প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ১২:০৪ পিএম (ভিজিটর : ৮১)
*বডি সংস্কার ও সাজসজ্জার কাজ প্রায় শেষ, যানগুলোর অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ
*কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারি বিআইডব্লিউটিএর
আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঈদ সার্ভিসের নামে শতাধিক ফিটনেসবিহীন লঞ্চ নামানোর উদ্যোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু লঞ্চ মালিক। এসব ফিটনেসবিহীন লঞ্চ যাত্রী সাধারণের কাছে আকর্ষনীয় করতে বডি সংস্কার ও সাজসজ্জার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। ঈদের অতিরিক্ত যাত্রী আনা-নেয়ার ভিড় সামলাতে এসব লঞ্চ নৌপথে চলাচল করার কথা রয়েছে। তবে মেরামতের পরও যে লঞ্চগুলো বিভিন্ন রুটে নামবে তার সবই ফিটনেসবিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে সহজেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। তারা এসব লঞ্চকে মরণ যান বলে আখ্যায়িত করছেন। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রতিষ্ঠানটি পক্ষ থেকে কোনো অবস্থাতেই ফিটনেসবিহীন জলযান নৌপথে চলাচল না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ নির্দেশনা কতটুটু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব লঞ্চের তলায় ফুটো, দীর্ঘ ফাটা, অধিকাংশ বডিতে জং ধরা ছিল। ঈদে যাত্রী বহন করতে ফুটোগুলোকে ঝালাই দিয়ে জোড়া দেওয়া এবং জং ধরা বডি ঘষেমেজে রং করার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। ঈদ সার্ভিসের নামে নৌ-রুটে নামানো হবে এসব লঞ্চ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন চলাচলের অযোগ্য এমন লঞ্চ ঈদে নৌপথে নামানো হলে যাত্রীদের জন্য নৌযানগুলো মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়াবে। এর বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে হয়তো এর খেসারত দিতে হবে সবাইকে। জানা গেছে, ঈদের তিন-চারদিন আগ থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও ঈদে বাড়ী ফেরার জন্য যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে বাড়ানো হচ্ছে নৌযানের সংখ্যা। এবার ঈদে শতাধিক নৌযান বাড়ানো হবে। তবে পদ্মাসেতু স্থাপনের পর দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে বরিশালসহ কয়েকটি রুটে নৌপথে যাত্রীদের একটু চাপ কমলেও ভোলার বিভিন্ন রুটে চাপ বেড়েছে অনেক। ফলে বর্তমানে নৌপথে যেসব যান আছে তাও নৌপথের যাত্রীদের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রতিদিন যাতায়াত করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। আর ঈদে যাত্রী কয়েকগুন বেড়ে যায়। ফলে অন্যান্য রুটের তুলনায় এ রুটে অতিরিক্ত লঞ্চ চলাচল বেশি করবে। এরমধ্যে অধিকাংশই যানগুলো ফিটনেসবিহীন থাকার দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছে যাত্রীরা। অভিযোগ রয়েছে, ঈদের সময় এলেই একশ্রেণীর অসাধু মালিকরা অকেজো লঞ্চগুলোকে কোনো মতো মেরামত ঈদ সার্ভিস নামে নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও চলাচলের অযোগ্য নৌযানগুলোকে ঘষা-মাজা ও ছোট-বড় ফুটো জোড়াতালি দিয়ে যাত্রী বহনের বাণিজ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। যাত্রী সেবা নামে ঝুঁকিপূর্ণ এসব নৌযান নামানো হলে যানগুলো যাত্রীদের মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাঁড়াবে। অভিযোগ উঠেছে, বিআইডব্লিউটিএসহ যারা তদারকি প্রতিষ্ঠান এসব প্রতিরোধের কাজ করছে তাদেরই কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করেই ঝুঁকিপূর্ণ এসব নৌ-যান নদীতে নামানোর পস্তুতি নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা ও কিশোরগঞ্জের নৌপথ দিয়ে প্রতি বছর ঈদে বাড়ী ফিরে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। এবারও প্রায় ৮০ লাখ মানুষ নৌপথে বাড়ি ফিরবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রুটেগুলো চলাচলের উপযুক্ত হলেও নৌযান নিয়ে যাত্রীদের রয়েছে নানা ভয়-ভীতি। কতটা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবে এমনটাই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএ এবং এনজিও সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোতে যাতায়াতকারী লঞ্চের শতকরা ৭৫ ভাগেরই ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। ৮০ ভাগ লঞ্চের তৈরি অবকাঠামোর সঙ্গে মূল নকশার মিল নেই। রাজধানীর পোস্তগোলা ও কেরানীগঞ্জের ডক ইয়ার্ডগুলোতে পরিত্যক্ত নৌযানগুলো জোড়াতালি দিয়ে চলাচল-উপযোগী করার কাজ করতে দেখা গেছে। দীর্ঘদিন অযত্ম-অবহেলায় পড়ে থাকা এসব লঞ্চে ওয়েল্ডিং ও রঙ লাগানো হচ্ছে। এ জন্য বাড়তি শ্রমিকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বরিশালগামী যাত্রী কবির হোসেন জানান, প্রায় বছরই নদীতে লঞ্চ ডুবছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। অপরদিকে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা তীরের ডকইয়ার্ডগুলো পুরনো লঞ্চ সংস্কার, মেরামত ও রং করার কাজ প্রায় শেষ করা হয়েছে। অনেকে ডকইয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে নদীতেই লঞ্চ রং ও সংস্কারের কাজ করছেন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, নৌ পথে সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ নৌ চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রস্তুতিমূলক সভায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, কোনো অবস্থাতেই ফিটনেসবিহীন কোনো জলযান নৌপথে চলাচল করতে পারবে না। কউ চালালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া, ঈদ যাত্রায় নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। প্রত্যেক লঞ্চের নির্ধারিত স্থানে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার রেট চার্ট প্রদর্শন করতে হবে। অন্যথায় মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দায়ী ব্যক্তিদের শুধু জরিমানাই করা হবে না বরং লঞ্চের রুট পারমিটও বাতিল করা হবে। কোনো লঞ্চ বা ফেরি সিরিয়াল ব্রেক করে চলতে পারবে না। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এসব ফিটনেসবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ দিয়ে যাত্রী বহনতো দূরের কথা, কোনো লঞ্চ ঘাটেই ভীড়তে নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে যাত্রীরা। এসব নৌযান দিয়ে ঈদে কতটা নিরাপত্তে বাড়ী ফিরতে পারবে তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এসব লঞ্চ যাতে চলাচল করতে না পারে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।