছে। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কার রাজনৈতিক দল এসে করবে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘শর্টে আমার ফোকাস হলো ফিন্যানশিয়াল সেক্টর, ব্যাংকগুলো ঠিক করা। বাজে ব্যাংক আছে, বোর্ডের ঝামেলা আছে, সেগুলো ঠিক করা। খেলাপি ঋণ ছিল ১৬ শতাংশ। এখন কোন কোন ব্যাংকে যেন ৮০ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়েছে।’ তার সময়ে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ তুলে ধরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার ২৮ হাজার বা ২৯ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ছিল। আজকে তারা বলে আড়াই লাখ কোটি টাকা। তো এখন আপনার ডিপোজিটের টাকা ফেরত দিতে হবে না?’ ভ্যাট বৃদ্ধিসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ভ্যাট না বাড়িয়ে বিকল্প ছিল না। তাৎক্ষণিক কর বাড়ানোর সুযোগ ছিল না। ১২ হাজার কোটি টাকা খুব বেশি নয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন আইন প্রণয়ন এবং পুরনো আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আইনগুলো তৈরি ও সংশোধনের কাজ শেষ হলে তা আর্থিকখাতের ভিত্তিকে মজবুত ও শৃঙ্খলায় আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট ২০২৫ এর চূড়ান্ত খসড়া ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং খসড়ার ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য তা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশও করা হয়েছে। অন্য দিকে ডিসট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে এবং খসড়ার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত পাওয়া গেছে। মতামতের ভিত্তিতে একটি সভা হয়েছে; আরেকটি সভা দ্রুতই করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের রিসোর্স গ্যাপ অনেক বেশি। এ জন্য আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবির সহায়তা নিতে হয়েছে। আমাদের ঋণ শোধ করতে হয়, কোনো দিন খেলাপি হয়নি। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা আমাদের সাহায্য করছে।’ আর্থিক ও ব্যাংকিংখাতে যে ছয়টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন; বীমা আইন ২০১০। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ এবং বীমা করপোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধন। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি আইন ২০০৬ ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা ২০১০ সংশোধন; প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০ যুগোপযোগীকরণ ও গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন। ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন (ডিসেম্বর ২০২৪-এপ্রিল ২০২৫): ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট এর কিছু কিছু ধারার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইনটি অধিকতর যাচাইপূর্বক অধ্যাদেশ আকারে খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৫৮ থেকে ১০০ ধারা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৫) : আইনের খসড়াটি বিএসইসি পুনরায় পর্যালোচনা করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাবে বলে জানা গেছে।
বীমা আইন ২০১০, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ এবং বীমা করপোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধন (ডিসেম্বর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৫) : এ দু’টি আইন সংশোধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি আইন ২০০৬ ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি বিধিমালা ২০১০ সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৬) : সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত ডিসেম্বরে অংশীজনদের সাথে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ আলোচনা শেষে তা বোর্ডসভায় উপস্থাপন কর হবে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০ যুগোপযোগীকরণ (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫) আইনটির খসড়া প্রণয়ন কার্যক্রম চলমান। এ ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার বলেন, এডিবি সব সময় কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। যেটা অন্যদের ক্ষেত্রে কম দেখা যায়। তিনি বলেন, এডিবি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সহযোগী। পানিনিষ্কাশন কার্যক্রমে তারা বড় অর্থায়ন করেছে। দারিদ্র্য নিরসনে তাদের আরও কাজের সুযোগ আছে। পিআরআই চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগের জন্য আমরা অর্থায়ন খুঁজছি। এডিবি আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থা অর্থায়নে পিছিয়ে গেলেও এডিবি কখনো এমনটা করেনি। সামনে নীতি ও আইনকানুন প্রয়োগ এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করতে পারে এডিবি।