সরকার নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না। দুই মাস আগে লিটারে আট টাকা বাড়ানোর পরও সয়াবিন তেলের সংকট কাটেনি। এখনো অধিকাংশ দোকানে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কমেনি চাল ও মুরগির দামও। আগের মতো ব্রয়লার ২০০ টাকা কেজি ও সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রমজান ঘনিয়ে আসায় সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুন, শসা, কাঁচা মরিচ, লেবুর দাম চড়তে শুরু করেছে। গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মুরগির দামের বিষয়ে রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের মুরগি বিক্রেতা নাইমুল ইসলাম নাইম বলেন, ‘সামনে রমজান আসছে। তাই দাম আর কমবে না। ব্রয়লারের কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। সরকার দাম বেঁধে দিলেও সে দামে মেলে না। রমজানে মুরগির চাহিদা বাড়ে।’
মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউজের স্বত্বাধিকারী মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘আগের মতোই ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা। কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতারাও জানান, ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩১০ এবং দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সোনালি ক্রস মুরগি ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। গরুর মাংসও আগের মতো ৭০০-৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো ডিমও ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মাংসের মতো মাছের দামও কমেনি। আগের মতোই রুই, কাতলা আকারভেদে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
গত ৯ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত তেলের দর ১৭৫ টাকা, খোলা তেল ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তারপরও বাজারে সয়াবিন তেল তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও ২ লিটারের বোতল পাওয়া যায় না। আবার কোনো দোকানে দুই লিটারের তেল পাওয়া গেলেও ৫ লিটারের বোতল পাওয়া যায় না। কোথাও পাওয়া গেলেও দাম বেশি নিচ্ছে বিক্রেতারা। গত রবিবার ভোক্তা অধিদপ্তরে এক মতবিনিময় সভায় ভোজ্যতেল উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, ২৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়বে। কোনো সংকট হবে না।
ইফতারি উপকরণের দাম বাড়তি : রমজান ঘনিয়ে আসায় কয়েক দিনের ব্যবধানে ইফতারির উপকরণ যেমন- বেগুন, শসা, লেবু, কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামও বেড়ে গেছে। অন্য সবজির দামও কিছুটা বেড়েছে। সবজি বিক্রেতারা বলেন, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০, গাজর ৪০ থেকে ৫০, ফুলকপির পিস ২০ থেকে ৩০, বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, লাউয়ের পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১২০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, লেবুর হালি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলেন, গতকাল বিভিন্ন বাজারে আগের মতোই আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০, দেশি আদা ১৬০ থেকে ১৮০, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১৬০, আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। নিউ মার্কেটের সাথী স্টোরের মোকতার হোসেন বলেন, ‘চালের দাম কমেনি। আগের মতোই মিনিকেটের কেজি ৭২-৮৫ টাকা, আটাশ চাল ৬২-৬৫ টাকা ও মোটা চাল ৫৪-৫৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
মুদি দোকানিরা বলেন, রমজান ঘনিয়ে এলেও বাড়েনি ছোলা ও চিনির দাম। ছোলা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১১০ থেকে ১৩৫, মুগ ডাল ১৮০, চিনি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।