প্রকাশ: রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ১২:০৪ পিএম (ভিজিটর : ১৪৮)

জীবনযাত্রার পরিবর্তিত ধরন, ভেজাল, দূষণসহ আরও অনেক কারণে দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কিডনি রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসার এক পর্যায়ে তাদের একটি বড় অংশই ডায়ালিসিসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। নিয়মিত এবং কারো কারো প্রতি সপ্তাহে দু-তিনবার ডায়ালিসিস করাতে হয়। কিন্তু সারা দেশে ডায়ালিসিসের সুযোগ-সুবিধা সহজলভ্য নয় এবং বেশির ভাগ দরিদ্র রোগী এর ব্যয় বহন করতে পারে না। ফলে চিকিৎসার অভাবে কিংবা প্রায় বিনা চিকিৎসায় প্রতিবছর বহু রোগীর মৃত্যু হয়। সেই তুলনায় কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা অনেক সহজ। নিয়মিত ডায়ালিসিস করানোর ঝামেলা থাকে না। খরচও অনেক কম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিবছর যত রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বা প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন, বর্তমানে প্রতিস্থাপন হয় তার মাত্র ৩.৬৫ শতাংশ। দেশে প্রতিবছর অন্তত ১০ হাজার মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয় গড়ে সর্বোচ্চ ৩৬৫ জনের। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে দেশে আইনগত নানা জটিলতা রয়েছে। ফলে দাতা বা প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি কম পাওয়া যায়। এ কারণে সচ্ছল রোগীদের অনেকে কাছের দেশগুলোতে চলে যায়। অন্যদিকে দরিদ্র রোগীরা নিরুপায় হয়ে ডায়ালিসিসের আশ্রয় নেয়, কিন্তু বেশিদিন তারা তা চালিয়ে যেতে পারে না। তারা শরীরে যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বর্তমানে কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে ৪০ হাজার রোগী ডায়ালিসিসের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে একবার ডায়ালিসিসের জন্য রোগীকে দিতে হয় ৪৮৬ টাকা। অনেক বেসরকারি হাসপাতালে একবার ডায়ালিসিস সেবা নিতে খরচ হয় তিন হাজার টাকার মতো। নামি-দামি হাসপাতালে খরচ আরো বেশি। কারো কারো সপ্তাহে দু-তিনবারও ডায়ালিসিস করাতে হয়। দরিদ্র রোগীদের পক্ষে এই ব্যয় নির্বাহ করা প্রায় অসম্ভব। অথচ ডায়ালিসিস নিয়মিত না হলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। এ থেকে কিডনি রোগীদের রক্ষায় কিডনি প্রতিস্থাপনের আইনি ও প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। তা ছাড়া দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত রোগীদের কিডনি ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন।
কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় লোকবল, রক্তের টাইপিং, টিস্যু টাইপিং-ক্রসম্যাচ যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রয়োজন। আমরা মনে করি, সারা দেশের সরকারি সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ নির্ণয়ে আরো বেশি জোর দিতে হবে।