বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষাপীঠ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক সময় রাজনীতিক তৈরির কারখানা ছিল। এদেশের সব আন্দোলন সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই সব সময় আগ্রহী ভ‚মিকা পালন করেছে। ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্তরাই পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে এসে তাকেন।
তবে ৪৭ উত্তরকালে ৫০/৬০ এমনকি ৭০ দশক পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতির যে ধারা ছিল তা আর পরবর্তীতৈ থাকে না। এর সূচনা হয় স্বাধীনতা উত্তরকালে। এ সময় ছাত্রদের হাতে অস্ত্র চলে আসে। ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৭ শিক্ষার্থী খুন হন। এরপর আশিরদশকে এসে পরিস্থিতি চ‚ড়ান্ত অবক্ষয় শুরু হয়। এ সময় অস্ত্রের সাথে মাদক চাঁদাবাজি ছিনতাই প্রভৃতি যোগ হয়। তখন থেকে চারদশক ছাত্র রাজনিিতর পতনই ঘটেছে। বিশেষ করে সর্বশেষ দেড়দশক একেবারেই পঁচে গেছে চাত্র রাজনীতি।
প্রতিপক্ষকে কোন সুযোগ না দেয়া ছাত্র নেতারা টেন্ডারবাজি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মাদক, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির সাথে জোর করে মেয়েদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করাও ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে।
এর প্রধান কারণ ক্যাম্পাসে সুস্থছাত্র রাজনীতির পরিবেশ না থাকা এবং ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হওয়া। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের পর দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপট বদরে গেছে। বদলেছে বিশ্ববিদ্যালয়েরও পরিবেশ। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এখন ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে তো কোন সমস্যা নেই।ঠ এখন ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়া হোক। দেশে সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির ধারা ফিরে আসুক।
বিগত ১৬ বছর হলগুলোতে ‘গেস্টরুম’ নামে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রদের যে নির্যাতনের সংস্কৃতি ছিল সেটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন হলে আসন পাচ্ছেন। ছাত্রদল ছাত্র শিবিরও বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন মুক্ত পরিবেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে। এখনই উপযুক্ত সময় ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেয়ার।
দেশের রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের প্রভাব বেড়ে যাওয়াতে সাবেক রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়েছিলেন, যার প্রেক্ষিতে এবং এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে রিট হওয়ার ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ। যাতে নুরুল হক নূর ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে ছাত্রলীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেন। নূর এখন আর ছাত্র নেই। ওই ডাকসুর কোন তৎপরতা এখন আর নেই। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নেই।
পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ প্রায় সবগুলো ছাত্র সংগঠন চাত্র সংসদ নির্বাচন দাবি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগ উচ্ছেদ প্রথম হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ১৬ জুলাই রাতে।
শুধু মাত্র জবি এবং ঢাবিতে ছাত্র পরিষদ; নির্বাচনের ব্যাপারে সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকসু নির্বাচনের দাবিতে ২০টি কর্মসূচি পালিত হয়েছে, কিন্তু কোন অগ্রগতি হয়নি। আমরা মনে করি শুধু চাকসু নয়, সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পর্যায়ক্রমে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়া উচিত এবং তা দ্রুততম সময়ে।