ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বুধবার ● ১৯ মার্চ ২০২৫ ৫ চৈত্র ১৪৩১
ই-পেপার বুধবার ● ১৯ মার্চ ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন
ধর্ষণের বিভৎসতায় স্তম্ভিত জাতি, লাঞ্ছিত মনুষ্যত্ব
আবদুর রহমান মল্লিক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ১১:৪৩ এএম আপডেট: ১৩.০৩.২০২৫ ২:১৬ পিএম  (ভিজিটর : ১৯৫)
বিচারহীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতায় বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা

একের এক নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনায় সারা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত। ধর্ষণের সব বিভৎস ঘটনায় স্তম্ভিত হয় বিবেক, অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয় মনুষ্যত্ব। রোমহর্ষক ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তারা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একটি সভ্য সমাজের জন্য ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা অত্যন্ত পৈশাচিক ও মন্দ দৃষ্টান্ত। মাত্র চার বছরের শিশুর প্রতি যৌণ নির্যাতনের ঘটনা আমাদের হৃদয়ের মর্মমূলে গভীরভাবে আঘাত করে। বিশেষ করে মাগুরায় ৮ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে দেশবাসী। স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে ধর্ষণ, মা-বাবাকে বেঁধে মেয়েকে ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণের একের পর এক ঘটেই চলেছে। 
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র - আসক এর তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২৯৪ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৬ জন, যার মধ্যে ৪৪ জন শিশুও রয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৯ জন নারী। এদের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২১ টি এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৮ জন । ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের শিকার ৫৭ জনের মধ্যে ১৬ জন শিশু, ১৭ জন কিশোরী রয়েছেন। অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিন জন কিশোরী ও ১৪ জন নারী, ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন দুই জন নারী। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা ১৯টি, যৌন হয়রানি ২৬টি, শারীরিক নির্যাতনের ৩৬টি ঘটনা ঘটেছে এই মাসে।
দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত গত কয়েকদিনের সংবাদ আমাদের আরো উদ্বিগ্ন করে তোলে। মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ‘ধর্ষণের শিকার’ শিশু (৬ মার্চ), চিপস কিনে দিয়ে প্রতিবন্ধী তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ (৭ মার্চ), খাবার ও বেলুনের লোভ দেখিয়ে দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, বৃদ্ধ গ্রেপ্তার (৮ মার্চ), ফরিদপুরে সাইকেলে ঘোরানোর কথা বলে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, কিশোর আটক (৮ মার্চ), শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, সালিসে দেড় লাখ টাকা জরিমানা (৮ মার্চ), এবার গাজীপুরে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, ভিডিও ধারণও করলো ধর্ষক (৯ মার্চ), সীতাকুণ্ডে সৈকতে বন্ধুকে বেঁধে রেখে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মায়ের মামলা (৯ মার্চ), নরসিংদীতে ৩ দিন আটকে রেখে গর্ভবতী নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ (৯ মাচ) এসব সংবাদ শিরোনাম আমাদের আত্মগ্লানিতে নিমজ্জিত করে। 
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৪০১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৪ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন সাত জন। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ১০৯ জন। এর মধ্যে একজনকে ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালে ২১ জন নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।  
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ বছরের ফেব্রুয়ারির ২৮ দিনে ধর্ষণের অভিযোগে দিনে গড়ে ১২টি মামলা হয়েছে। আগের বছরের ফেব্রুয়ারির ২৯ দিনে এই সংখ্যা ছিল একই। গত বছর সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৭ হাজার ৫৭১টি মামলা হয়েছে। এই আইনে এ বছরের জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি। গত বছরের জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩টি। আদালতে বাড়ছে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা।  ২০২৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্তাধীন ব্যতীত প্রকৃত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজার ১৩৪টি। এর মধ্যে কেবল পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩২ হাজার ৯৭২টি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত মামলার সংখ্যা এক হাজার ৬০৭টি। দেশের সবচেয়ে বেশি বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ঢাকায়। ঢাকার ৯টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৫ হাজার ২১৩টি। এর মধ্যে তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা ১ হাজার ৫৫৬টি। আর পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারাধীন মালার সংখ্যা ৩ হাজার ১৬২টি। স্থগিত রয়েছে ২৯৩টি মামলা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিচারাধীন মামলার সংখ্যা চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। এই জেলার ৭টি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৭ হাজার ৭৯৪টি। তদন্তাধীন ৪০৩টি এবং স্থগিত রয়েছে ২৫০টি মামলা। এর মধ্যে পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২ হাজার ৮৫টি। তৃতীয় সর্বোচ্চ বিচারাধীন মামলার সংখ্যা গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। এই জেলার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৬ হাজার ৬৯৫টি। তদন্তাধীন ৮০৪টি এবং ১৭টি মামলা স্থগিত রয়েছে।  কেবল পাঁচ বছর ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এক হাজার ২১৫টি।
আলোচিত ধর্ষণ মামলা কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুু হত্যার ৯ বছর। বিচার তো দূরের কথা এখনো মামলার তদন্তই শেষ হয়নি। মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। ২০২০ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে এক তরুণীকে (২০) ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় ছয় আসামি ও সন্দেহভাজন দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র‌্যাব। আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন। আসামিদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় আটজন আসামির মধ্যে ছয়জনের ডিএনএ’র মিল পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ৩রা ডিসেম্বর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পুলিশ। মামলাটি এখনো সিলেট জেলা জজ কোর্টে বিচারাধীন।
জানা গেছে, নারী-শিশু আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। বলা চলে গত এক যুগে দেশে ঘটে যাওয়া আলোচিত ধর্ষণের একটি মামলারও বিচার চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। এই যদি হয় বিচারের অবস্থা তাহলে ধর্ষণ থামবে কী করে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করে তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। আর ধর্ষণের মামলার বিচার ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করা হবে। কিন্তু এসব আইন করে কী আর ধর্ষণের বিচার নিষ্পত্তি হবে-এমন প্রশ্ন এখন নাগরিক মহলে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ একটি পুরুষতান্ত্রিক দেশ। পুরুষরা এখানে মেয়েদের সমতা দেয় না। এখানে ল অ্যান্ড অর্ডার সিচ্যুয়েশন ভালো নয়। বিচারহীনতার সমস্যা প্রকট। ধর্ষকদের শাস্তি হয় না। মাত্র ৩% বিচার পায় ৯৭% বিচার পায় না। তদন্তকাজে পুলিশ টাকা খেয়ে ধর্ষকের পক্ষে কাজ করে। বিচারপ্রার্থীকে উল্টো হুমকি ধামকি দেয়। বিচারকরা ভিক্টিমকে অদ্ভুত প্রশ্ন করেন। নুসরাত হত্যার মতো আলোচিত ঘটনার আসামির পাবলিকলি ফাঁসি দেওয়া দরকার।  





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]