প্রকাশ: রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:০৯ এএম (ভিজিটর : ১০৬)
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু বড় বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। যার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রধান দুই সমস্যা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার পর আস্তে আস্তে বেশ উন্নতি হয়েছে। যদিও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।
বর্তমানে সরকার ‘ডেভিল হান্ট’ নামে একটা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব কারাপ অবস্থায় নেই। তবে মূল্যস্ফীতির সেভাবে উন্নতি করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও স্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকানো গেছে, কিন্তু কাক্সিক্ষত মাত্রায় কমিয়ে আনা যায়নি। এ ব্যাপারে সরকার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যা যা করার তা করেছে। যেমন ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়িয়েছে, ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়া কমানো হয়েছে, টাকা ছাপিয়ে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করা কমানো হয়েছে। এসব করা হয়েছে, কিন্তু একটা কাজ করা হয়নি সেটা হলো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেই কাজটা এবার সরকার করতে যাচ্ছে। আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া ডিসি সম্মেলনে বলেছেন, ‘মজুদদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ খুবই ভালো কথা, আমরা মনে করি উপযুক্ত সময়ে সরকার সঠিক কাজ করতে যাচ্ছে। তবে শুধু ফৌজদারি ব্যবস্থা কেন? দেশে বিশেষ ক্ষমতা আইন তো বিলোপ করা হয়নি। মজুদদারদের বিরুদ্ধে ওই আইনে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা আছে। আমরা মনে করি ওই আইন প্রয়োগ করার সময় এসেছে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা একটা বিশেষ প্রজাতির মানুষ। তারা নীতি নৈতিকতার ধার ধারে না। স্বাধীনতার পর থেকেই দেখা গেছে সুযোগ পেলেই ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের ঠকিয়ে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নেন। রমজানে মুসলিম দেশে ব্যবসায়ীরা লাভ কমিয়ে পণ্য ভোক্তাদের সরবরাহ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের সব নময় হয় উল্টোটা। রমজান এলেই ব্যবসায়ীরা পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেন। এবার রমজান ঘিরে পণ্য আমদানি যথেষ্ট হয়েছে। রোজায় ৩ লাখ টন সয়াবিনের চাহিদা তৈরি হয়, আমদানি হয়েছে ৪ লাখ টন, রোজায় ছোলার চাহিদা থাকে ১ লাখ টন, কিন্তু শুধু জানুয়ারিতেই আমদানি হযেছে ৮৩ হাজার টন। দেশে ডলারের টানাটানি থাকলেও সরকার রোজার পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার জন্য ডলারের সরবরাহ নিশ্চিত রেখেছে।
কোনো রকম কারণ ছাড়াই বাজারে সয়াবিনের কৃত্রিম সংকট তৈরির পাঁয়তারা চলছে। বিশেষ করে বোতলজাত সয়াবিনের বেশ সংকট চলছে। কিন্তু কেন? কারণ হচ্ছে সব রমজানেই বাড়তি মুনাফা হচ্ছে, এবার কেন হবে না। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ফৌজদারি অপরাধে আটক করা হবে মজুমদারদের। আমরা মনে করি ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করা হোক মজুতদারদের বিরুদ্ধে। যেকোনো অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদান্ডের বিধান আছে। এই আইনের একটা দুটি প্রয়োগ হলেই এদেশ থেকে সিন্ডিকেট বিদায় নেবে। বড় লোকদের জীবনের মায়া বেশি। এখন সরকার কতটা কঠোর হবে সেটাই দেখার বিষয়।